আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইশ্বরের কর্মকান্ড নিয়ে দু'একটা সাদামাটা প্রশ্ন---- দ্বিতীয় পর্ব

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!

এই পোস্টের বক্তব্য পূর্বের পোস্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ধারাবাহিকতার সুবিধার্থে লেখাটি (Click This Link) এইখানে। ---------------------------------------------------------------------------------- মহাভারতে বহুবার উল্লেখ আছে যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সুদর্শণ চক্রের আঘাতে বা ভগবানের দ্বারা যিনি বীরগতি প্রাপ্ত হবেন তিনি তৎক্ষণাৎ মুক্তি পাবেন। মহাভারতে এটাও বলা আছে যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রথিবীতে অবতার নিয়েছিলেন বা অবতার নেন অধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য এবং ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এটা নিয়েও কোন বিতর্ক নেই যারা তাঁর বিরু্দ্ধে যুদ্ধ করেছেন তাঁরা সবাই ছিলেন দুষ্ট এবং অসুর।

অথচ কি আশ্চর্য্যের বিষয় যে এই অধার্মিক অসুরেরাই তাঁর হাতে মারা যাওয়ার কারণে জন্মান্তরের দুঃখ ও যন্ত্রণার চক্র থেকে মুক্তি পেল। কিন্তু আমরা আমজনতা, যারা জীবনের তাগিদে মাঝে মাঝে ছোটখাট অন্যায় করছি তাঁদের পরতে হচ্ছে জন্মান্তরের মহাফাঁসে। এ কারণেই প্রশ্ন জাগে, আমজনতার চেয়ে তিনি কি তার প্রতিপক্ষ অর্থাৎ শক্তিমান শত্রু অথচ অধার্মিকের প্রতি অধিক আনুকূল্য দেখাচ্ছেন না? এ পদ্ধতি অনুসারেতো মুক্তি পাওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ভগবানের শত্রু হয়ে অধার্মিকে পরিনত হওয়া এবং ফলশ্রুতিতে তার হাতে মারা যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বিষয়টাকে হয়তো অনেকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করবেন। তবে আমি এটাকে দেখি ইশ্বরের স্বরোধীতা এবং শক্তিমানের প্রতি তাঁর দুর্বলতা হিসেবে।

কারণ শক্তিমানের পক্ষেই ভগবানের শত্রু হওয়া বা তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সম্ভব। আম-জনতাতো সব সময়ই তার অনুগত। মহাভারতেরই একটি ক্ষুদ্র অংশ হচ্ছে গীতা। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষের সৈন্যদলে তার পিতামহ ভীষ্ম, গুরু দ্রোণাচার্য্য এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজনকে দেখে অর্জুন ভাবাবেগে আপ্লুত হন। তার মন এই আত্মীয়দের বিপক্ষে যুদ্ধ করার জন্য সায় দিলনা।

তিনি এমন কথাও বললেন যে প্রয়োজনে তিনি নিজে মারা যাবেন কিন্তু পিতামহ ভীষ্ম বা গুরু দ্রোণাচার্য্যকে হত্যা করতে পারবেননা বা বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করতে পারবেন না। ভাবাবেগে আপ্লুত হয়ে অর্জুন তাঁর দায়িত্ব বা ধর্ম থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর প্রিয় শিষ্য এবং বন্ধুকে পৃথিবী এবং তাঁর (ভগবান) সম্পর্কে দিব্যজ্ঞান দান করেন। অর্জুনকে প্রদানকৃত এই জাগতিক ও পারলৌকিক জ্ঞানই হচ্ছে গীতা। এই দিব্যজ্ঞান দিতে গিয়েই তিনি বলেছেন, তুমি কি মনে কর তুমি তাদের হত্যা না করলে তারা কেউ মারা যাবেনা? তারা অবশ্যই মারা যাবে। কোন না কোন উপায়ে আমি তাদের অবশ্যই মারব।

তুমি উপলক্ষ্য মাত্র। যা হবার তা হবেই। কারো সাধ্য যা হবার তাঁকে রুখবার। আমার প্রশ্ন এই যা হবার তা হবেই, কারো সাধ্য নেই তাকে রুখবার কথাটি নিয়েই। ভগবান যা নির্ধারণ করেছেন তা হবেই, কথাটির দ্বারা কি এই বিষয়টিই প্রতিষ্ঠিত হয়না যে এই পৃথিবীর সব পূর্ব নির্ধারিত।

যদি সব পূর্ব নির্ধারিতই থাকে তবে এটা ভাবা কি অযৌক্তিক মানুষ পাপ, পূণ্য, ভাল, মন্দ যেসব করছে তা ইশ্বরের খেয়ালখুশি মতোই করছে। যদি সে ইশ্বরের ইচ্ছা অনুসারেই করে তবে খারাপ কাজের জন্য বা ভাল কাজের জন্য সে দায়ী থাকবে কেন? সেতো উপলক্ষ্য মাত্র বরং নিয়ামক হিসেবে ঈশ্বরই এসব কাজের জন্য দায়ী নন কি? কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের এক পর্যায়ে অর্জুনপুত্র অভিমন্যু কৌরবদের হাতে মারা পরেন। বধকারীদের একজন ছিলেন সিন্ধুরাজ জয়দ্রত। পুত্রশোকে কাতর অর্জুন প্রতিজ্ঞা করেন, যদি আজ রাতের মধ্যে জয়দ্রত যুদ্ধস্থল ত্যাগ না করেন তবে আগামীকাল সূর্যাস্তের পূর্বে তিনি অবশ্যই তাকে বধ করবেন। আর যদি তিনি তা করতে ব্যর্থ হন তবে সূর্যাস্থের পর আগুনে আত্মাহুতি দিবেন।

ভীত জয়দ্রত প্রথমে পালিয়ে যাIয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। কিন্তু কৌরব সমরকূশলীরা এটাকে দেখলেন যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার একটি বিরাট সুযোগ হিসেবে। তারা ভাবলেন যদি শুধুমাত্র আগামীকালের জন্য তারা জয়দ্রতকে অর্জুনের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন তবে প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী অর্জুন আগুনে আত্মাহুতি দিবেন। কৌরবরা এটা ভাল করেই বুঝতো অর্জুন বধ হলে বা অর্জুনকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে দিতে পারলে তাদের বিজয় থামানো পান্ডবদের পক্ষে অসাধ্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁরা জয়দ্রতকে ঘিরে এক কঠিন বুহ্য তৈরি করলেন।

অর্জুন প্রায় সারাদিন কঠিন চেষ্টা করেও সেই বুহ্য ভেদ করতে পারলেন না। শেষ বিকালের এক পর্য়ায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মেঘকে আদেশ করলেন সূর্য্যকে আড়াল করে দেওয়ার জন্য। সূর্য্য মেঘের আড়ালে চলে গেল। অর্জুনসহ সবাই ভাবল সূর্য্য ঢুবে গেছে। প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী অর্জুন আগুনে আত্মাহুতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন।

নিজে বাণ ছুড়ে আগুন জ্বালালেন। আনন্দে আত্মহারা জয়দ্রত এ দৃশ্য স্বচক্ষে দেখার জন্য বুহ্য ছেড়ে অর্জূনের কাছাকাছি চলে এলেন। ঠিক তখনই শ্রীকৃষ্ণ মেঘকে আদেশ করলেন সূর্য্যকে উম্মুক্ত করার জন্য। সূর্য্য সম্মুখে চলে এল। উম্মুক্ত সূর্য্যকে দেখিয়ে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, সূর্য্য ঢুবেনি।

কাজেই তুমি জয়দ্রতকে হত্যা করতে পার। কথামত অর্জুন বাণ তুলে নিলেন এবং অরক্ষিত, অসহায় জয়দ্রতকে হত্যা করলেন। বিষয়টাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? এটাকে কি ঈশ্বরিক শঠতা বলা যায়না? বন্ধুকে বিজয়ী করার জন্য তিনি কি ছলনা, শঠতা বা মিথ্যার আশ্রয় নেননি? প্রকৃতপক্ষে এগুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মহাভারতের বর্ণনানুয়ায়ী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অনেক কার্যক্রমই স্ববিরোধী এবং এগুলো নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন তুলা যায়। তিনি কৌরবদেরকে অধর্মী বলে আখ্যা দিচ্ছেন আবার কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে সৈন্য দিয়ে দুর্যোধনকে সাহায্যও করছেন।

তিনি বলছেন যা হবার তা কেউ রুখতে পারবেনা অর্থাৎ তিনিই সব করাচ্ছেন। অথচ যারা ক্রীড়ানক হয়ে এসব করছে তাদেরকে কর্মফলের শাস্তি দিচ্ছেন। ধর্মাত্মারা হয়তো এগুলোকে ইশ্বরের লীলা বলে অভিহিত করবেন। এ প্রসঙ্গে নজরুলের একটা গানের প্রথম লাইন মনে পড়ে গেল। লাইনটা এমন, খেলেছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে।

তাহলে কি আমরা ইশ্বরের লীলাকে ওনার ইচ্ছামাফিক কোন খেলা বলব? কিন্তু, ওনার এই ইচ্ছামাছিক খেলা এবং ভাঙ্গাগড়ার কারণে খেলার উপকরণরা (আমজনতা) যে প্রতিনিয়ত ভাঙ্গছে এবং কষ্ট পাচ্ছে তা কি ওনি বুঝেন? কখনও কি বুঝবেন? ------------------------------------------------------------------চলবে


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.