একমুখাপেক্ষি না হয়ে যা কিছু ভাল তা গ্রহন করা উচিৎ...
উৎসর্গঃ শহীদমিনার
অনুরোধঃ শুধু শিরোনাম পড়ে মন্তব্য না করার অনুরোধ রইলো। অনুরোধ করলাম, রাখা না রাখা আপনাদের ব্যাপার। আশাকরি রাখবেন।
আমরা রক্ত দিয়েছি দেশের জন্য। আমরা রক্ত দিয়েছি ভাষার জন্য।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের অনেক গর্ব। আর তাইতো যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন তাদের আমরা প্রচন্ড ঘৃণা করি। তাদের প্রতি আমাদের অনেক ক্ষোভ। অনেক. . .
গত কয়েকদিন ব্লগে নিয়মিত ছিলাম।
বিভিন্ন ব্লগারের লেখা আর মন্তব্যগুলো পড়ছিলাম।
মন্তব্যগুলো পড়তে পড়তে একসময় অনেক গালির ব্যবহার চোখে পরলো। একজন আর একজনকে বাহারী রঙের গালি দিচ্ছেন। অনেকেই আবার সমর্থনও করছেন। যারা সমর্থন করছিলেন তাদের যুক্তি ছিলো, ”রাজাকারদের গালি দিলে পাপ হয়না!”
আমরা রাজাকারদের গালি দিচ্ছি তারা যুদ্ধাপরাধী বলে। কিন্তু আমরা তাদেরকে কোন ভাষায় গালি দিচ্ছি? এ ভাষার জন্যই কি সালাম-রফিক-জব্বার শহীদ হয়েছিলো? এ ভাষা কার? এ ভাষা আমার, আমার মায়ের, আমাদের মায়ের।
আমার এবং আমাদের প্রথম বুলিই হচ্ছে ’মা’। আর আমরা পরিণত বয়সে এসে এই মধুর শব্দটির সাথে ’দার..’ যুক্ত করে গালি দেই! ছিঃ আমাদের ভেতরটা এতো কুৎসিত! এই আমরাই আবার মায়ের জন্য আহার যোগার করি, মায়ের জন্য একটুকরো কাপড় কিনে নিয়ে যাই।
যে শব্দগুলো (গালি) আমি আমার মায়ের সামনে উচ্চারণ করতে পারবোনা, যে শব্দগুলো আমি আমার আদরের ছোটো ভাই অথবা বোনের সামনে উচ্চারণ করতে পারবোনা, সে শব্দগুলো কেনো তাদের আড়ালে উচ্চারণ করবো?
রাজাকারদের গালি দিলে কোনো সওয়াব হয়না, এটা শুধু ব্যাক্তি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশই মাত্র।
আমি ’হুমায়ূন আজাদের’ ”পাক সার জমিন সাদবাদ” এর ৩৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়েছিলাম। সেখানে একটা লাইন ছিলো, যার মর্মার্থ এরকম ’হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করলে পাপ হয়না, সওয়াব হয়’।
যে এ কথাটি বলেছিলো সে ছিলো একজন জিহাদী এবং ধর্মান্ধ ব্যক্তি। সে হিন্দু নারী এবং মুসলীম নারীকে আলাদা করে ফেলেছিলো। যে যুক্তির ভিত্তিতে হিন্দু নারীকে ধর্ষণের ব্যপারটাকে সওয়াবের সাথে তুলনা করা হয়েছে, অনেকটা ঠিক সেই রকম যুক্তিতে আমরা রাজাকারকে গালি দেওয়ার ব্যাপারটিকেও পূণ্যের সাথে তুলনা করছি।
হিন্দু নারী এবং মুসলীম নারী, উভয়ই নারী এবং মানুষ।
আর রাজাকার এবং সাধারণ মানুষ, উভয়ই মানুষ।
রাজাকারদের আমিও ঘৃণা করি। আমিও চাই তাদের শাস্তি হোক এবং তাদেরকে শাস্তি দেয়ার পরপরই যেনো সেইসব লোকদেরকেও শাস্তি দেয়া হয় যারা গত ৩৮ বছর ধরে দুর্নীতি করে দেশ ও জাতিকে পিছিয়ে রেখেছেন। হোক তারা জীবিত অথবা মৃত। তাদের শাস্তি হতেই হবে।
শেষকথাঃ ’গালি সবসময়ই গালি হিসেবে বিবেচ্য, সেটা যার উপরই প্রয়োগ করা হোক না কেনো এবং ধর্ষণ সবসময়ই ধর্ষণ হিসেবে বিবেচ্য, সেটা হিন্দু নারীকেই করা হোক অথবা মুসলিম নারীকেই করা হোক না কেনো।
’
আসুন আমরা ভাষার গান গাই, আসুন প্রতিমাসে একবার শহীদ মিনারে গিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই, শহীদ মিনারের বড় মিনারটির দিকে তাকিয়ে হৃদয় হতে একফোঁটা রক্ত ঝরাই। মস্তিষ্কের নিউরন কোষে খোদাই করে রচিতো করি ”আমি এই বাংলায় আমার মায়ের ভাষায় আর কখনোই কাউকে গালি দিবো না, আমি যে পুরোপুরি সফল হবো তা নয়, তবে আমি চেষ্টা করবো, আমাকে চেষ্টা করতেই হবে। তোমরা, ভাষা শহীদরা যদি রক্ত দিতে পারো ভাষার জন্য, তবে আমরা কেনো আমাদের ক্রোধকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবোনা ভাষার সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।