আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বগত আলাপ ০৫: দে দৌড়, দৌড়ের উপর দুনিয়া!

জ্বলে উঠার অপেক্ষায় নিভু নিভু প্রদীপ।

সকালে এ্যলার্ম ঘড়ির ট্যা ট্যা আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে উঠি। ফ্রেশ হয়ে কাজে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে কিছু একটা খাব ভাবছিলাম, কিন্তু কিছু খেতে মন চাইছে না। সকালে এই একটা সমস্যা আমার সবসময় হয়। ঠিক তখন মোবাইল বেজে উঠে।

আমি রিসিভ করি। > হাই ইটস ষ্টেফি < ও হেই হোয়াটসআপ? মনে মনে বলি এতো সকালে ফোন করার মানে কি! > রিমেম্বার, ইউ টোল্ড মি, ইউ উইল গিভ মি দ্যা নোটস? ইয়া আল্লাহ এইটা কবে বললাম! < ইয়া, হোয়াট এবাউট টুমরো? > ওকে দ্যান, সি ইউ ইন ক্লাস টুমরো। কোনরকম বাই বলে ফোন রাখতে গিয়ে মোবাইলে সময় দেখি ১১:১০। খাইসে। আমার কাজ যাওয়ার কথা এগারোটায়।

গতরাতে সময় এক ঘন্টা আগাইছে। আমি এ্যলার্ম দেওয়ার সময় একদম ভুলে গেছি। তাড়াতাড়ি কাজে ফোন দিলাম। কলিগ রিসিভ করলে বলি, 'আই উইল বি লেইট'। কলিগ হেসে জিগেস করে 'হাউ লেইট'? আমার এক ঘন্টা লেট হবে বলে ফোন রাখি।

কলিগের মত আপনিও হাসছেন আর ভাবছেন আমি সবসময় লেট করি তাইনা? মাঝে মাঝে একটু আধটু লেট হয় এটা আর এমন কি! ভাগ্যিস, আমার বাপের কোম্পানীতে কাজ করিনা, দেরী করার জন্য কত দাতানি খেতে হতো কে জানে! তারপর, মনে মনে বলি ব্রেকফাষ্টের কথা ভুলে যাও বাছা। আপাতত দে দৌড়, দৌড়ের উপরে দুনিয়া! ট্রেন আছে কিনা মোবাইলে দেখে নিই। প্রতি মাসে ট্রাভেলকার্ডের জন্য একশো পাউন্ড গুণতে হয়। ট্রেনের সার্ভিস না থাকলে চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে ইচ্ছে হলেও, করতে পারিনা। সবাই মুখ বুজে সহ্য করে।

সো তুমি ও সহে যাও বাছা, পরদেশে এসব ছোট ব্যাপারে রাগ করতে হয় না। দেশে হইলে অন্তত সরকারের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা যেত! যাইহোক, আজ দেখি লন্ডনের মেয়র সাহেব কোথাও কোন ইন্জিনিয়ারিং কাজ রাখেন নি। সাধারণত, উইকএন্ডে আন্ডারগ্রাউন্ডে কোথাও না কোথাও ট্রেন সাসপেন্ড থাকে। সানডে'তে ট্রেনের অজুহাত শুনে অভ্যস্থ আমার পূর্বের কাজে ম্যানেজার একদিন বলে 'সানডে সার্ভিসের কথা মাথায় রেখে বাসা থেকে একটু আগে বের হলে তো পারি! তা ঠিক, তাল মিলিয়ে চলা উচিত। মনে মনে বলি 'তাল' যদি বুঝতাম এতোদিনে লাবিব কিংবা ফাহশানের মতো মাইয়াপটানো গান করে কতো জনপ্রিয় হতাম! তবে, এটা অন্তত র‌্যাপ গানের চেয়ে ভাল আছে।

বাংলার সাথে ইংরেজি মেশানো র‌্যাপ শুনলে আমার কাছে বাংলাকে রেইপ করছে মনে হয়। গানের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা ছিল, এখনো বোধহয় আছে। বাবার ভয়ে মিউজিক পড়ার চিন্তা বাদ দিয়ে এ্যকাউন্টিং পড়ছি। লাইফ ইজ অল আ্যবাউট কম্প্রোমাইজ! আমি ইদানিং সবকিছু ভুলে যায়। কিছু মনে থাকে না।

এই ভুলে যাওয়ার কারণে কত মাশুল গুণছি, আরো কত গুণতে হবে কে জানে! সেদিন শেলী মেইল করে বলে 'তাড়াতাড়ি আমাকে একটা কল দিতে পারবে?' তাড়াতাড়ি বলেছে বিদায় দুদিন পর বন্ধুকে ফোন করি। হ্যালো বলার পর থেকে অনেক কিছু হজম করতে হলো। দুসপ্তাহ পূর্বে সে আমাকে কিছু রবীন্দ্রসংগীত মেইল করতে বলেছিল। তাড়াতাড়ি ফোন করতে কেন বলেছিল এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন! আমি গানের কথা মোটেও ভুলে যায় নি হে। এক সপ্তাহ পরেই আমি ওকে মেইল করেছিলাম।

মেইলে দুটোর বেশি গান পাঠানো যায় না বিধায় আমি সাত-আটটার মতো গান পাঠিয়ে লিখেছিলাম পরে আরগুলো পাঠাব। কিন্তু সেই সময় কই! ব্যস্ত মানুষ। গতকাল থেকে একটা কারণে মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। আজকে মনে হচ্ছিল শুধুমাত্র ছেলেদেরই মন কি সবসময় খারাপ থাকে নাকি মেয়েদের ও? যাইহোক, মন খারাপের কথা বলছিলাম। গতকাল কাজ শেষে বাসায় এসে শুনি সফি'র ভিসা রিফিউজ করছে।

শুনে মুডটাই খারাপ হয়ে গেল। ইদানিংকালে এখানে ভিসা নিয়ে মামারা মশকরা শুরু করছে। এ দেশের অর্থনৈতিক বারোটা বেজে যাওয়াতে এখন যাকে তাকে ভিসা প্রত্যাখ্যান করছে। এমনিতে ওভারসীস ষ্টুডেন্টসদের ওরা সবদিক দিয়ে বাঁশ দেয়। কথায় কথায় ভিসা ফি বাড়ায়।

এখানে খুন, রেইপ, ড্রাগসসংক্রান্ত যত অপরাধ হয় এখন পর্যন্ত একটাতেও কোনদিন একজন ওভারসীস ষ্টুডেন্ড জড়িত এমন খবর দেখিনি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের নাগরিকরা এখানে এসে বিভিন্ন উপায়ে ক্রাইম করে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোন কিছু করতে পারে না শালারা। ভিসার কথায় ফিরে আসি। ভিসা এক্সটেনশন করার সময় মাসে আটশ পাউন্ড করে এ্যকাউন্টে তিনমাস দেখাতে হয়।

সফি'র ভিসা প্রত্যাখ্যান করার কারণ ছিল ওটাই। সপ্তাহখানেকের জন্য নাকি ওর আটশোর নিচে ছিল। এটার জন্য অনেকটা আমিই দায়ী। ওর কাছ থেকে আমি তখন দুশো পাউন্ড ধার নিয়েছিলাম। টিউশন ফির জন্য লাগবে ভেবেছিলাম।

দুসপ্তাহ পর সে টাকাটা ম্যানেজ করতে পারব কিনা আমাকে জিগেস করলে ড্রয়ার খুলে ওর হাতে তুলে দিই। ও হা হয়ে থাকিয়ে জিগেস করে 'তুই কি টাকাটা ব্যাংকে জমা দিস নি?' ব্যাংকে যাবার সময় পায়নি বললে ওর কাছ থেকে দুএকটা গালি হজম করি। তো ব্যারিষ্টার বন্ধু নওফেলকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলি। আপিলে ভিসার সমস্যাটা মিটে যাবে বলে ওর ধারণা। তারপরও শুধু শুধু বেচারার কিছু বাড়তি খরচ বাড়ালাম।

হায়রে বালছাল প্রবাস জীবন! ইদানিং ব্যস্ততার কারণে দেশে বন্ধুদের ফোন করা হয়ে উঠে না। বাসায় দু-তিনদিন পরপর ফোন করি। বাসায় যখনই ফোন করি মার সে একই প্রশ্ন 'দেশে কবে যাবো', 'বিয়ে করছি কবে'? আমার বোনের ও জিগাসা দেশে কবে আসব? ওর ফার্ষ্ট টার্মের রেজাল্ট দিয়েছে সেদিন। ফিজিক্স, কেমিষ্ট্রি, জুলজি, ম্যাথস সহ চারটাতে নাকি সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছে। সর্বোচ্চ 'জিপিএ' ও নাকি তার দখলে।

এসএসসি পাস করে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হতে না পেরে খুব মন খারাপ করেছিল ও। আমার ও মন খারাপ হয়েছিল। আমার বন্ধু নওরীনের ও সেই একই কথা দেশে কবে আসব! আরে ভাই নিজেই জানিনা কবে যেতে পারছি। 'না প্রেমিক না বিপ্লবী' নাকি কি যেন একটা কবিতার মত সে আমার বন্ধু নাকি এরচেয়ে বেশিকিছু সেটা নিয়ে দ্বিধায় আছি। [ সম্পূর্ণ কাল্পনিক লেখা।

কারো নামের সাথে মিলে গেলে (এমনকি আমার সাথেও) সেটা হবে কাকতালীয় মাত্র, লেখক মোটেও দায়ী হইবেক না। ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।