আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বগত আলাপ ০২: আফগান কবির 'ভয়েস' নাকি আমার!

জ্বলে উঠার অপেক্ষায় নিভু নিভু প্রদীপ।

গত কিছুদিন ধরে মন মেজাজ ভালো নেই। মন ভালো না থাকা আমার পুরনো অসুখ (তবে, সেটা আজকের পোষ্টের বিষয়বস্তু না)। আমি ইদানীং বাসায় তেমন একটা ফোন করিনা। মিথ্যা বলতে ভালো লাগেনা।

মা কেমন আছি জিগেস করলে বলতে পারিনা আমি ভালো নেই কিংবা আমার মন খারাপ। মাকে এসব বললে মা উপোস থাকা শুরু করবে। তারচে আমি উপোস থাকি সেই ভালো। মা ভালো থাকুক। তারপরও যে মা বুঝতে পারেনা তা কিন্তু নয়।

মা ঠিকই বুঝে ফেলে। তবে, ছেলের মুখে 'ভালো নেই' শুনলে মা অনেক কষ্ট পাবে। তাই মিথ্যা বলাই আপাতদৃষ্টিতে ভালো। কারণ সহস্র মাইল দুর থেকে ছেলের মুখে 'ভালো নেই' শুনতে পৃথিবীর কোন মায়ের ভালো লাগার কথা নয়। আমার একমাত্র পিচ্চি বোনটা ও বুঝে ফেলে কখন তার ভাইয়ের মন খারাপ।

মাঝে মাঝে এই একটা ব্যাপারে অবাক না হয়ে পারিনা। এটা বুঝতে পারার ক্ষমতা কি বিধাতা শুধুমাত্র নারীদেরই দিয়েছেন? আমার ভাইদের কাছে কখনো শুনিনি 'ভাইয়া তোমার মন খারাপ কেন?' অথচ সবার ছোট আমার বোন সে আমাকে বলে 'ভাইয়া তুমি মন খারাপ করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে'। আমি খুব চাপা স্বভাবের। কোন বন্ধুকে মন খারাপ করতে দেখলে নিজে তাদের বলি আমার সাথে শেয়ার করতে, কিন্তু নিজের মন খারাপের কথা শেয়ার করতে পারিনা। খুব বেশি অসহায় না হলে কাউকে বলিনা।

নিজের মতো করে রুমে চুপ মেরে বসে থাকি। নওরিনকে মাঝে মাঝে ফোন করে এসব অবেলার স্বগত আলাপ করতাম। সে চুপচাপ শুনতো। তার সাথেও ইদানীং তেমন একটা কথা বলিনা। ভালো লাগেনা।

ইদানীং কোন কিছুতেই ভালো লাগে না। নিজের মতো করে থাকতে ইচ্ছে করে। আজকে যেটা নিয়ে লিখতে বসেছি সেটাই এতক্ষণ লেখা হলো না। এখানে আন্ডারগ্রাউন্ড এর ট্রেনে কবিতা পড়ার সুযোগ থাকে। 'পোয়েমস অন আন্ডারগ্রাউন্ড' ।

সেটা কেমন বলি। ট্রেনে বিজ্ঞপন থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। হিসেব করে দেখলাম জীবনের একটা অংশ এই ট্রেনেই কাটিয়ে দিলাম। আমাকে প্রায় প্রতিদিনই ক্লাস কিংবা কাজের কারণে বাইরে যেতে হয়। সে হিসেবে দিনে দু'ঘন্টা করে যদি সপ্তাহে পাঁচ দিনও ধরি তাহলে বছরে চারশো আশি ঘন্টা আমার ট্রাভেল করা হয়।

মানে বছরের বিশটা দিন এই ট্রেনেই কাটিয়ে দিই। সেখানে বিজ্ঞাপন দিলে অন্তত একবার হলেও সবার চোখে পড়বে। ট্রেনে বিজ্ঞাপনের বাইরেও অনেক কিছু চোখে পড়ে। 'পোয়েমস অন দি আন্ডারগ্রাউন্ড' পোষ্টারটা দেখলে একবার চোখ বুলিয়ে নিই। ১৯৮৬ সাল থেকেই এখানে ট্রেনে কবিতা দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়।

আমেরিকান কবি 'জুডিথ' ই নাকি সর্বপ্রথম এ ধরণের ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তা করেছিলেন। বলাবাহুল্য এটা শুধুমাত্র লন্ডনে সীমাবদ্ধ নয় (নিউ ইয়র্ক, সিডনি, এথেন্স, মস্কো, বার্সিলোনা সহ বিশ্বের আরো অনেক দেশে প্রচলিত)। এমনিতে আমি তেমন ইংরেজী কবিতা পড়িনা। খুব কমন কিছু কবিদের কবিতা পড়া হয়েছে। 'পোয়েমস অন দি আন্ডারগ্রাউন্ড' এর কল্যাণে অনেক অপরিচিত কবিদের কবিতা পড়া হয়েছে।

যাইহোক, সেদিন কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে একটা কবিতা চোখে পড়ে। My Voice: I come from a distant land with a foreign knapsack on my back with a silenced song on my lips. As I travelled down the river of my life I saw my voice swallowed by a whale and my very life lived in my voice........ by Partaw Naderi(translated by sarah maguire and yama yari) আমি পড়ে প্রথমে কিছুটা অবাক হই। পরে আরো কয়েকবার পড়লাম। আশ্চর্য! এটা যেন আমাকে নিয়েই লেখা হয়েছে। কবির নামটা দেখে চিনতে পারলাম না।

তারপর কি মনে করে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে তাড়াতাড়ি করে নোটস এ টুকে রাখলাম। বাসায় এসে গুগলে এই কবিতাটি সার্চ দিলাম। 'পার্থ নাদেরী' নামের এক আফগান কবি এ কবিতা লিখেছেন। একজন আফগানি কবি যেন আমার নিজের কথাগুলো লিখে গেলেন। ১৯৫২ সালের লেখা একটা পুরাতন কবিতা কিভাবে যেন আমার খুব প্রিয় কবিতা হয়ে গেলো।

এটা বারবার পড়ছি। এই কবির সম্পর্কে জানার আগ্রহ আমি এতো ব্যস্ততার মাঝেও দমিয়ে রাখতে পারিনি। গুগলে সার্চ দিয়ে খুব আগ্রহ নিয়ে কবি ও তার কবিতার পেছনের ইতিহাস পড়লাম। জানতে পারি তিনি কাবুলের কারাগার এ ভয়াবহ সময় কাটিয়েছিলেন। পরে পাঁচ বছরের মতো নির্বাসনেও ছিলেন।

তখনকার লেখা কবিতাগুলো একেকটি যেন তার জীবনের একেকটা ছবি। 'দি মিরর' কবিতাটিও তেমন একটি। The Mirror I have spent a lifetime in the mirrors of exile busy absorbing my reflection Listen — I come from the unending conflicts of wisdom I have grasped the meaning of nothingnes. Kabul 1989 এটা নিয়ে বিস্তারিত লেখার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু পড়ালেখার চাপে সময় করতে পারছিনা। কেউ পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করতে পারেন।

নাদেরীর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এখানে ঘুরে আসুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।