আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলম্বাস নয়, আমেরিকার আবিষ্কারক লাইফ এরিকসন -১ম পর্ব


লাইফ এরিকসনের আমেরিকা আবিষ্কারের অভিযানের উপর করা চিত্রকর্ম ক্রিস্টোফার কলম্বাসই প্রথম ইউরোপিয়ান যে নতুন ভূমি তথা আমেরিকা আবিষ্কার করেছিল, সর্বজনবিদিত এই তথ্য সঠিক নয়। কলম্বাস নতুন ভূমিতে ১৪৯২ সালের আগে পৌছাতে পারেনি যেখানে লাইফ এরিকসন (Leif Erikson) তারও ৫০০ বছর আগে প্রায় ১০০১ খ্রিস্টাব্দে নতুন ভূমিতে পা রাখে। লাইফ এরিকসনই প্রথম ইউরোপিয়ান যে কিনা নতুন ভূমিতে পা রাখার মধ্য দিয়ে ভাইকিংদের (Viking) জন্য এক সম্পদে পরিপূর্ণ দেশে অভিযানের দুয়ার খুলে দেয়। কিন্তু অজানা কারনে ভাইকিংরা লাইফ এরিকসনের আবিষ্কৃত ঐ নতুন ভূমিতে স্বল্প সংখ্যক কিছু অভিযান পরিচালনা করে। এবং দূর্ভাগ্যবশত এই কারনে সম্পূর্ণ ইউরোপজুড়ে তাঁর আবিষ্কার অজানা রয়ে যায়।

লাইফের জন্ম হয় আইসল্যান্ডে (Iceland) ৯৬০ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর পিতার নাম এরিক দ্যা রেড (Erik the Red)। ভাইকিং প্রথা অনুযায়ী লাইফ ও তাঁর পরিবারের সাথে বড় হবার সুযোগ পায়নি। যখন তাঁর বয়স মাত্র আট তখন তাঁকে পাঠানো হয় থিরকার (Thyrker) নামে একজনের কাছে। থিরকার জাতীতে ছিল জার্মান এবং এরিক দ্যা রেড, লাইফের পিতা, তাকে সেখান থেকে বন্ধী করে আইসল্যান্ড নিয়ে আসে কিন্তু তাকে দাসত্বেবের পিঞ্জরে আবদ্ধ করেনি।

থিরকার লাইফকে রুনে (Rune) লিখতে এবং পড়তে শেখায়। রুনে হল ভাইকিং সময়কার লিখন পদ্ধতি। সেল্টিক এবং রুশ ভাষা, বানিজ্য কৌশল, পুরোনো সাগা (Saga), উদ্ভিদবিদ্যা এবং অস্ত্রচালনা সম্পর্কেও লাইফ জ্ঞানার্জন করেছিল থিরকারের কাছে। সাগা হল ভাইকিং বীরদের বীরত্বগাঁথা নিয়ে রচিত বর্ণনা। প্রয়োজনীয় সব শিক্ষা অর্জন করার পর লাইফকে যখন একজন স্বাবলম্বী পুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তখন তাঁর বয়স মাত্র ১২ বছর।

পিতৃগৃহে প্রত্যাবর্তন করে লাইফ। ফিরে এসে লাইফ দেখতে পায় তাঁর পিতার সম্পদের ব্যপক প্রসার ঘটেছে এবং তাঁর দল আগের তুলনায় বেশ ভারী হয়েছে। একদিন বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে তাঁর পিতা এক লোককে হত্যা হত্যা করে। এই কারনে তৎকালীন বিধানসভা এরিককে আইসল্যন্ড থেকে বিতাড়িত করে। পূর্বে নরওয়ে থেকে বিতাড়িত হবার কারনে সেখানে ফিরে যাবার সুযোগ ও তাঁর ছিলনা।

বলে রাখা ভাল, এরিক ছিল মূলত একজন নরওয়েজিয়ান ভাইকিং। নিরূপায় এরিক তখন তাঁর পরিবার, কিছু সংখ্যক দাস এবং অর্থ সম্পদের বিশাল ভান্ডার নিয়ে পশ্চিমের উদ্দেশ্যে পাল তোলে। কিছুদিন পর তারা একটি ভূমিতে ঘাঁটি বাঁধে যাকে সে গ্রীনল্যান্ড (Grønnland) নাম প্রদান করে। বিশ্বাস করা হয় যে এই অভিযানেই লাইফের গভীর সমূদ্রে নাবিক হবার হাতেখড়ি হয়। সবুজ ভূমিতে (গ্রীনল্যান্ড) চারণ নির্বাসনকালের সমাপ্তি না ঘটা অব্দি এরিক গ্রীনল্যান্ডে বেশ ক'বছর কাটিয়ে দেয় এবং লাইফকে নতুন অভিযান সম্পর্কিত শিক্ষা প্রদান করে।

তিন বছর পর এরিক আইসল্যন্ডে ফিরে আসে এবং সেখানকার লোকজনকে গ্রীনল্যান্ডে আবাস গড়ার জন্য উৎসাহিত করে। দূর্ভিক্ষের কারনে সেই সময় আইসল্যান্ডের অবস্থা বেশ খারাপ যাচ্ছিল। লাইফের বয়স তখন ১৫-১৭ হবে। একদিন সে একটি মেরু ভল্লুক দেখতে পায় বরফের চাঁইয়ের উপর। ভল্লুকটি শিকারের ইচ্ছে থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় বরফের চাঁই এবং সমূদ্র পাড়ের মধ্যবর্তী প্রবল স্রোত।

অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তখন সে উজান স্রোতে নৌকা চালনা করে যা তাঁকে মেরু ভল্লুকটির কাছে পৌছে দেয়। ভল্লুক শিকারের পর সে ঠিক একই পদ্ধতি অবলম্বন করে তীরে ফিরে আসতে সমর্থ হয় যা উপস্থিত সকলকে অভিভূত করে। একদিন নৌকার দেখাশোনারত অবস্থায় জীর্ণ-শীর্ণ পুরোনো একটি জাহাজ তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। লাইফ দ্রুতই বুঝতে পারে যে এই জাহাজ বিয়রন হেরগেলফসনের যে কিনা বছরখানেক আগে অভিযানে বেরিয়েছিল। জাহাজ ভিড়ানোর পর লাইফ জানতে পারে যে প্রচন্ডরকম কুয়াশার কারনে দিক নির্দেশনে করতে ব্যর্থ হয়ে তারা এদিকে আসে।

তারা আরও জানাল এক সবুজ ভূমির কথা যা তারা শুধু দূর থেকে দেখেছে কিন্তু তীর খুঁজে না পাবার কারনে সেখানে জাহাজ ভিড়াতে ব্যর্থ হয়। (চলবে)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.