আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভুদাই কূটনীতিক আর অসভ্য মালয়শিয়া সরকারের দাদাগিরির যোগফল হলো অসহায় জনগন

যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

খবরটা বিস্তারিত করে বলার দরকার নেই, তাও যে মন্তব্যগুলো লিখে রাখতে চাই এখানে, তার দায়ে কিছুতো উল্লেখ করতেই হয়। বিদেশী (মালয়েশিয়ান) পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিতে পেরে আহ্লাদে গদগদ হয়ে বাংলাদেশ আর মালয়েশিয়ার "ভ্রাতৃত্ববোধের" চরম উদাহরণ হিসেবে জনৈক ভুদাই কূটনীতিক তালাত মাহমুদ সাহেব, যিনি কুয়ালুলুমপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কর্তা, জোশের সাথে বলে দিয়েছেন যে এই আক্রার বাজারে মালয়েশিয়া ৭০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক নিচ্ছে! যদিও সংখ্যাটা ৫৫ হাজার বলে দাবী করছেন এই "শ্রমিক রপ্তানী"র সাথে সংশ্লিষ্টরা, আহ্লাদ বাড়লে যে আমাদের মুখের লাগামও ঠিক থাকেনা সেটা নতুন করে বলে দেবার দরকার নেই। ভিসা প্রদান একটি রানিং প্রসেস, যে কোন ভিসার আবেদনকে প্রার্থীওয়ারী দেখা হয়, প্রার্থী ভিসা পাবার যোগ্য হলে মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়ে দেয় -- মানলাম। তবে, সেক্ষেত্রে এই রানিং প্রসেসের ভেতরে যে বাংলাদেশ থেকে এত বিশাল সংখ্যক লোক মালয়েশিয়ায় চলে যাচ্ছে, সেটা যদি মালয়েশিয়ান দাদাবাবু সরকার টের না পান, তাহলে কি তেনাদের দোষ দেয়া যাবেনা। সেটা জানতে হবে তালাত মাহমুদের সাক্ষাৎকার পড়ে বা শুনে! এরা কিভাবে দেশ চালায় সেটাও এক প্রশ্ন বটে! তবে পত্রিকায় যখন উল্লেখ দেখি যে নিকট অতীতে যারা মালয়েশিয়া গেছেন এমন ৪০ থেকে ৫০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ পাচ্ছেননা, এবং এমনকি তাদের পূনর্বাসনের জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে শেল্টার/কিচেন খোলা হয়েছে (তালাত মাহমুদ নাকি সাক্ষাৎকারে এটা দাবী করেছেন, সত্যমিথ্যা প্রমাণের দায়ভার নিতে পারছিনা), তখন মনে হলো বাড়তি ৫৫ হাজার শ্রমিককে এই একই রকম বিপদে পড়তে না দিয়ে মালয়েশিয়ান সরকার হয়তো ভালোই করেছে।

হয়তো মালয়েশিয়াতেই অনেকে চাকুরী হারাচ্ছে, তাদের ক্রেতা দেশগুলোর অবস্থা যে এখন ভালোনা সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায়ই। মালয়েশিয়ান সরকারের কি এই সমস্যাটা আগেই "খিয়াল" করা উচিত ছিলোনা! একটা নির্দিষ্ট দেশের কয়েক অযূত বিদেশী শ্রমিক চাকুরী ছাড়া, আর তারপরও সেদেশের শ্রমিকদের নতুন নতুন ভিসার সীল দিয়েই যাচ্ছেন -- এতটা অদক্ষ, অমনোযোগী এমনকি হতে পারে দূর্নীতিবাজ কর্তৃপক্ষ তো কোনভাবেই সৃষ্ট সমস্যার দায়টা এড়াতে পারেননা। শুধু ইস্যুকৃত ভিসাগুলো বাতিল ঘোষনা করে হাত ঝেড়েপুঁছে ফেললে তো হবেনা! বাংলাদেশ গরীব দেশ বলে যা ইচ্ছা দাদাগিরি করবো -- এমন মনোভাব সহ্য করার দিন যে শেষ সেটা এবার অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে। যে ৫৫ হাজার শ্রমিকের ভিসা বাতিল হয়েছে, তাদেরকে পুনরায় ভিসা প্রদান করে মালয়েশিয়ায় যাবার সুযোগ করে দেবার দাবী জানাতে আমি আগ্রহী না।

আপাতদৃষ্টিতে এটাকেই সবচেয়ে সহজ সমাধান মনে হলেও, এতে কোন লাভ হবেনা। কারণ, কাজ নেই, অর্থের প্রবাহ নেই। এই হবু শ্রমিকেরা ভিসা ফিরে পেলেও মালয়েশিয়ায় নামার পর তাদের জন্য অপেক্ষা করবে এক নতুন বাস্তবতা, অধিকাংশেরই মনে হবে "না আসলেই হতো। " কথা হলো তাহলে কি করতে হবে? হ্যাঁ মালয়েশিয়ান সরকারের দাদাগিরিটা মেনে নিয়েই তাদের বলা যায়, ভিসা প্রদানের পর তা বাতিল করলে এর জন্য যে অযথা খরচটা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণটা তোমরা বহন করো। কারণ, দোষটা সম্পূর্ণ তাদের।

তাদের দেশ বাড়তি ৫৫ হাজার শ্রমিকের ভার সহ্য করতে পারবেনা, এদের ভিসাপ্রদান করলেও চাকরী দেয়া যাবেনা বলে বরং অর্থাভাবে কষ্ট পাবে -- এসবই ঠিক আছে। তবে মাননীয় মালয়েশিয়ান সরকার, মিঃ বাদাবী, আপনার প্রশাসনের সেটা টের পাওয়া উচিত ছিলো ভিসা প্রদানের আগে! সেটা যেহেতু পাননি, একটা দায় আপনাকে নিতেই হবে, আর তা হলো এই অযথা ভিসাপ্রদান ও বাতিলের সাথে জড়িত প্রত্যেক পার্টির যা খরচ হয়েছে সেটার ক্ষতিপূরণ। এটা মালয়েশিয়ান সরকারকে দিতেই হবে -- এটা দাবী করার যৌক্তিক গ্রাউন্ড আমাদের আছে। "নতজানু" বা "অনভিজ্ঞ" হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমণির যে দূর্ণামটা ছড়িয়ে গেছে, সেটাকে মেরামতের এটা একটা ভালো সুযোগ। ৫৫ হাজার শ্রমিকের জন্য নানারকম প্রসেসিংয়ের শ্রমিকপ্রতি ১ লাখ করে ৫৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই টাকাটা শুধুশুধু নষ্ট হতে দেয়া যায়না, বিশেষ করে যখন এর সিংহভাগই গেছে মালয়েশিয়ায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু প্রস্তাবনা যোগ করলাম। মালয়েশিয়া সরকারের কাছে দাবী করতে হবে: ১। ভিসা প্রসেসিং নিয়ে জনপ্রতি যা খরচ হয়েছে যেটা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ফেরত দেবে মালয়েশিয়া সরকার। ২।

যারা অলরেডী বিমানভাড়া দিয়ে চলে গেছেন, কিন্তু আটকা পড়েছেন (সাড়ে ৫শ'র মতো লোক) তাদের সম্পূর্ণ বিমানভাড়া ফেরতপূর্বক বিনা ঝামেলায় দেশে ফেরত পাঠাবে মায়লয়েশিয়া সরকার। ৩। যারা এখনও যাননি, কিন্তু টিকিট করে ফেলেছেন, তাদের সম্পূর্ণ রিফান্ড করবে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস। ৪। প্রত্যেক শ্রমিককে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কনসোলেশন মানি প্রদান করবে মালয়েশিয়া সরকার।

মিনিমাম ১০ হাজার দাবী করা উচিত, কারণ মোট ৫৫ কোটি টাকা মালয়েশিয়া সরকারের জন্য কিছুইনা, কিন্তু এই শ্রমিকেরা গত কয়েকমাস নিজের রেগুলার কাজকর্ম/ব্যবসা ছেড়ে মালয়েশিয়া যাবার জন্য যে দৌড়াদৌড়ি করেছে তার একটা মূল্য আছে। বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব: ৫। উপরের ১ থেকে ৪ এর দাবীগুলো যথাযথ কূটনীতির মাধ্যমে আদায় করে নেয়া। অন্তত এখন থেকে হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটা ন্যায় প্রতিষ্ঠা হওয়া দরকার। আমরা খালি ঠকেই যাচ্ছি।

৬। আদায়কৃত ক্ষতিপূরণ যথাযথভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের হাতে ঠিকভাবে পৌঁছে দেয়াটা নিশ্চিত করা। ৭। দূতাবাসগুলোতে উঁচু পদে বসে থাকা ভুদাই টাইপের কূটনীতিবিদদের সিঙাপুর হোক, ভারত হোক বা অন্য যেকোন চালু দেশই হোক, তাদের উদাহরণ অনুযায়ী একটু কূটনীতির শিক্ষা দেয়া। বিসিএসের পরীক্ষায় বাংলা সাহিত্যের কিছু তথ্য, ইংরেজী গ্রামার, অংক কষতে পারা আর "পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৈঠাওয়ালা নৌকার নাম কি" টাইপের সাধারণ জ্ঞানে সর্বজ্ঞ হলেই যে কূটনীতিতে পারদর্শী হওয়া যায়না, এই বোধোদয়টা সহসাই হওয়া দরকার।

হতভাগা শ্রমিকদের নিয়ে কিছু বলার নাই, বলেও কিছু হবেনা, খালি লেখাটাই বড় হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.