আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংখ্যামিত্র 'পাই’, অর্পিত ‘পাইদিবস’, অত:পর আমার ‘পাই মানব’ হয়ে উঠা

আত্মবিশ্বাসহীনতায় প্রকট হচ্ছে আত্মার দেউলিয়াত্ব, তবুও বিশ্বাস আগের মতই নিশ্চল..

(এই পর্বে পাই এবং পাই দিবস সংক্রান্ত আলোচনা হবে। ‘পাই মানব’ হওয়ার কাহিনী পরের পর্বে। আজই পোস্ট করব ইনশাল্লাহ) পাইকে ধরা হয় সবচেয়ে সুন্দর সংখ্যা, আবার কোন কোন গণিতবিদ একে ‘নি:সঙ্গ সংখ্যা’(loneliest number) বলে থাকেন। অবশ্য কেউ কেউ একে সংখ্যার বদলে ‘আনুপাতিক ধারণা’ হিসেবেও বিবেচনা করে থাকেন। ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতি অনুসারে ‘কোন বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত সর্বদা একটি ধ্রুবসংখ্যা হয়”-এই সংখ্যাটিকেই গ্রীক বর্ণ ‘পাই’ য়ের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

বৃত্তীয় ধারণা প্রয়োগ করেই পাইয়ের আরেকটি পরিচয় এমন: বৃত্তের ক্ষেত্রফল ও ব্যাসার্ধের বর্গের অনুপাত। ত্রিকোণমিতির ধারণা থেকেও ‘পাই’ কে সংজ্ঞায়িত করা যায়, cos(x)=0 শর্তাধীনে x এর সর্বনিম্ন মানকে দ্বিগুণ করলে প্রাপ্ত মান হিসেবে। পাই যেহেতু অন্তহীন অমূলদ সংখ্যা, তাই এর মান নির্নয়ে বহুকাল থেকেই গণিতবিদ-বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। আর্কিমিডিসের প্রচেষ্টা এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে ; বহুভুজ ও অন্তর্লিখিত বৃত্তের তত্ত্ব প্রয়োগ করে তিনি নিশ্চিত করেন যে পাইয়ের মান ২২৩/৭১ থেকে ২২/৭ এর সাংখ্যিকমানের মধ্যে অবস্থান করবে। গণিতবিদ লিবনিজের অবদানও পাইয়ের মান নির্ণয়ে উল্লেখযোগ্য।

তিনি একটি ধারা আবিষ্কারকরেন যার মাধ্যমে একটি দশমিকের পর একটি নির্দিষ্ট ঘর পর্যন্ত পাইয়ের সঠিক মান পাওয়া যায়। তার প্রস্তাবিত ধারাটি: Pi=4/1-4/1+4/3-4/5+4/7-4/9+………. গণিতবিদ লি হুই একটি এলগারিদম প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে পাইয়ের আসন্ন মান নির্ণীত হয় ৩.১৪১৬; পরবর্তীতে চীনা গণিতবিদ জু চোংঝি তার এলগারিদম ব্যবহার করে পাইয়ের মান নির্ণয় করেন ৩.১৪১৫৯২৬ পর্যন্ত যা দীর্ঘদিন নির্ভুল মান হিসেবে পরিচিত ছিল। ক্যালকুলাস ও অসীমতক ধারার আবিষ্কার পাইয়ের মান নির্ণয়ের প্রচেষ্টাকে আরোও বেগবান করে। এসময় মাধব নাম্নী এক গণিতবিদ দশমিকের পর ১১ ঘর পর্যন্ত পাইয়ের মান নির্ণয়ে সক্ষম হন। পাইয়ের মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আর্কিমডিসের অনেক পরে আরেকজন ইউরোপীয় গণিতবিদের অবদান লক্ষ্য করা যায়।

এই গণিতবিদের নাম লুডলফ স্যিলন, যিনি জ্যামিতিক পদ্ধতিতে ৩৫ দশমিক স্থান পর্যন্ত পাইয়ের মান নির্ণয় করেন, এমনকি স্যার আইজাক নিউটনও ১৫ দশমিক স্থান পর্যন্ত পাইয়ের মান নির্ণয়ে সমর্থ হয়েছিলেন। তবে, ১৭০৬ সালে জন ম্যাকিনই সর্বপ্রথম পাইয়ের মান নির্ভুণভাবে দশমিকের পর ১০০ ঘর পর্যন্ত নির্ণয় করতে পারেন। উনিশ শতকের শেষের দিকে উইলিয়াম শ্যাকস নামের অন্য এক গণিতবিদ ৫২৭ দশমিক স্থান পর্যন্ত মান নির্ণয় করেন। তবে, পাই প্রসঙ্গে বললেই যার কীর্তি উল্লেখ করতেই হবে তিনি উপমহাদেশের বিস্ময়কর গণিত-প্রতিভা শ্রীনিবাস রামানুজন। তিনি বেশ কয়েকটি মৌলিক সূত্র উদ্ভাবন করেন পাইয়ের মান নির্ণয় করতে, তন্মধ্যে দুটি সিরিজ বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কম্পিউটার যুগে পাইয়ের মান নির্ণয় করাটা অনেক সহজসাধ্য হয়ে পড়লেও এখনো অনেকেই পাইয়ের মান নির্ণয়ের পদাধতি উদ্ভাবনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগে , প্রথম আলো মারফত জানতে পারলাম ‘সৌমিত্র’ নামের এক বাংলাদেশী তরুণ পাইয়ের মান নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে, যেটি ‘সৌমিত্র স্বাক্ষর’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এই পদ্ধতিতে নির্ণীত পাইয়ের মান মূল মানের সঙ্গে অনেকটাই সঙ্গিতপূর্ণ বলে সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। এবার ‘পাইদিবস’ প্রসঙ্গে আসি। ‘পাই দিবস’ কনসেপ্টটা ব্যক্তিগতভাবে আমি অপছন্দ করি, তবে সেই অপছন্দটা কোনক্রমেই ভালোবাসা দিবস, বন্ধু দিবস, কিংবা পাপী দিবসের মত নয়, বরং একজন অকৃত্রিম সংখ্যাপ্রেমী হিসেবে এই দিবসে আরও কয়েকজন সংখ্যাপ্রেমীর নির্মল আনন্দ দেখতে ভালই লাগে।

১৪ই মার্চ দিনটি পাইদিবস হিসেবে পালিত হয় পাইয়ের প্রথম ৩ ডিজিট ৩.১৪ এর অনুসারে। উল্লেখ্য মহামতি আইনস্টাইনের জন্মদিনও ১৪ই মার্চ। ১৯৮৮ সালে সানফ্রান্সিসকোতে প্রথমবারের মত পাইদিবস পালিত হয়। ল্যারি শো নামের একজন প্রবীণ পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন এ দিবসের প্রধান উদ্যোক্তা। ১৪ই মার্চ দুপুর ১টা ৫৯মিনটিকে পালন করা হয় ‘পাই মিনিট’ হিসেবে (৩/১৪;১:৫৯ অনুসারে), এছাড়া পাইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ‘ঢ়i approximation day’ নামে যেসব দিবস পালিত হয়, সেগুলো নিম্নরূপ: =২২শে জুলাই -‘, যেহেতু পাইয়ের মানকে একসময় ২২/৭ এর সমান ধরা হত।

=১০ই নভেম্বর_ বছরের ৩১৪তম দিন (৩.১৪ অনুসারে) =২১ডিসেম্বর, দুপুর ১টা ১৩মিনটি , এটি বছরের ৩৫৫তম দিন ( চৈনিক হিসাবানুযায়ী পাইয়ের মান ৩৫৫/১১৩ এর সমান)....... [ এই পোস্টটি দেয়ার পরিকল্পনা ছিল ১৪ই মার্চ, কিন্তু কাল বাসায় যাচ্ছি ২দিনের জন্য। ফিরতে ফিরতে ১৪ তারিখ চলে যাবে। তাই আগেই দিলাম। সবাইকে পাইদিবসের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই]


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।