আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইঁচড়ে পাকা সব পিচ্চি-পাচ্চিদের গল্প

যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

যখন কাজকর্ম থাকেনা ইন্টারনেটে হাজার রকমের সাইটে ঘুরাঘুরি করি, নানান পদের জিনিস পড়ার জন্য এরচেয়ে ভালো রিজার্ভার আর তো কিছু নেইও। তেমনি পড়তে পড়তে এক জায়গায় বাচ্চাদের পাকা পাকা কথার কিছু কাহিনী পড়েছিলাম। সেগুলোই একটু কেটে-ছেঁটে, উল্টে-পাল্টে স্মৃতি থেকে তুলে দিলাম। ১. ডিজিটাল পিচ্চি: এটা অবশ্য নেটে পাওয়া না, বাস্তবজীবনের কাহিনী, আটানব্বইয়ের দিকের কথা। বোনের মেয়েটার বয়েস তখন চার/পাঁচ হবে হয়তো, মামাকে কাছে পেলে তার বায়না একটাই -- গল্প না হয় ছড়া শোনাতে হবে! আমিও একই গল্প, একই ছড়া বারবার বলি, সেও মনোযোগ দিয়ে শোনে।

মাঝেমাঝে আগের দিনের চেয়ে একটু অন্যরকম বললে, বা কোন একটা লাইন বলতে ভুলে গেলে সেটা শুধরেও দেয়! একই গল্প কতদিন শোনানো যায়? একদিন তাই নতুন ছড়া "ক্রিংক্রিং টেলিফোন, হ্যালো হ্যালো হ্যালো" (চয়নিকা বইয়ে ছিলো) ছড়াটা শোনালাম। এটার গল্পটা ছিলো এরকম, বিড়াল ইঁদুরকে টেলিফোন করেছে, জরূরী আলাপ আছে বলছে। কিন্তু ইঁদুর টেলিফোনেই বলছে, "আমি তো বাড়ীতে নেই, মার্কেটে গেছি। " বাড়ীতে নেই, আবার ফোনে কথা বলে কিভাবে -- এটাই এই ছড়ার মজা! এই বলে ছোটবেলায় আমরা কত হাসাহাসি করেছি। তাই আদরের ভাগ্নীকেও মজার ছড়া শুনিয়ে হাসানোর চেষ্টা করলাম।

কিন্তু ওমা! সে দেখি মোটেও আশ্চর্য না, একেবারেই নির্বিকার! কি আর করা! বহুব্রীহির মামার মতো বুঝিয়ে বললাম ছড়াটার কোন জায়গায়টা মজার, কোথায় হাসতে হবে। সবশুনে এই ডিজিটাল পিচ্চি মুখ বাঁকিয়ে বললো, "মোটেও মজার, কারণ বিড়াল ইঁদুরের মোবাইলে ফোন করেছে। " ২.অপটিমিস্ট পিচ্চি আবীর, বয়েস সাত-আট হবে হয়তো, স্কুলে যায়, তবে স্কুলের চেয়েও বেশী মজা পায় বিকেলে মাঠে গিয়ে ক্রিকেট খেলতে। যেকোন কারণেই হোক, তার নিজের ধারনা ব্যাটিংয়ে তার মতো ভালো কেউ নেই। তবে, একেবারে খারাপ ব্যাটিং করে যে তাও না।

আশরাফুলের চেয়ে ভালো না হলেও কাছাকাছিই হবে হয়তোবা। শুধু ক্রিকেট পছন্দই করেনা, ভীষন ডিভোটেডও এই খুদে ক্রিকেটার। সারাদিন বাড়ীর উঠোনে ব্যাটিং প্র্যাকটিস করা তার চাইই চাই। তেমনি একদিন দেখলাম, বল মাটিতে ড্রপ খাইয়ে, তাড়াতাড়ি ব্যাট হাতে নিয়ে ছক্কা মারার প্র্যাকটিস করছে। আমাকে দেখেই বললো, "দেখো মামা, এবারে একেবারে ছক্কা মারবো।

" যদিও তার ছক্কা মানে হলো পনেরো ফুট দূরের দেয়ালে বলের উড়ে গিয়ে পড়া। আমিও বললাম, "ঠিক আছে ভাগিনা, চালাও। " বল উপরে ছুড়ে সজোরে ব্যাট হাঁকালো, "কিন্তু ব্যাটেবলে হলোনা! "(ইনভার্টেড অংশটা জাফরউল্লাহ শরাফতের গলায় পড়তে হবে ) একটু হতাশ হয়ে আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়েই আবার দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় গেলো সে, আর আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো, "এবার পারবোই!" কিন্তু কপাল খারাপ বেচারার! আবারও ঘটনা একই! এবার আর লজ্জায় আমার দিকে তাকালোওনা। "এইবার ছক্কা হবেই হবে" বলতে বলতে আবারও বল ছুঁড়ে, ব্যাট হাঁকালো। কিন্তু বিধাতা নিষ্ঠুর! কোনভাবেই ব্যাটে বলে হচ্ছেনা! (এখানে জাফরউল্লাহ শরাফতের গলায় না পড়লেও চলবে) আমারও খানিকটা মন খারাপ হয়ে গেলো।

একটা হাততালি দিয়ে আর পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দিতে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই দেখি বিজ্ঞের মতো মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে, "মামা, আজকের বোলারটা বেশী ভালো, তাইনা?" ৩.ব্লাসফেমি পিচ্চি ছোট্ট রুমকী। রোজার দিনে সবাইকে দেখে নামাজ পড়তে, ইবাদত করতে। এসব দেখতে দেখতে আল্লাহ বলে একজনের অস্তিত্ব সে মোটামুটি জেনে ফেললো। খারাপ কাজ করলে যে আল্লাহ গুনা দেয়, আর ভালো কাজ করলে যে সোয়াব দেয়, সেটাও সে জানে। এমনি একদিন রোজার দুপুরে, রুমকীর বাবা দেখলেন সে কাগজ পেন্সিল নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কি যেন করছে।

কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "আম্মু, কি করছো?" "ছবি আঁকছি", মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে বললো রূমকি। "কিসের ছবি আঁকছো, মামণি?" বাবার আহ্লাদ গলে গলে পড়ে। "আল্লাহর ছবি" ব্যস্তমুখে মুখে বলে রূমকী। জিভে কামড় পড়ে বাবার। সর্বনাশ! তাও নরম গলায় বললেন, "কিন্তু আম্মুজী, আল্লাহকে তুমি কিভাবে আঁকবে? কেউ তো জানেনা তিনি দেখতে কেমন?" এবার খানিকটা বিরক্তমুখে বাবার দিকে তাকায় রূমকী।

তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, "দাঁড়াওনা, আগে এঁকে নিই, তারপর সবাই জানবে তিনি কেমন। "


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।