আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাটল ট্রেন...........



সেদিন ভোরবেলা ট্রেন ধরার জন্যে বাসা থেকে বের হলাম। অনেকদিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেন ধরছি। আজকাল তো ট্রেনে চড়ে যাওয়াই হয় না। বাসে করে একা একাই যেতে হয়। সহপাঠীরা যে যার সুবিধে মত যায়।

সকালের ক্লাসটা করার জন্য ট্রেনে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। স্টেশনে পৌঁছে দেখি ছেলেমেয়ের প্রচন্ড ভীড়, সবাই নতুন মুখ, আমার পরিচিত কাউকে পেলাম না। প্রথম বর্ষের সবুজ প্রাণে মুখর রেল প্রাঙ্গন, সবাই বিপুল উৎসাহে ট্রেনে বন্ধু-বান্ধবদের জন্য সিট ধরে রাখছে....৬টা সিট কারো জন্য যথেষ্ট...১২টা.......কিংবা আরো বেশী.....একেকটি বগিতে সত্যিকার অর্থেই তিল ধারণের ঠাঁই নেই। আমিও সিট না পেয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আরো অনেকেই দাঁড়িয়ে আছেন, কারো চোখে-মুখে সিট না পেয়ে বিরক্তি, কেউবা প্রথমবর্ষের ছাত্র-ছাত্রীর প্রগলভতা দেখে রাগান্বিত কিছুটা।

আমার কিন্তু বেশ ভালো লাগছিল ওদের প্রাণচাঞ্চল্য দেখতে। সবে ওদের ক্লাস শুরু হয়েছে, তাই উৎসাহের সীমা নেই। এত ঘন কুয়াশার মাঝেও কারো অভিযোগ নেই, আলস্যের ছাপ নেই। জানি, গ্রীষ্মের দাবদাহে কিংবা বর্ষার ঘনঘটাতেও আপত্তি থাকবেনা....বয়সটাই যে এমন। আমারও মনে পড়ে গেলো নিজের প্রথম বর্ষে পড়াকালীন সময়ের কথা.......আমরাওতো এমনই ছিলাম! সেই সকালবেলায় ট্রেন ধরার জন্য সে কী উৎসাহ.........সারা রাত ঘুম হতো না কবে শুনতে পাব ট্রেনের ঝিক-ঝিক শব্দ।

আগেভাগেই বটতলী স্টেশনে পৌঁছে সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতদের জন্য অনেকগুলো সিট জোগাড় করা .......ষোলশহরে অপেক্ষমাণ বন্ধুদের হাতছানির জন্য জানালার বাইরে অধীর দৃষ্টি.....সব কিছু যেন চোখের সামনে ভেসে উঠে। এমনও হয়েছে অনেকদিন সিট রাখা নিয়ে কটূ মন্তব্য শুনতে হত। খারাপ লাগতো না তবুও। কথা আর হাসির উচ্চ শব্দ থেমে যেত না শত চোখ রাঙানির পরেও। জলের মত সহজ সরল বাক-চাঞ্চল্য কোথা থেকে যে উৎসারিত হতো.............ক্যাম্পাস যাবার দীর্ঘ রাস্তাটাকে অনেক ছোট মনে হত..................................... একেকদিন একেক সহপাঠীর পেছনে লেগে থাকা......চানাচুর-বিক্রেতার কাছে বিনে পয়সায় চকোলেট খাওয়া......কোনো সময় সুরে-বেসুরো কন্ঠে গান গেয়ে ওঠা....... উৎসাহ নিয়ে প্রতিটি ক্লাস করা হত......ঝুপড়ীতে আড্ডার ঝড় বয়ে যেত,বিষয়বস্তু সার্ত্র থেকে শিরোনামহীনের গান বাদ যায় না কিছুই।

নিজেরাই হেসে ফেলতাম তাত্ত্বিক আলোচনা শুনে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতো.......ক্লান্ত শরীর নিয়ে আবার যখন বটতলী স্টেশনে ফিরে আসতাম তখন হাতে ধরা থাকতো “বিউটি” আইসক্রিম আর পরের দিন ক্যাম্পাস আসার জল্পনা-কল্পনা.................. এসব ভাবতে ভাবতে শুনতে পেলাম একদল ছেলেমেয়ে আমাদের গাওয়া সেই গানটা গাইছে। ওদের সঙ্গে সুর মেলাতে গিয়ে দেখলাম হঠাৎই চোখ ভিজে আসছে................... “বন্ধু তোমায় এ গান শোনাব বিকেলবেলায়....আর একবার যদি তোমাদের দলে নাও খেলায়.......”


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.