আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মন্তব্যে মন্ত্রীদের সংযত হওয়া জরুরি

আমি নির্বাক হয়ে গেলে তোমার পতন অনিবার্য !

গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনায় আসায় সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। নতুন সরকার জাতিকে অপেক্ষাকৃত তারুণ্যনির্ভর একটি মন্ত্রীসভা উপহার দিয়েছে। যাদের সবাইকে তুলনামূলকভাবে সৎ ও যোগ্য বলা হচ্ছে। অবশ্য যোগ্যতার বিষয়টি প্রমাণের জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। যদিও এদের মধ্যে দু’একজন পরীক্ষিত।

কিন্তু এরই মধ্যে দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ বলে পরিচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে বসেছেন। এ জন্য তিনি সচেতন নাগরিকদের কাছে সমালোচিতও হয়েছেন। ঠিক যতটা আশা বুকে নিয়ে সাধারণ মানুষ নতুন এই মন্ত্রীদের স্বাগত জানিয়েছিল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্যের কারণে মানুষের মনে একটা আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে এবং ততটাই হতাশ হয়েছেন তারা। নতুন এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছুটির দিনে তার নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-১৮ আসনের খোঁজখবর নিতে ও জনসংযোগ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, নির্বাচনোত্তর সহিংসতার জন্য বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দায়ী।

কিন্তু একথা তো কোনওভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই যে, নির্বাচনে মহাজোটের বিপুল বিজয়ের পর সারাদেশে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটেছে। হোক সেটা অতীতের তুলনায় খুবই নগণ্য। সহিংসতা হয়েছে যে এ কথা সত্য। এমনকি এই সহিংসতার পেছনে নির্বাচনে বিজয়ী মহাজোট তথা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই। অতএব নির্বাচনোত্তর সহিংসতা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্য সাধারণ মানুষকে অনেক বেশি হতাশ করেছে।

তিনি এখন আর শুধু একজন দলীয় নেতা নন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। তার মুখ থেকে এমন একপেশে কথা শোভান ও বাঞ্ছিত নয়। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন সমালোচিত মন্তব্যের পর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ডেকে নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করার বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ কাজে লাগবে এবং মন্ত্রীসভার সব সদস্যই সজাগ হবেনÑ এমনটিই সাধারণ মানুষের আশা। একটু পেছনে ফেরা যাক।

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর একটি মন্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছিল। সন্ত্রাসীদের গুলি ছোড়াছুড়ির সময় এক শিশুর মৃত্যু হলে তিনি বলেছিলেন ‘আল্লাহর মাল আল্লা নিয়ে গেছে। ’ যা ছিল খুবই দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য। রাষ্ট্রের উচিত প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পেরে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলে তিনি ধিক্কৃত হয়েছিলেন।

আর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ইংরেজি বাংলার মিশেলে ‘লুকিং ফর শত্রুস’ বলে জনগণের কাছে হাসির পাত্র হয়েছিলেন। সন্ত্রাস নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে শুধু শুধু ফাঁকা বুলি আওড়ানোর কারণেই তারা এমন হাসির খোরাক হন। নতুন সরকারের মন্ত্রীর অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। টিভি ক্যামেরার সামনে কথার ফুলঝুরি না আওড়ে কাজ করে দেখাতে হবে। কথা কম কাজ বেশি-এই থিওরি মাথায় নিয়ে সামনে এগুতে হবে।

আর সন্ত্রাস বা সহিংসতা বন্ধ করতে দলমত নির্বিশেষে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। হোক সে নিজের দলের কর্মী। তা না করতে পারলে যে জনরায় মহাজোটের পক্ষে গিয়েছে সেটা ঘুরতে সময় লাগবে না। পনের কোটি মানুষের এই দেশের অনেক মানুষই রাজনীতি বোঝে না বা বোঝার চেষ্টা করে না। তবে তারা সন্ত্রাস চায় না।

একটু সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে চায়। এমন পরিবেশ সরকারকে সৃষ্টি করতেই হবে। দলীয় কর্মী বলে কোনও সন্ত্রাসীকে ছাড় দেওয়া চলবে না। আর গুরুত্বপূর্ণ পদ যারা অলঙ্কৃত করেছেন তাদের কথাবার্তায় আরেকটু সচেতন ও সংযত হতে হবে। লেখাটি চলতি সংখ্যা সাপ্তাহিক ২০০০ এ প্রকাশিত।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.