আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ উঠতে ভালবাসে, নামতেও

আমি অবাক চোখে বিশ্ব দেখি, দৃশ্য সাজাই চোখের তারায়......

শেষ পর্যন্ত আরও একটি টেস্ট পরাজয়ের গ্লানি যুক্ত হলো বাংলাদেশ দলের পরিসংখ্যানে। প্রথম টেস্টে সম্মানজনক পরাজয়ের পর যে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন দলীয় অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল, তা হারিয়ে গেল নিরাশার দোলাচলে। ৪৬৫ রানের বিশাল পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে গেল বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের স্বপ্ন। চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ পরাজিত হলো ৪৬৫ রানের ব্যবধানে। স্বাগতিকদের টেস্ট ইতিহাসে এটাই সবচে বড় রানের ব্যবধানে পরাজয়।

ঢাকার প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ পরাজিত হয়েছিল ১০৭ রানে। কিন্তু সেই পরাজয়েও ছিল বিজয়ের আনন্দ। টাইগারদের অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল পরাজয়ের হতাশা। মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়েছিল সবাই। শ্রীলঙ্কার ৫২১ রানের টার্গেটকে তাড়া করে আশরাফুল বাহিনী যে অনবদ্য ইনিংস খেলেছিল, তা সবাইকে এনে দিয়েছিল নতুন করে ভাবনার অবকাশ।

টাইগাররাও আভাস দিয়েছিল ভালো কোনও সম্ভাবনার। আশরাফুল ব্যক্ত করেছিলেন ভালো খেলার আশাবাদ। আর তাই দ্বিতীয় টেস্ট নিয়ে সবার মাঝে ছিল একটা অন্য ধরনের উত্তেজনা। আবারও কোনও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার আশায় স্বপ্ন সাজিয়েছিলেন সবাই। চট্টগ্রামের রুহুল আমীন স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কা যখন ৬২৩ রানে তাদের ইনিংস ঘোষণা করে, তখন সবার চোখের সামনে আবার ভেসে উঠেছিল প্রথম টেস্টের সেই অসাধারণ খেলার ছবি।

সবাই আশা করেছিল টাইগারদের আবার ঝলসে ওঠা দেখার। কিন্তু সবার সেই স্বপ্নকে ধুলিসাৎ করে দিয়ে ঝলসানোর বদলে টাইগাররা যেন আরও ঝিমিয়ে পড়ল। প্রথম টেস্টে যারা ৫২১ রানের টার্গেট ধাওয়া করে অভিষ্ট লক্ষ্যে প্রায় পৌঁছেই গিয়েছিল, তারা দ্বিতীয় টেস্টে এসে সবাইকে হতাশ করে দিয়ে গুটিয়ে গেল মুহূর্তেই। ম্যাচ শেষ চতুর্থ দিনেই। আর ফলাফল? ৪৬৫ রানে পরাজয়।

দলের এ বাজে পারফরমেন্সের জন্য দায়ী করা হচ্ছে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাকে। কারণ এই ব্যর্থতার কারণেই এ পরাজয়ের চরম মূল্য গুণতে হয়েছে টাইগারদের। দ্বিতীয় টেস্টের দুটি ইনিংসেই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা অব্যাহত রয়েছে। আর এই অবআহত ব্যর্থতাই হয়েছে সব সমস্যার মূল কারণ। দলীয় কোচ সিডন্স এই সমস্যাকেই চিহ্নিত করেছেন পরাজয়ের কারণ হিসাবে।

দলের এ বাজে পারফরমেন্স নিয়ে তিনি বলেন, এবারের ম্যাচে বোলিং খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু ব্যাটিংয়ে আমাদের আর অনেক কিছু শিখতে হবে। টপ অর্ডার থেকে বড় স্কোর আসছে না, এটাই সমস্যা। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও একটি সমস্যা, সেটি হচ্ছে টাইগারদের পারফরমেন্সের অধারাবাহিকতা। প্রথম টেস্টে আশরাফুল সেঞ্চুরি করে দলকে ভালো একটি অবস্থানে নিয়ে গেলেও, দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি পাননি রানের দেখা।

মাত্র ৭ রানেই তাকে হতাশার বাণী ঝাড়তে ঝাড়তে ফিরে যেতে হয়েছে প্যাভিলিয়নে। আর ১ম ইনিংসে সংগ্রহ করেছিলেন বহু কষ্টে ৪৫ রান। একই অবস্থা দলের আরেক নির্ভরশীল খেলোয়াড় সাকিবেরও। প্রথম টেস্টে অসাধারণ পারফমেন্স দিয়ে যিনি অর্জন করে নিয়েছিলেন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ পুরস্কারটি। সেই সাকিব দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে আউট হয়েছেন শূন্য রানে।

দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাশরাফি সংগ্রহ করেছিলেন ৬৩ রান। আর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনিও ফিরে গেছেন শূন্য রানে। এরকম ব্যর্থতা দলের প্রায় সকল খেলোয়াড়ের মাঝেই লক্ষণীয়। ব্যক্তিগত ভালো পারফরমেন্স যেমন একত্রিত হয়ে দলকে নিয়ে যায় বিশাল কোনও অর্জনের দিকে। তেমনি এসব ব্যক্তিগত ব্যর্থতা একত্রিত হয়ে দলকে নিয়ে যায় চরম ব্যর্থতার দিকে।

এর নির্মম উদাহরণ চট্টগ্রাম টেস্ট। একের পর এক টেস্ট পরাজয় বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে কেবল হতাশা। তাবে সম্প্রতি সেই হতাশার সাথে আবার যুক্ত হয়েছে আরেকটি বিষয়। সেটা হচ্ছে- আতঙ্ক। আতঙ্ক যে বিষয় নিয়ে তা হচ্ছে একের পর এক পরাজয়ের কারণে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা এবার হুমকির মুখে পড়ে গেছে।

সম্প্রতি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড দাবি করেছেন, বাংলাদেশকে দিয়ে ক্রিকেটের কোনও উপকার হচ্ছে না। আর এ উপকার না হওয়ার ফলাফল কী হতে পারে তারও আভাস পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস দেখে আইসিসি’র বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডেভিড মরগ্যান কিছুদিন আগে মন্তব্য করেছেন, একটা দেশ আইসিসি’র পূর্ণ সদস্য হলেই একের পর এক টেস্ট খেলে যাবে সে ব্যাপারে কোনও যুক্তি নেই। একটা দল যদি তাদের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু না শেখে, তাহলে তাদের বোধহয় ওয়ানডে স্ট্যাটাসেই থিতু হওয়া উচিত। এই মন্তব্য ইঙ্গিত করে নানা বিষয়ে।

সেই ইঙ্গিত আরো ভয়াবহ দিকে মোচড় নেয় যখন আইসিসির ক্রিকেট অপারেশনস মহাব্যবস্থাপক ডেভ রিচার্ডসন স্বয়ং চলে এলেন বাংলাদেশে। তবে সবার ধারণাকে পাশ কাটিয়ে দিয়ে তিনি সরাসরিই বলে দিলেন, ওসব কোন ব্যাপারে নয়, আইসিসির শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কথা বলতেই তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তার এ মন্তব্যের পরও সংশয় রয়েই যায়। কারণ? কারণ যাওয়ার সময় বাংলাদেশ থেকে কী দেখে গেলেন তিনি? বাংলাদেশের ক্রিকেট স্ট্যাটাস নিয়ে যখন কাঠগড়ায় দাড়াতে হচ্ছে দলটাকে, সে সময় টেস্ট ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরাজিত হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটেও নিজেদের যোগ্যতার ভালোই নিদর্শন রিচার্ডসনকে দেখিয়ে দিলো টাইগাররা। গত ১০ জানুয়ারী মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তিন জাতি ওয়ানডে ক্রিকেট সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ পরাজিত হলো ৩৮ রানে।

এ ম্যাচ চলাকালীন সময়ে মিরপুর স্টেডিয়ামেই উপস্থিত ছিলেন রিচার্ডসন। জিম্বাবুয়ের ৫০ ওভারে করা ২০৫ রানের টার্গেটের পিছু ধাওয়া করে আরো একবার নিজেদের ব্যর্থতার পরিচয় দিলো বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা। ৪৬.২ ওভারে তারা গুটিয়ে যায় মাত্র ১৬৭ রানে। এ খেলার ফল দেখে মরগ্যানের কথাটা কী আবার নতুন করে ভেবে দেখবেন না রিচার্ডসন? সময়ই বলে দেবে সব, কোনদিকে যাচ্ছে আমাদের ক্রিকেট। যদিও দল নিয়ে মোটেই হতাশ নন দলীয় কোচ সিডন্স।

এতো কিছুর পরও তিনি জোর গলায় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই ছেলেদের নিয়েই যদি আগামী দুই বছর থাকতে পারি, আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি ভালো একটা দল হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশাও তাই। বাংলাদেশ একটি ভালো দল হয়ে উঠুক। এসব ধারাবাহিক পরাজয়ের গ্লানিকে জয়মাল্যে পরিণত করে তারা ক্রিকেটবিশ্বে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করুক একটি সম্মানজনক অবস্থানে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.