আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাহবাগের আন্দোলন আর বামদের ভুমিকা

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি একটা চলমান আদালতের বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের বিক্ষোভ সমর্থন করার কোন সুযোগ ছিল না - কারন আইনকে তার নিজস্ব গতিতেই চলতে দিতে হবে। বিচারকদের উপর আস্থা রেখেই আমরা আদালত মেনেছি। কিন্তু দিনের পর দিন এই আদালতের বিরুদ্ধে যে পরিমান প্রচার প্রচারনা হয়েছে এবং সাম্প্রতিক জামাত শিবিরসহ যুদ্ধাপরাধীরদের সহযোগীচক্র যেভাবে আদালত বাতিলের আন্দোলন করছে তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে (নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র) যখন এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে - তাকে সমর্থন না দিলে অন্যায় হবে বিবেচনা করি। কারন প্রচন্ড চাপের মধ্যে আদালতকে কাজ করতে হচ্ছে - এই বিক্ষোভ আদালতকে কিছুটা স্বস্থি দেবে। কারন আদালততো চালায় রক্ত মাংসের মানুষরাই - যারা দিনের পর দিন তাদের বিরুদ্ধে হুমকী ধামকি শুনে যে কিছুটাও বিচলিত হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়! আমরা জানি আদালত শুরু হওয়ার পর থেকে জামাত-শিবির এবং তার সহযোগী চক্র দেশে বিদেশে নানান ষড়যন্ত্র করেছে - অর্থের বন্যা বইয়ে দিয়েছে - মিলিয়ন ডলার খরচ করে বিদেশে আইনজীবি আর লবিষ্ট কিনেছে।

দেশী কলাম লেখক আর টকশোর টকিদের প্রচুর পেমেন্ট দিয়ে তাদের পক্ষে বিতর্ক করিয়েছে। এমনকি বিএনপির বড় নেতা মওদুদ প্রতিটি সুযোগ নিয়ে আদালত বাতিলের জন্যে সংবাদ সন্মেলন করেছে। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিলো আদালতকে সরকারের নিয়ণ্ত্রাধীন একটা বিষয় হিসাবে দেখানো। এইটা দেখানো যে - আদালত রাজনৈতিক ভাবে পক্ষপাত দুষ্ট। কাদের মোল্লার রায়ে শাস্তি জনগনের প্রত্যাশা পুরনে ব্যর্থ হয়েছে - সংগত কারনেই মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়েছে।

অনলাইন ব্লগারদের ডাকে মানববন্ধ আজ বিশাল আন্দোলনে পরিনত হয়েছে। এই আন্দোলনের জনসম্পৃক্ততাকে নানান জন নানান ভাবে চিত্রিত করতে চাইছে। মুলত যে কারনে মানুষ এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে বলে মনে করি - ১) চল্লিশ বছর ধরে জামাত-শিবির এবং যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগী গোষ্ঠী বিএনপি জনগনের প্রানের দাবী বিচারকে উপেক্ষা করে উদ্ধত ভংগীতে শহীদ এবং বিচারপ্রার্থীদের অপমান করেই যাচ্ছিলো। সাম্প্রতিক কালে জামাত শিবিবের রাজপথে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড জনগনকে বিরক্ত করে তুলেছে। মানুষ প্রতিবাদের একটা জায়গা খুঁজছিলো।

শাহবাগ সেই সুযোগ দিয়েছে। ২) বিচার ব্যবস্থা - বিশেষ করে সরকার পরিবর্তনের পর এই অপরাধীদের সাথে কি আচরন করা হবে - তাদের মুক্তি দিয়ে দেওয়ার আশংকা থেকে মানুষ সন্দেহপ্রবন হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ১৯৭৫ এর দালাল আইনে বিচারাধীন ১১ হাজার রাজাকারকে ছেড়ে দিয়ে জিয়াউর রহমান যে উদাহরন প্রতিষ্ঠা করে গেছেন - তারপর মানুষের বিচারের বিষয়ে আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। ৩) রাজনৈতিক নেতাদের উপর অনাস্থা এবং অবিশ্বাস মানুষকে টেনে এনেছে একটা চরম শাস্তির দাবীতে - কারন মানুষ ভাবছে ফাঁসি হয়ে গেলে সরকার পরিবর্তনের পর মুক্তির কোন পথ থাকবে না। মানুষ বর্তমান সরকারকে এতটুকু বিশ্বাস করছে যে এই সরকারের সময় কালে বিচার কাজ চলবে - কিন্তু সরকার পরিবর্তন হলে - বিশেষ করে জামাত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় এলে বিচার কাজে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বিবেচনায় মানুষ স্বোচ্চার হয়েছে চুড়ান্ত শাস্তির দাবীতে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বিচারের প্রতি মানুষের ইতিবাচক সমর্থনের এই সমাবেশকে অনেকেই আদালতের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের কাজে লাগাচ্ছে। রাজনৈতিক বৈরীতায় এরা অবলীলায় বিচারকে বিতর্কিত করে ফেলছে। গতকাল বদরুদ্দিন উমরের বক্তব্য দেখলাম আর দেখলাম কমিউনিস্ট পার্টির উপদেষ্ঠা মঞ্জরুল আহসান খানের বক্তব্য। দুইজনই কাদের মোল্লার রায়ের মাঝে "আওয়ামী-জামাত আঁতাত" আবিষ্কার করেছেন। তাদের এই অন্ধ আওয়ামী বিদ্ধেষ নতুন না - উমর সাহেব দীর্ঘকাল আওয়ামীলীগের সমালোচনা করার জন্যে নয়া দিগন্ত আর আমাদর দেশে তামাকের আসরে বসছেন - অন্যদিকে মঞ্জুরুল আহসান খান সিপিবির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরই কসম খেয়েছিলেন যে আওয়ামীলীগে সাথে কোন সমঝোতা করবেন না।

উনার ভাই বিএনপির নেতা নজরুল ইসলাম খানতো সব কিছুতেই আওয়ামীলীগের দোষ খুঁজে পান। চৈনিক বাম আ তাদের তত্ত্বগুরু বদরুদ্দিন উমরের কথা বাদ দিয়ে দিচ্ছি কারন এরা জামাত শিবিরকে যতটা শত্রু মনে করে তার চেয়ে বড় শত্রু বিবেচনা করে আওয়ামীলীগকেই- কিন্তু প্রগতিশীল হিসাবে পরিচিত সিপিবির নেতা যখন ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব প্রচার করেন তখন অবাক হই - কারন উনার কথা মতো যদি আওয়ামী-জামাত আঁতাত করেই এই রায় হয়ে থাকে - তাহলে উনি পক্ষান্তরে বলতে চাচ্ছেন এই আদালত নিরপেক্ষ না। কথাটা যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রতি কতটা ক্ষতিকারক তা ভাবার সময় মনে হয় এই বয়োবৃদ্ধ রাজনীতিকের নেই - উনি উনার আওয়ামীবিদ্বেষ থেকে এতোদিনের নিরপেক্ষতার দাবী করা আদালতে অবলীলায় একটা পক্ষপাতের দোষে দোষী করে দিলেন। যা প্রকৃত পক্ষে জামাত শিবিরের অবস্থানের সাথেই মিলে যায়। প্রকৃত পক্ষে ডান আর বাম দু্ই দলই একই চরিত্র ধারন করে আছে - এরা নিজেদের স্বক্ষমতার বিষয়ে যেমন অজ্ঞ - তেমনি নিজেদের এজেন্ডা বান্তবায়নে অন্যের উপর নির্ভর করাকে তাদের অধিকার বিবেচনা করে।

কেন আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করলো না - তাতে তারা গোস্বা করে আছেন - কিন্তু নিজেদের সেই মুরোদ নেই ক্ষমতায় গিয়ে তা করার। আমরা যখন বলি - যুদ্ধাপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারনে জামাতকে নিষিদ্ধ করতে হবে - তখন উনার বলে উঠেন ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি বাতিল করতে হবে - কারন এরা এতটা বিশেষ ধরনের শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে চায় - কিন্তু বামরাও যে ডিকটেটরশীপ অব পলিতারিয়েত নামে এক নায়কের শাসন কায়েমের জন্যে রাজনীতি করে তা ভুলে যায়। পরজীবি ধরনে এই রাজনীতি অন্যের কাঁধে ভর করাকে নিজেদের অধিকার মনে করে - সরকারের সাহায্য হরতাল করে নিজেদের বিপ্লব সফল ঘোষনা করে - আবার সরকারকে হুমকী ধামকি দেয় - যা কৌতুকের সৃষ্টি করে। মুলত বাম আর ডানের রাজনীতি ওয়ালারা কাঁধ দিয়ে পাহাড় ঠেলা চেষ্টা করছে - শুধু পার্থক্যটা হলো একদল বাম কাঁধ ব্যবহার করছে - অন্যদল ডানকাঁধ ব্যবহার করছে। চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচারের আন্দোলনে অতিবামদের ভুমিকা নিয়ে সবার সতর্ক থাকা দরকার - কারন এরা নিজেদের স্বার্থে পুরো বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেও দ্বিধান্বতি নয় - যার প্রমান আমরা ইতোমধ্যে পেয়ে গেছি।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।