আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উন্নয়নের তত্ত্ব তালাস



আমার এক বড় ভাই আছে। সরকার ভাই। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। দেশ বিদেশ নিয়ে প্রায়ই তাঁর সঙ্গে আমার বিতর্ক হয়। অনেক বিষয়ের একটি বাংলাদেশের উন্নয়নের নানা তত্ত্ব, বিভিন্ন সময়ে আমাদের নেতারা যা দিয়েছেন।

সরকার ভাই অনেক গবেষণার সাথে জড়িত থাকায় তাঁর কাছে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। এটা ভালো লাগে। আবার সব কথা যে তাঁর একবারেই ফেলে দেওয়ার মত তা-ও নয়। দেশের খাদ্য সমস্যা নিয়ে কথা তুলতেই তিনি টেনে আনেন মনু ঋষি প্রবর্তিত চতুর্বর্ণ প্রথার কথা। ঋষি মনু নাকি একদিন রাজ দরবারে এস চিৎকার করে রাজাকে বলেছিলেন, আমি এমন একটা জিনিস আবিস্কা করেছি যার মাধ্যমে পৃথিবীতে মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে রাজারা ততদিন নির্বিঘ্নে রাজত্ব করে যাবে।

রাজা জিঞ্জেস করলেন, কী এমন জিনিস আবিস্কার করেছেন গুরু? মনু বললেন, মানুষকে চার ভাগে ভাগ করে দাও। কিছু মানুষ সমাজে জন্মগ্রহণ করে যারা বুদ্ধিমান এবং অন্যদের চাইতে উন্নততর। তাদের একটা শ্রেণীতে ভাগ করে দাও। তাদের কাজ হবে মানুষ কেমন করে সৃষ্টি হল, চাঁদ সূর্য কেন ওঠে -এই সব সৃষ্টি রহস্য নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবে। এরা হবে সমাজের সবচেয়ে অভিজাত শ্রেণী ব্রাহ্মণ।

তারা শুধু চিন্তা ভাবনা করবে, কাজ করবে না। ব্রাহ্মণদের পাহারা দেওয়ার জন্য কাজ বকরবে সমাজের সুস্থ সবল মানুষেরা। তাদের নাম হবে ক্ষত্রিয়। কাজ হবে যুদ্ধ করা, ব্রাহ্মণ ও দেশকে রক্ষা করা। আর যাতে তাদের খাবার নিয়ে ভাবতে না হয় একটা শ্রেণী কর, যারা কৃষিকাজ করবে, কাপড়সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করবে।

এদের নাম হবে বৈশ্য। এখন ব্রাহ্সমণ চিন্তা করে, ক্ষত্রিয় অস্ত্র ধরে, বৈশ্য উৎপাদন করে। তবে বাড়িঘর, মলমূত্র পরিস্কার করবে কে? তাই আর একটা শ্রেনী করতে হবে। তারা শূদ্র। বর্ণপ্রথা অনুযায়ী সমাজের সবচেয়ে অভিজাত ব্রাহ্মণরা কোনো কাজ করে না।

যজমানের বাড়ি থেকে চাল, ডাল, কাপড়, লাউ, দুধ, কলা সবই পায়। অর্থাৎ খভক্ষা করে চলে, কিন্তু সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত লোক। ব্যস এই দর্শনটাই আমাদের সমাজের জন্য কাল হল। যারা সবচেয়েই বেশি কাজ করে তারা সমাজের সবচেয়ে ঘৃণ্য। আমাদের অঞ্চলে মুসলমানরা এসেও সেই বর্ণপ্রথার বাইরে যেতে পারেনি।

ইসলাম ধর্মে সাম্য মৈত্রির কথা বলা হলেও সৈয়দ, খান, খন্দকাররা হলেন অভিজাত। তাদের চেয়ে কম কুলীন, যারা কৃষিকাজ করে। সৈয়দ খন্দকাররা তাদের অবঞ্জা করে বলে, গেরস্থ। তার চেয়ে চোট জাত যারা কাপড় বোনে। তাদের বলে জোলা।

সবচেয়ে ঘৃণিত হলে যারা মাছের ব্যবসা করে। মুচি, মেথরদের তো কথাই নেই। এই যখন অবস্থা তখন এখানকার মানুষ কেন কাজ করতে চাইবে। কৃষক শ্রমিক, মেথর, মুচি সাবই চায় কিছু টাকা জমলে বসে আরাম আয়েস করে খাবে। কৃষকরা কৃষিকাজ করে মনে আনন্দ পায় না।

যে কাজে আনন্দ নেই সে কাজ থেকে সর্বোৎকৃষ্ট ফল কী করে আশা করা যায়। সমাজের কাজের লোকেরা কী করে আনন্দ পাবে কাজে সেটার অনেক দিক আছে তা আপনারা জানেন। পরিকল্পনাবিদেরা তো নানা হিসেব নিকেশ দিতেই থাকেন- উঁ.. উঁ..ওঁ.. ওঁ..বাজেট বাড়াতে হবে, সার কীটনাশক দিতে হবে, প্রতি ইঞ্চি জমিতে চাষাবাদ করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তাঁর জীবন যাত্রার মান কেন বাড়ে না। সমাজে কেন তাঁরা অপদস্থ।

সমাজে যে এই সংস্কৃতিটারও বদল ঘটাতে হবে, এ জীবনে কারও মুখে তা শুনলামও না। কিন্তু আমাদের এ অঞ্চলের দর্শন, বিজ্ঞান অধ্যয়ন করে পশ্চিমারা কেন আজ বিশ্বের অধিপতি। আমার মনে হয়, আমাদের দর্শনের গলদটা তারা বুঝতে পেরেছিল, তারা চতুর্বর্ণের উল্টোটা করার চেষ্টা করেছে। তবে. হ্যা কথা আরও আছে। যুগ যুগের অবহেলায় আমাদের কৃষি ও কৃষক আজ বন্দী।

সারের জন্য বন্দী, কীটনাশকের জন্য বন্দী, সেচের জন্য বন্দী। আমরাই তাদের বন্দী করেছি। বিস্তারিত না বললেও হয়তো বুঝতে পারবেন। আমরা আমাদের সমস্যা সম্ভাবনা, প্রযুক্তির কথা না ভেবে পরমুখাপেক্ষী হয়েছি। নিজেদের অবারিত পানিসম্পদ থাকতে জাপানের পরাশর্মে গভীর নলকূপ আমদানি করেছি।

ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিজে নামিয়ে দেশকে মরুভূমি বানানোর পথে এনেছি। নিজেদের আড়াই হাজার প্রজাতির ধান নিয়ে গবেষণা না করে মার্কিন পরামর্শে সার ও কীটনাশকভূক প্রজাতির প্রচলন করেছি। কৃষিজমি বৃদ্ধির বৈজ্ঞানিক পথ না মেনে বন উজাড় করে কৃষিজমি তৈরি করেছি যা উল্টো কৃণিকে আরও ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। কীটনাশকে মাছসহ উপকারী কীটপতঙ্গ ধ্বংস করে ফেলেছে। কথা আছে আরও।

হবে হয়তো সামনে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.