আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উন্নয়নের বিস্ময় বাংলাদেশ



গত দুই দশকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের যেকোনো সূচকের বিচারে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৯০-এর পর সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধিতে উন্নয়নশীল দেশের গড় হারের তুলনায় অনেক এগিয়েছে। দারিদ্র্যের হার অর্ধেক হয়ে গেছে। মেয়েদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অবদানের হার দ্রুত বেড়েছে, জনসংখ্যা, গড় আয়ু, শিশুমৃত্যুর হার, মেয়েদের স্কুলে পড়ার হার, সক্ষম দম্পতিদের জন্মনিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গ্রহণের হার ইত্যাদি সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ সমপর্যায়ের উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশ, এমনকি প্রতিবেশী ভারতকে পেছনে ফেলতে সমর্থ হয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের সাফল্য যে বেশি, নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন তা বারবার লিখেছেন।

তিনি তাঁর সর্বশেষ প্রকাশিত অ্যান আনসারটেইন গ্লোরি: ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইটস কনট্রাডিকশনস বইয়ে বাংলাদেশ নিয়ে আলাদা একটি অধ্যায়ও রেখেছেন।
বিশ্বব্যাংকের তৈরি করা তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এখন গড় মাথাপিছু আয় হচ্ছে ৫২৮ ডলার। আর দক্ষিণ এশিয়ার গড় আয় এক হাজার ১৭৬ ডলার। এক হাজার ৪৪ ডলার নিয়ে দক্ষিণ এশিয়াকে প্রায় ধরে ফেলেছে বাংলাদেশ। সাফল্য আছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারেও।

বাংলাদেশে এখন এই হার মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ আর দক্ষিণ এশিয়ার গড় ১ দশমিক ৪ শতাংশ। নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এই গড় অনেক বেশি, ২ দশমিক ১ শতাংশ।
স্বাধীনতার ঠিক পরেই দেশের মানুষ গড়ে বেঁচে থাকত ৪৬ বছর, এখন সেই গড় ৬৯ বছর। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার গড় হচ্ছে ৬৫ বছর। নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এক হাজার নবজাতকের মধ্যে মারা যায় ৭০ জন, দক্ষিণ এশিয়ায় ৫২, আর বাংলাদেশে ৩৫ জন।

মেয়েরা সবচেয়ে বেশি স্কুলে যায় এই বাংলাদেশেই। বাংলাদেশ কেবল পিছিয়ে আছে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের অপুষ্টি দূর করার ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশের এই অর্জন বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ শুধু যে মুসলিমপ্রধান দেশ, তা নয়, এটি উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত এমন একটি অঞ্চলের অংশ, যেখানে রয়েছে মেয়েদের প্রতি বৈষম্যমূলক পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। এ কারণে বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নের এই অগ্রগতিকে একটি ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

এর পেছনে কাজ করেছে জনগণের উন্নয়ন-সচেতনতা, গোত্র-বর্ণ ভেদাভেদহীন সমাজ এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর নানা কার্যকর কর্মসূচি ও সামাজিক উদ্যোগ।
অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন আরও বলেন, মাঠপর্যায়ের এসব কর্মসূচির মাধ্যমেই দেশের মানুষ নানা ধর্মীয় গোঁড়ামিকে ক্রমান্বয়ে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারিজম নিয়ে যে রাজনৈতিক বিতর্ক, তা দেশের উন্নয়ন-প্রক্রিয়ায় উপাদান হিসেবে তেমন কাজ করেছে বলে মনে হয় না। কিন্তু এখন ধর্মের নতুন করে রাজনৈতিকীকরণ বাংলাদেশের সামাজিক বিপ্লবকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.