আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজের কথা বলার জন্য নয়, সরকারী কর্মকর্তাদের কেনো দুর্নীতি হাতছানি দিয়ে ডাকবে/ডাকছে, সে বিষয় ফুটিয়ে তোলার অভিপ্রায়ে।

[অন্যর দোষ না খুঁজে আগে যদি সবাই নজের দোষটা খুঁজত তাহলে বোধহয় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত]............... [পথের শেষ নেই, আমার শেষ আছে, তাইত দ্বন্দ্ব] http://mamunma.blogspot.com/

আমি একজন তড়িৎ প্রকৌশলী। খুব সহজেই হঠাৎ ২৪তম বিসিএস পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে উঠি, পেশা বদলানোর ইচ্ছে না থাকায় সরকারী সেক্টরে তড়িৎ প্রকৌশলের প্রধান কর্মত্রে প্রাক্তন বিটিটিবি তে টেলিকমিউনিকেশন ক্যাডারের আন্ডারে জয়েন্ট করি । আর সেই থেকে আজ অবধী সরকারী প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে আমার চাকুরীর মেয়াদকাল ৩ বছর ছয়মাস। বর্তমানে বিটিটিবিকে বিটিসিএল নামক এক অস্পষ্ট কোম্পানীতে রূপান্তর হলেও কোন এক তত্ত্বাবধীয় উদাসীনতায় আমাদের চাকুরীর স্ট্যটাস বা বেতন স্কেলের কোন পরবির্তন বা সুনির্দিষ্টকরণ হয়নি। এবার মূল বক্তব্যে আসিন করি।

একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরী শুরু করতে হয় ৬৮০০ টাকা বেতন স্কেলে । সাড়ে তিনবছন চাকুরী করার সুবাদে বর্তমানে সর্বসাকুল্যে ( বাড়ী ভাড়া সহ) বেতন অর্জন ১৪৮৫০ টাকা , যা থেকে জিপিএফ এ বাধ্যতামূলক (মিনিমাম ১০%) কর্তন ১০০০ করার পর হাতে আসে প্রতিটি মাসে ১৩৮৫০ টাকা ( এই হিসাবে ২০% মহার্ঘ্য ভাতা ধরা হয়েছে)। ( উল্লেখ্য সরকারের সর্বোচ্চ পোষ্টের বেসিক ২৫০০০/- টাকা মাত্র) এই বেতনটি প্রতিটি সরকারী কর্মকর্তা মাসের ১ তারিখে প্রাপ্ত হয়। বর্তমানে বিটিসিএল নামক এক অজানা অধ্যায়ে প্রবিষ্ট হওয়ায় কোম্পানীর বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে বেতন দু/তিন দিন আগে প্রাপ্ত হই। আজ সেই বেতন হস্তগত হবার দিন ছিল আমার।

এবার একটু অন্য কথা... বংশগত কারনে বেশ অনেক বছর ধরে আমি শীতকালীন হালকা অ্যাজমায় ভুগে থাকি। এবার এই বছর একটু বেশী ভুগছি। ইনহেলারেও সদা শান্তি মিলছেনা। তাই একজন ভালো চিকিৎসক খুঁজছিলাম। অবশেষে খোঁজ পাওয়ায় আজ সেখানে হাজির হয়েছিলাম।

প্রফেসর পদবীর চিকিৎসক সাহেব কে আমার পছন্দ হয়েছে এবং তার কাছে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য বয়াত গ্রহণ করতে আমি সম্মত হয়েছি। তাই প্রারম্ভে তার ভিজিট বাবদ ৪০০ টাকা প্রদান এবং অ্যাজমার অবস্থা পরীক্ষা বাবদ ৭০০ টাকা প্রদান করতে কুণ্ঠা বোধ করলাম না। অতপর: তিনি ডায়াগনষ্টিক সেসন্টার হতে আরও তিনটি পরীক্ষা করাতে দিলেন, রক্ত এবং এক্সরে সংক্রান্ত সে তিনটাতে হাজের দেড়েক টাকা তো লাগতেই পারে। আর বেশ কিছূ ওষুধ দিলেন মাস খানেকের জন্য যার দাম পড়ল সর্বসাকুল্যে ২৪০০ টাকা। (শুণলাম আরেকটি অতি প্রয়োজনীয় টেস্টও নেক্সট ভিজিটের পর কোনএকদিন করতে হবে , ধারনা মতে সেটাতে ৩০০০/৪০০০ টাকা লাগবে।

) রিপোর্ট দেখাতে আসার দিন আবার ২০০ টাকা লাগবে শুনলাম। তো বেতন পাবার দিন বিকেলেই মোটমাট হাজার চারেক টাকা ব্যয়িত হয়ে গেলো। আরও হবে। আরেকটু ... দূর্বল মতার অধিকারী বিধায় অফিসার হিসেব হিসেবে আমি কোন অফিসিয়াল গাড়ী পাইনাই। সে কারনে প্রতিদিন বাসা হতে অফিস আসা বাবদ আমার মাসে মোট প্রায় হাজার দুয়েক টাকা ব্যায় হয় আর দুপুরের খানা বাবাদ আরও হাজার খানেক ।

মূল বক্তব্য... বিস্তারিত হিসেব নিকেষ আর ব্যাখ্যা করবনা। কারন এই লেখা আসলে নিজের কথা বলার জন্য লেখা নয়। আমি এখানে একটা উদাহরণ মাত্র। আমি বিয়ে করি নাই ...ব্যাচেলার। ঢাকায় আমার মার সাথে থাকি এবং আমার স্বর্গীয় পিতাজান আমার মার নামে একখানা বাড়ী করে রেখে গেছেন।

তাই বাড়ী ভাড়ার চিন্তাও আমার করতে হয়না। সে কারনে একটু সুবিধা ভোগী সরকারী কর্মকর্তা আমি। কিন্তু রোগ বালাই সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারী হিসেব করে বাসা বাধেনা। বাড়তী খরচ চিকিৎসার আজকাল অনেক বেশী। বলতে পারেন, সরকারী খয়রাতি হাসপাতাল আছে তো কমপয়সায়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কেনো? এ প্রশ্নের উত্তর পাঠক মাত্রই অনেক ভাল জানার কথা।

এই যে বেতনের সাথে বাস্তবতার এক অসম পার্থক্য ... এটার একটা মহা প্রভাব মানুষের উপর ভর করে। পেটে যখন ক্ষুধা থাকে তখন মানুষ অনেক ন্যায় নীতি বিবেক কে চোখে ঝাপসা দেখে। ... এই করুন পরিস্থিতির স্বীকার একজন কর্মকর্তা কখনই কি মন থেকে স্বতস্বফুর্ত হতে পারে তার কাজে? অথবা সিস্টেমে সিস্টেমে যখন অনেক ফাঁক রয়েই গেছে, তখন এই করুন পে সিস্টেম কি হাতছানি দিয়ে ডাকবে না আগামী সময় সেই পুরাতন স্টাইলে দুর্নীতির অবাধ ডামাডোলে। বেতনের বিষয়টি সরকারী কর্মকর্তাদের চেয়ে কর্মচারীদের ক্ষেত্রে আরও অমানববিক এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়েই সরকারকে শাসন কার্য পরিচালনা করতে হয়, হবে; কিন্তু বেঁচে থাকার তাগিদে, সংসার চালানোর তাগিদে, বাড়তি দ্রব্যমূল্যর সাথে তাল সামলাতে , বাড়তি অনভিপ্রেত সব খরচ মেটাতে দূর্ণিতী যে তাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে, ডাকে বা ডাকবে।

আসন্ন নব সরকারের কাছে , বিশেষ করে শেখ হাসিনার কাছে এই ক্ষুদ্র ব্লগের মাধ্যমে আমার আকুল আবেদন... ...এ বিষয়টি আমলে না নিলে সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা আসলেই কি দেখতে পাব বাস্তবতায়। মনে রাখতে হবে, সরকার আসে সরকার যায় , কিন্ত সরকারী সরকারী চাকুরীজীবীরা কিন্তু রয়েই যায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.