আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ত্রিশটি একশো টাকার নোট



ত্রিশটি একশো টাকার নোট এজি মাহমুদ অনেকদিন থেকেই কোন নির্দিষ্ট কাজ হাতে ছিল না। এটা ওটা করেই চলছিলাম মাস চারেক। একদিন ভার্সিটিতে এক সাংবাদিক বন্ধুর সাথে দেখা। ও প্রথম আলোতে কাজ করে। আমাকে দেখে জানতে চাইলো ইদানিং কিছু করছি কিনা।

তেমন কোন কাজ নেই জানতে পেরে ও আমাকে বললো একটা নতুন পত্রিকায় কাজ করবো কিনা ? আমি ওকে বললাম, কি পত্রিকা? ও আমাকে জানালো, টাইমস ম্যাগাজিনের মত একটা ম্যাগাজিন বের হবে। ওখানেই আমাকে কাজ করতে হবে। বেতন চার হাজার টাকা। আমি রাজি হয়ে গেলাম। কিছুদিন পর এক বিকালে হল বসে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারছি।

এসময় সেই সাংবদিক বন্ধুর ফোন। ও আমাকে বললো ছয়টার মধ্যে আমাকে বাংলামটর থাকতে হবে। তখন ঘড়িতে বাজে প্রায় পাচঁটা। জাহাঙ্গীরনগর থেকে আসতে গেলে হাইওয়েতে কোন ঝামেলা নেই। কিন্তু ঢাকায় ঢোকার পর থেকে যে জ্যাম শুরু হয় তাতে সময় মত পৌছাতে পারবো কিনা সন্দেহ।

তারপরেও ছুট লাগালাম, কারন আমার জীবনটাই ছোটাছুটির। ছয়টা দশে পৌছে গেলাম বাংলামটর। ওখানে আমার আরো দুই বন্ধু রণক আর রাশেদ অপো করছিল। ওদেরও আমার সাথেই জয়েন করার কথা। ফোন দিয়ে চলে গেলাম অফিসে।

অফিসে গিয়ে দেখি লোডশেডিং। মোম জ্বালিয়েই আমাদের ইন্টারভিউ নেয়া শুরু হয়ে গেল। শুরুতেই জানতে চাওয়া হলো আমাদের পরিচয় কিভাবে ? বললাম, একেতো আমরা ইয়ারমেট। দৈনিক যুগান্তরে কাজ করতে গিয়ে বছর চারেক আগে রণকের সাথে আমার পরিচয়। আর নয়া দিগন্তে কাজ করতে গিয়ে রাশেদের সাথে।

আবার রণক আর রাশেদ দুজনেই নটরডেমিয়ান। ওরাতো আরো আগে থেকেই ফ্রেন্ড। যাই হোক, আমাদের সাথে আরো কিছু কথা বলার পর নভেম্বর থেকেই আমাদের জয়েন করতে বলা হলো। পত্রিকার নাম সাপ্তাহিক কাগজ। পত্রিকার যে দুজন আমাদের ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন তাদের একজন প্রথম আলোর ঢাকায় থাকি ফিচার পাতার দায়িত্বে আছেন।

আরেকজন খালেদ মুহিউদ্দীন, পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। যিনি দীর্ঘদিন প্রথম আলোতে কাজ করেছেন। কিছুদিন আগেও ওয়ারিদ টেলিকমে চাকরি করতেন। এখন ওয়ারিদ ছেড়ে দিয়ে সাংবাদিকতায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আমাদের বেতনের কথা বললেন তিন হাজার টাকা।

এই অ্যামাউন্ট শুনেই রণক টেবিলের নিচ দিয়ে আমার পায়ে গুঁতো মারলো। ইন্টারভিউতে আমরা কোন কিছু বললাম না। কারন আমরা কত আশা করি সেটা উনি জানতে চাননি। নিজে যেটা ঠিক করেছেন সেটাই আমাদের বলেছেন। ইন্টারভিউ শেষে রণক আমাদের সেই ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে জানতে চাইলো, কিরে মামা, স্যালারি এত কম বলে ক্যান ? ফ্রেন্ড খানিক পরেই নিশ্চিত করলো, সমস্যা নাই, তোরা জয়েন কর।

আমি কথা বলছি, স্যালারি ফোর থাউজেন্ট ফিক্সড। আমরা নভেম্বরের প্রথম দিন থেকেই অফিসে কাজ শুরু করে দিলাম। রাশেদ একটু পাগলাটে গোছের। মন যা চায় তার বহিরে কিছু করে না। চাকরিতে জয়েন করার তিন দিনের মাথায় চাকরি ছেড়ে দিল রাশেদ।

ও আগে থেকেই সাপ্তাহিকে কাজ করতো। কিন্তু খালেদ মুহিউদ্দীন রাশেদকে সাপ্তাহিক ছেড়ে দিতে বললেন। কিন্তু কি মনে করে রাশেদ ঠিক করলো ও সাপ্তাহিক ছাড়বে না। রয়ে গেলাম আমি আর রণক। এরপর রণক জয়েন করার পনেরো দিনের মাথায় অফিসে ঝগড়া করে চাকরি ছেড়ে দিল।

আমি অবশ্য হাল ছাড়িনি। কারন আমার টাকার দরকার। কিন্তু পরবর্তী মাসের ৪ তারিখ যখন খালেদ মুহিউদ্দীন আমাকে ত্রিশটা একশো টাকার নোট ধরিয়ে দিলেন তখন অবশ্য দুর্বল কন্ঠে খানিকটা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু উনি নাকি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হলো।

কাউকে কিছুই বললাম না, কারন টাকাটা আমার দরকার। নিজেকে মনে মনে গালি দিলাম আমি। আমার লাইফের তিন বছর আগের প্রথম চাকরিটা আমি শুরু করেছিলাম সাড়ে তিন হাজার টাকা স্যালারিতে। কিন্তু আজ এতদিন পর....কিন্তু তারপরেও...কারন টাকাটা আমার দরকার। কিন্তু সাপ্তাহিক কাগজের প্রথম সংখ্যা বের হবার তিন দিন আগে চাকরিটা চলে গেল আমার।

জনাব খালেদ মুহিউদ্দীন সাহেব আমার বিরুদ্ধে যেসব কারন সমূহ দায়ের করেছেন সেগুলো হল ঃ ১. তোমার ম্যচিউরিটি কম। যখন ম্যচিউরিটি বাড়বে তখন তুমি আমার সাথে যোগাযোগ করবে। মন্তব্য ঃ লাইফে আমার ব্যপারে প্রথম কেউ এই মন্তব্য করলো। ২. তুমি ঈদে ১০ দিন ছুটি কাটিয়েছো। মন্তব্য ঃ আসলে ছুটি কাটিয়েছি ৫ দিন ।

কিন্তু খালেদ সাহেবকে এটা বলা যাবে না। তাহলে উনি আমাকে বেয়াদব বলতে পারেন। ৩. কোন কাজে লেগে থাকার মত মনোযোগ তোমার মধ্যে আমি দেখি না। মন্তব্য ঃ মনোযোগ কি দেখার জিনিস ? আমার মনোযোগ আপনি দেখবেন কি করে ? ৪. তুমি অফিসে সপ্তাহে ছয় দিন+ছয় ঘন্টা কাজ করবে না-এ কথা সবার সামনে বলে ভীষণ বেয়াদবি করেছো। মন্তব্য ঃ আসল বেয়াদিবটা হল বেতন হিসাবে আপনার দেয়া টাকার পরিমাণের, আমার নয়।

যাই হোক উনি অনেক বড় মাপের মানুষ (দেখতেও বেশ বড়সড়)। কিন্তু মনটা কেন যেন আমার কাছে খুব বেশী বড় মনে হয়নি। অফিসিয়াল পিসিগুলোতে ফেসবুক/ইয়াহু মেসেঞ্জার ইউজ করা যাবে না। ভালো কম্পিউটারগুলোতে আমাদের বসা নিষিদ্ধ। বাজে পুরোনো আমলের পেন্টিয়াম হাফ টাইপ কম্পিউটারে আমাদের কাজ করতে হবে।

যে কারনে কাজ করতে দেরি হলে আবার জবাবদিহীও করতে হবে। অফিসের কাজ ছাড়া কম্পিউটার টাচ্ পর্যন্ত করা যাবে না। আমার হাতে কাজ না থাকলে যদি লেখালেখি করি বা কোন ওয়েবসাইটে ঢুকি সে ব্যাপারেও হাজারটা প্রশ্ন আর তীর্যক মন্তব্য করতেন। অন্য কেউ হলে আমি ছেড়ে কথা বলতাম না। কিন্তু আমি তাকে কখোনই কিছু বলিনি...কারন টাকাটা আমার তখনো দরকার ছিল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।