আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গনতন্ত্রের বিবর্তন

আমি একজন বহিরাগত

গনতন্ত্রের শুরু যেখানেই হোক, শুরুটা ছিলো - জনগনের জন্যে, জনগনের এবং জনগনের দ্বারা। হয়ত রাজতন্ত্রের লাগাম টানতে গিয়েই গনতন্ত্রের শুরু হয়েছিলো। রাজতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী যোগ্যতা থাকুক বা নাই থাকুক, রাজার ছেলের হাতেই থাকে প্রজাসাধারনের জীবনযাত্রার কলকাঠি। সেক্ষেত্রে বাউন্ডুলে রাজপুত্রের পাল্লায় পড়ে ভাগ্য বিড়ম্বিত জনগনের ভোগান্তির শেষ থাকে না। বিকল্পধারায় (বি চৌধুরীর বিধারা-র কথা বলছিনা) জনগন নিজেই দ্বায়িত্ব নেয় জনপ্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত কারার।

যত সহজে বলে ফেল্লাম, তত সহজে অবশ্যই মানবসভ্যতার ইতিহাসে গনতন্ত্র উত্তরনের পথে যাত্রা শুরু হয়নি। যাইহোক, গনতন্ত্রের এই ধারায় জনপ্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত হয় জনগনের পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে। গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনপ্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি যে বিবর্তন দেখছি সেটা বলার জন্যই এই লেখা। সন্দেহ নেই যে জনপ্রতিনিধিত্ব একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ব্যর্থতার দায়ভার গ্রহন করে যুগে যুগে নানা দেশে অনেকেই জনপ্রতিনিধিত্বের পদ থেকে হাসিমুখে বা বিষন্নচিত্তে পদত্যাগ করেছেন।

অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এমন একটা উদহারন হচ্ছে, ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা। এর ব্যতিক্রম ও অবশ্যই ঘটতে দেখা যায়। কারন, অনেকেই আবার ব্যর্থতার দায়ভার খুব সহযে মেনে নিতে চাননা। বরং অন্যের ঘাড়ে দোষ দিয়ে স্বপদে বহাল থাকার নানা রকম ফন্দি-ফিকির করেন। যাহোক, একজন জনপ্রতিনিধিকে হতে হয় সত, নীতিবান, বিশ্বাসী, নির্ভরযোগ্য, সাহসী, বিচক্ষন এবং আরো অনেক গুণে গুণাণ্বিত।

সেইসাথে তাদের হতে হয় নানারকম দোষত্রুটি মুক্ত যেমন, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি, তহবিল তসরুপ এবং নারী/পুরুষ ঘটিত কেলেন্কারী ইত্যাদি। সুতরাং জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনগনকে সচেতন থাকতে হয়, যেন ভুল না করে কোন সাহসী চোর-ডাকাত বা বিচক্ষন খুনীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে ফেলে। লেখার পরবর্তী অংশে জনপ্রতিনিধি শব্দটির পরিবর্তে আমি নেতা/নেত্রী শব্দদুটি ব্যবহার করব। কারনটা একটু লম্বা চওড়া এবং মূল বিষয়বস্তুর সাথে ততটা সম্পৃক্ত না। তবুও বলা যেতে পারে।

আমি যা বুঝি তাতে একটি দেশের জনপ্রতিনিধি হচ্ছেন তিনি, যিনি ধর্ম, গোত্র, দল নির্বিশেষে আপামর জনগনের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন। কিন্তু বর্তমান গনতন্ত্রের ধারায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগন রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও মূলত নিজের দলের স্বার্থকেই দেশের স্বার্থ হিসেবে মনে করেন। বাস্তবক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে শতকরা মাত্র ত্রিশ ভাগ বা তারও কম সমর্থন নিয়ে কেউ একজন বা কোন দল রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেতে পারেন, তখন সেই ব্যক্তি বা দল হয়ে যায় দেশ বা রাষ্ট্রের মুখপাত্র। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে ব্যক্তি বা দলের থেকে দেশের প্রাধান্য পাওয়ার কথা থাকলেও দেশ হয়ে যায় ব্যক্তি বা দলের ইচ্ছাধীন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গনতন্ত্রের পাওয়ার হাউস বা সংসদ থেকে বিরোধীদলের সদস্যদেরেক ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছার কাছে পরাজিত হয়ে সংসদ ত্যাগ করতে হয়েছে - এমন ঘটনা ঘটেছে বহুবার।

এমন ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি বা দলীয় প্রধান যিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দ্বায়িত্বে নিয়োযিত থাকেন তাকে জনপ্রতিনিধি না বলে দলের নেতা/নেত্রী বলাটাই উপযুক্ত হতে পারে। এবার মূল বিষয়বস্তুতে ফিরে আসা যাক - গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবর্তন। একটা সময় ছিলো যখন আইনের চোখে কোন অপরাধী বা শাস্তিপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি নেতা হওয়ার স্বপ্ন ও দেখতে পারত না। তখন একাধিক প্রার্থীর মাঝে কে অপেক্ষাকৃত ভালো তাই নিয়ে ছিলে মানুষের ভাবনা। কারন প্রর্থীদের মাঝে এমন কেউ থাকতো না যার কোন বদনাম আছে।

তাই বলে ফেরেশতা-আদমী প্রার্থী খুঁজে পাওয়া কি এত সহয? তাছাড়া ক্ষমতার লোভে প্রার্থীদের ভিড়ে অপরাধী, শাস্তিপ্রাপ্ত বা বদনামওলারা ও জুটতে শুরু করল। বলাই বাহুল্য ক্ষমতার দাপটে এদের সাথে ভালো মানুষদের পেরে উঠার কথা না। অগত্যা নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনগনকে ভাবতে হলো ভালো-মন্দের দাড়িপাল্লায় কোন প্রার্থীর ভালোর পাল্লা মন্দের তুলনায় বেশী ভারী। বিবর্তনের পালা এখানেই থেমে থাকে নাই। একপর্যায়ে প্রার্থীদের মাঝে ভালোর তুলনায় মন্দ লোকের সংখা বাড়তে থাকলো।

আমাকে আপনারা ভুল বুঝবেন না। এটা আমার মনগড়া কোন মন্তব্য না। দেশে-বিদেশে অনুষ্ঠিত(ব্য) সাম্প্রতিক কালের নির্বাচনী প্রচারনার ভিত্তিতেই এমন কথা বলার দূ:সাহস আমার হচ্ছে। এসব নির্বাচনী প্রচারনায় খুব সহযেই চোখে পরে যে, এক দলের নেতা-নেত্রীগন কীভাবে অন্যদলের নেতা-নেত্রীগনের কুকীর্তির গল্প বলে বেড়াচ্ছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হবে, কে কত বড় অপরাধী ছিলেন যেন তারই প্রতিযোগিতা হচ্ছে।

আমার মত ভাগ্য বিড়ম্বিত জনগন তখন ভাবতে থাকে কোন প্রার্থী কত কম অপরাধী। বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অবশ্য এবার নতুন ধারা শুরু হচ্ছে। জনগন চাইলে বড় বা ছোট যেকোন অপরাধীকেই 'না' বলার সুযোগ পাবে। শুনেছি ব্যলট পেপারে না বলার মত সুযোগ থাকবে। তবে এতে যে শেষ রক্ষা হবে সেকথা খুব সহজে বলা যায় না।

কারন বর্তমান গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একবার নেতা নির্বাচিত হতে পারলে জুতার চাপড় না খাওয়া পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব। অথবা কোন অনাংখিত নেতাকে ক্ষমতাচূ্ত করার জন্য জনগনকে আশ্রয় নিতে হয় নানা কৌশল যেমন, মাসব্যপী লাগাতর ধর্মঘট বা আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর ঘেরাও করা। প্রসঙ্গক্রমে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এক দলের নেতা-নেত্রীগন যোভাবে অন্যদলের নেতা-নেত্রীগনের অপরাধ বা কুকীর্তির গল্প বলে বেড়াচ্ছেন তা দেখে প্রশ্ন উঠতে পারে, দুবছর আগে তত্বাবধায়ক সরকার ঐসব নেতা-নেত্রীগনকে যেভাবে দূর্নীতির দায়ে দ্বায়ী করেছিলেন তাতে কি বড় কোন ভুল ছিল ? সবশেষে বলা যায়, সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে গনতন্ত্রের বিবর্তনের পালায় লাগা হাওয়া ক্রমশ: ভারী হয়ে উঠেছে। তানাহলে গনতন্ত্র সমুন্নত রাখার স্বার্থে নেতা-নেত্রীরা একে অপরকে কালো টাকার মালিক, গ্যাস পাচারকারী ইত্যাদি নানা দোষে দোষী করার অধিকার রাখলেও অন্য কেউ সে কথা বললে গনতান্ত্রিক অধিকার খর্ব হয় বটে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.