আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জিততেই হবে: হারলে চলবে না

তোমার অস্তিত্বে সন্দিহান, তবু্ও সদাই তোমায় খুঁজি

দেশে সুশীলের অভাব নেই। পত্রিকার পাতা ওল্টালে সুশীল। টিভির চ্যানেল ঘুরালে সুশীল। সভা, সেমিনারে গেলে সুশীল। সবখানেই সুশীল।

এই সমস্ত সুশীলদের একটা কমন বৈশিষ্ট আছে। এদের ভাষায় চাকচিক্য আছে, তবে সঠিক কোন নির্দেশনা নেই। এদের সমস্যা তুলে ধরার ক্ষমতা আছে। কিন্তু সমাধান দেয়ার কোন পন্থা জানা নেই। এদের আরেকটা কমন বৈশিষ্ট হচ্ছে এরা হঠাৎ করে উদয় হয় আবার প্রয়োজনের সময়ে উদাও হয়।

অর্থাৎ সময়ে সরব, অসময়ের নীরব। সুশীল হওয়ার বিভিন্ন তরিকা আছে। সুশীলের বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ আছে। জাত পরিমাপকও আছে। তবে যে কাজটা করলে তাড়াতাড়ি সুশীল হওয়া যায় তা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করা।

দেশের তথাকথিত সুশীলরা জাতের ওঠার জন্য আওয়ামী লীগকেই বেছে নেয়। আওয়ামী লীগের কে দূর্নীতি করল, আওয়ামী লীগ কখন স্বৈরাচারের সাথে হাত মিলালো তা তুলে ধরতে এরা ওস্তাদ। মনে হয় আওয়ামী লীগকে ধোলাই করতে হলে, দেশ থেকে আওয়ামী লীগ বিদায় হলেই দেশের অপার সম্ভাবনার দোয়ার খুলে যাবে। অথচ এই সমস্ত সুশীলরাই জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে নীরব। তাদের বিচারের ব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।

একুশে আগস্টের গ্রেনেড নিক্ষেপের মাধ্যমে জাতির জনকের কন্যাকে হত্যা প্রচেষ্টা, রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণ কিংবা যশোহরের উদীচির সমাবেশে বোমা হামলার বিষয়ে তারা কেবারেই উদাসীন। সবচেয়ে বড় কথা যখন লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার পতাকা ঘাতকের গাড়িতে শোভা পায় তখনও তাদের কষ্ট হয়না। বরং পুরাতন ইতিহাস ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আওয়ামী লীগের ব্যাপারে অনেক সমালোচনা থাকতেই পারে। বলা হচ্ছে আওয়ামী স্বৈরাচারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।

ঢাকার একটি সুশীল পত্রিকা এ বিষয়ে অনেক সরব। তাদের কথায় মনে হয় বিএনপি রাজাকারদের নিয়ে জোট করলে, ক্ষমতায় আসলেও কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আওয়ামী স্বৈরাচারের সাথে হাত মিলিয়ে যেন অনেক দোষ করে ফেলেছে। দেশের বারোটা বাজিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি ভোটের রাজনীতি আর আদর্শের রাজনীতি এক নয়।

স্বৈরাচারের সাথে হাত মিলালেই যে তার কর্মকান্ডের বাস্তবায়ন আওয়ামী লীগ করবে তার কোন বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তি নেই। সে কারণে তথাকথিত স্বৈরাচারের সাথে হাত ২০০১ সালেই হাত মিলানো উচিত ছিল। তখন এই জোট গঠিত হলে ঘাতকের গাড়িতে শহীদের রক্তের পতাকা ওড়তোনা। বলা হয়ে থাকে, আওয়ামী লীগ জিতলে সে শুধু একা জিতে। কিন্তু হারলে পুরো মুক্তিযুদ্ধের শক্তি পরাজিত হয়।

কথাটা কি সত্য নয়? গত সাত বৎসরে আপনারা কি এটা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারেননি? দেশের সর্বত্র রাজাকারদের পুনর্বাসন, সরকারি চাকরিতে রাজকার গোষ্ঠীর নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজাকার শিক্ষকরা কি ঝেকে বসেনি?উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কি সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি? তারা কি বিচারালয় কিংবা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেনি?যারা আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন তারা কি এই বিষয়গুলো ভেবে দেখেছেন? তারা কি ভেবেছেন আবার যদি বিএনপি-রাজাকার জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে এই দেশটির কি অবস্থা হবে? তারা কি আবার তাদের এই অসমাপ্ত হিংস্র কাজগুলো সম্পাদনে ব্রতী হবেনা? বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির জনকের রক্তের স্রোত বুকে ধারণ করা একটি সদা বহমান ধারা। যে মানুষটি কোনদিন পাকিস্তানী শাসকদের সাথে আপোষ করেনি তার দল। যিনি ফাসির মঞ্চে দাড়িয়ে বলেছিলেন, 'বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ' তার দল। সময়ের পরিবর্তনে, যুগের কারণে সেই মহান নেতার আওয়ামী লীগে হয়তো কিছু ময়লা জমেছে। তারপরেও সকল সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সাথে আপোষ করবেনা, মৌলবাদীদের আস্করা দিবেনা, সংখ্যলঘুদের নির্যাতন করবেনা, এ বিশ্বাস আমার আছে।

সত্তরের নির্বাচনের মতো আসন্ন নির্বাচনেরও গুরুত্ত অশেষ। আমরা একটি ক্রান্তিকালে দাড়িয়ে আছি। সত্তরের নির্বাচনের আওয়ামী লীগের বিজয়ের ফলশ্রুতিতে আমরা একটি দেশ পেয়েছিলাম। সে নির্বাচনে আওয়ামী পরাজিত হলে আমরা বাঙ্গালীরা কখনই মাথা উচু করে দাড়াতে পারতাম না। একটা স্বাধীন ভূখন্ড পেতাম না।

আসন্ন নির্বাচনও সত্তরের নির্বাচনের মতো গুরুত্ববহ। এই নির্বাচনে বিএনপি-রাজাকার জোট জয়ী হলে আমাদের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ কোনদিনও প্রতিষ্ঠিত হবেনা। বরং বিএনপি-রাজাকার জোট এটিকে আরেকটি পাকিস্তানে পরিনত করবে। কাজেই সকল ভেদাভেদ ভুলে স্বাধীনতার স্বপক্ষ্যের শক্তির পক্ষে রায় দিন। এ নির্বাচনে আমাদের জিততেই হবে।

হারলে চলবেনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.