আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিঙ্গাপুরে বাঙ্গালিদের করুণ অবস্থা...পত্রিকা প্রতিবেদন

কবিতা পড়তে ভালবাসি............।

এশিয়ার ছোট্ট কিন্তু ধনীদেশ সিঙ্গাপুরে প্রায় একলক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত। সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব এখানেও পড়েছে। কিন্তু উদাসিন বাংলাদেশ দুতাবাস। অন্যান্য দেশের শ্রমিকেরা কর্মহীন হলেও তাদের দুতাবাস কোম্পানীর কাছ থেকে যেভাবেই হোক পাওনা আদায় করে নেয়।

কিন্তু বাংলাদেশ দুতাবাস থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা এমন কোনো সাহায্যই পাননা। আজকের দৈনিক টুডে পত্রিকায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের দুরবস্থার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। সেটা অনুবাদ করে দিলাম। http://www.todayonline.com/articles/293789.asp -------------------------------------------------------------------- গত তিন দিন যাবৎ আঠারো জন বাঙ্গালি শ্রমিক রাস্তার পাশের ঘাসের লেনে কাঠের তক্তার উপর ঘুমাচ্ছে। স্থানীয় দয়ালু অধিবাসীদের দেওয়া যৎসামান্য সাহায্য বাদে তাদের আর কোনো খাদ্য ও পানীয় নেই।

বিগত কয়েকদিনে এই আঠারোজনের অবস্থা সেই ১৭৯ জন বাঙ্গালি শ্রমিকের চেয়েও খারাপ হয়েছে যারা গত সপ্তাহে নিগৃহীত হয়েছিলো। গত শুক্রবার থেকে এই আঠারোজন শ্রমিক জালান কাইয়ু এবং লোরং সামাক সড়কদ্ব্য়ের সংযোগস্থলে অবস্থান করছে। এদের নিয়োগদাতা গত কয়েকমাস যাবৎ তুয়াসে অবস্থিত তাদের আবাসস্থলের ভাড়া না মিটানোয় সেই বাড়ির মালিক গত শুক্রবার তাদেরকে বাসা থেকে বের করে দেয়। এই আঠারোজন বাঙ্গালি দাবি করছে যে গত ২-৪ মাস যাবৎ তারা কোনো মজুরী পাচ্ছে না। তারা আরো উল্লেখ করে যে, তাদের মালিক তাদেরকে জালান কাইয়ুর একটি পিজা শপের উপরে একটি বাসায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

কিন্তু সেটাতে কোনো খালি যায়গা ছিলোনা। সুতরাং পরের তিনদিন ধরে তারা এইভাবে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। শ্রমিক দলটির মুখপাত্র মোঃ মনিরুল ইসলাম মিন্টো বলেন, “এর মধ্য একদিন খুব ভোরে বৃষ্টি হয়েছিলো। তখন আমরা রাস্তার ওই পারে দোকাঙ্গুলোর সারির ভেতরে কড়িবারান্দায় গিয়ে ঘুমাই। ” কিছু স্থানীয় অধিবাসী এবং দোকান মালিকেরা তাদের সাধ্যমত ক্ষুদ্র সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

পিজা শপ স্পিৎজার মালিক জনাব মিডো সিসিক বলেন, “ আমি তাদেরকে তিনটি পিজা দিয়েছি। এতটুকু করাই আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো। তাদের মালিকের উচিত অতিদ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। “ নিকটস্থ পানীয় দোকান সুরিয়া মার্টের মালিক জনাব এম সুরিয়া বলেন,” তাদের কে এইখানে বসে থাকতে দেখে খুবই খারাপ লাগে। ” কিছু দোকানদার শ্রমিকদেরকে তাদের টয়লেট, বাথ্ রুম ব্যবহার করতে দিচ্ছেন।

সেখান থেকেই শ্রমিকেরা তাদের প্রয়োজনীয় খাবার পানি সংগ্রহ করছে। এই শ্রমিকদের নিয়োগদাতা কোম্পানি হচ্ছে জেরিকো মেরিন সার্ভিসেস এবং যে এম বিল্ডিং কন্ট্রাকটরস। শ্রমিকদের মধ্যে কেউ এক বছর, কেউ সাত্ মাস ধরে সিঙ্গাপুরে আছেন। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে তারা কেউই পুরো সময় কাজ পাননি, আর কাজ পেলেও সঠিক ভাবে বেতন পাননি। গত তিনদিন যাবৎ তাদের দুই বসের একজ়ন মার্ক নামের ভদ্রলোকের সাথে ফোনে তাদের যোগাযোগ হচ্ছে।

অপর বসের নাম যোসেফ। শ্রমিকেরা বলছে যে মার্ক তাদের কাছে গত তিনদিন ধরে কথা দিচ্ছে যে তাদের কে অন্য বাসায় নিয়ে যাওয়ের জন্য লরি পাঠাবে। কিন্তু সেই লরি এখনো আসেনি। গত রাতে তারা মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যানিটেরিয়ান অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন ওয়ার্কার্স এর নির্বাহী পরিচালক মিঃ জোলোভান হুয়ামের সাথে যোগাযোগ করে তাদের দুঃখের কাহিনী জানায়। মিঃ হুয়ামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,” সত্যি বলতে কি তারা গত সেপ্টেম্বর মাসেও আমার কাছে অভিযোগ করেছিলো যে তাদেরকে ঠিকভাবে মজুরী দেওয়া হচ্ছে না, এবং তাদেরকে সবসময় কাজও দেয়া হচ্ছে না।

তারপর তাদের আমি তাদের কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানায় যে শ্রমিকদের কাজ দেয়া হয়েছে, তখন আমি ভাবি যে ব্যাপারটি সমাধান হয়ে গেছে। ” গতকাল রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত তিনি তাদের জন্য বাসার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তখন পর্যন্ত কোনো বাসা পাওয়া যায়নি। হতভাগ্য আঠারোজন শ্রমিক জানায় যে তারা আজ সিঙ্গাপুর শ্রম মন্ত্রণালয়ে সাহায্য চাইবে। ইতিমধ্যে তাদের চারজনের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

কিন্তু তারা প্রাপ্য আদায় না করে সিঙ্গাপুর ছাড়তে নারাজ। তারা আরো জানায় তাদের সবার পাসপোর্ট মার্কের কাছে আটকা। অনুসন্ধানে জানা যায় যে এই দুটি কোম্পানি গত ২১শে নভেম্বর মোঃ মগবুল আহমেদ এর কাছে বিক্রি করে দেন আগের মালিক। মোঃ মগবুলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মিঃ হুয়াম এবং অন্যান্য মানবাধিকার কর্মীরা আশংকা প্রকাশ করছেন যে, অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা ঘনীভুত হওয়ার সাথে সাথে আরো অনেক শ্রমিক এই ধরনের মজুরী প্রতারণা এবং নিগ্রহের শিকার হতে পারেন।

মিঃ হুয়াম আরো জানান যে কোনো কোম্পানি দেউলিয়া হলে তাদের কাছ থেকে শ্রমিকদের পাওনা আদায়ের কোনো উপায় নেই। এমনকি তাদেরকে চাপ দিয়েও কিছুই আদায় করা যায়না যদি তারা দেউলিয়া হয়। এখন একমাত্র উপায় যদি শ্রম মন্ত্রণালয় দয়া করে এই শ্রমিকদের জন্য তাদের মালিকদের কাছ হতে পাওয়া লেভী থেকে কিছু অর্থ সমন্ব্য় করে। গত সপ্তাহে নিগ্রহের শিকার ১৭৯জন বাঙ্গালি শ্রমিককে তাদের নিয়োগকারী কোম্পানি ইতোমধ্যে নতুন আবাসস্থানে নিয়ে গেছে। তারা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধেরও আশ্বাস দিয়েছে যদিও নতুন বাসায় তারা এখন পর্যন্ত বিদ্যুত সংযোগ পায়নি এবং কার্যতই তাদের কোনো খাবার সরবরাহ নেই।

------------------------------------------------------------------- এখানে বাংলাদেশ দুতাবাসের যে কেরানি তার বাসাভাড়া প্রায় একলক্ষ টাকা। সেইখানে সে এক রুমে থেকে বাকি রুম ভাড়া দিয়ে আয় করে প্রচুর টাকা। অথচ সেই বাসার ভাড়া দেয় বাংলাদেশ সরকার। পরবর্তীতে দুতাবাসের বাকিদের নিয়েও একটা লিখা দেওয়ার ইচ্ছা আছে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।