আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুনশ্চঃ- আমাদের আবেগ কিছু শিশ্নবিহীন ,কামাবেগহীন মানুষ চায়-

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

সুযোগ পেলেই কাউকে উপাস্য বানিয়ে ফেলবার প্রাগৈতিহাসিক বদভ্যাসটি ত্যাগ করা বোধ হয় বাঙ্গালীদের পক্ষে সম্ভব হবে না। আমরা খুব সহজেই একজনকে উপাস্য বানিয়ে ফেলি, তার পতনে আহত হই, রক্তাক্ত হই, বিচলিত হই, বিক্ষুব্ধ হই । যাকে এক দিন মাথায় তুলে নাচি, পরের দিন তাকেই মাটিতে নামিয়ে পদদলিত করবার বদভ্যাসটিও আমাদের মজ্জাগত পাপ। সুতরাং আমাদের ইশ্বর প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হতে থাকে। আমরা যার আদর্শে বিশ্বাস করে একদিন লড়াইয়ে নামি, ঠিক পরের দিনই তার গৃহীত পদক্ষেপ পছন্দ না হলে সেই আদর্শ পদদলিত করে নতুন আদর্শ খুঁজি।

কথাগুল মাঝেমাঝেই মনে পড়ে, তবে আজ মনে পড়লো জাতেমাতাল আর আহসান হাবীব শিমুলের লেখা এবং সেখানের মন্তব্যগুলো পড়ে। পিয়ালকে আমি চিনি, সম্পর্কটা অনেকটা বন্ধুস্থানীয় বড়ভাইসূলভ, তার সাথে কিংবা প্রায় সব মানুষের সাথেই আমার ঘনিষ্ঠতার সীমা এতটা নয় যে আমরা যৌনতাসম্পর্কিত আলোচনা করবো। তার নিজস্ব ব্যক্তিগত জীবনে তার যৌনরুচি এবং তার নিজস্ব ব্যক্তিগত জীবনযাপন, তার শোবার ঘরের দরজার এই পাশে আমার বসবাস, বাঙ্গালী সমাজ চেতনার একটা অংশ অবশ্য ব্যক্তিগত জীবন যাপনের শোভনতার সীমাটা যে শোবার ঘরের দরজার বাইরে রেখে দিতে হয়, এই এটিকেটটুকুর প্রতি সম্মান জানাতে পারে না। অবশ্য এই শোভনতার সীমা অতিক্রমের বিষয়টা সামাজিক মানুষেরাঈ অবৈধ ভাবে নাক গলিয়ে করে তাও না, ব্যক্তিও এই বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার রাখতে পারে না। আমি অসস্তিবোধ করলেও মাঝে মাঝেই জীবনে এমন সময় এসেছে যখন মনে হয়েছে নিজের কানে যদি শব্দরোধী পর্দার ব্যবস্থা করা যেতো তবে ভালো হতো।

বুঝলি তোদের ভাবীকে গতকাল রাতে .............................. বর্ণনা কিংবা ভঙ্গিটা জানবার কোনো আগ্রহ আমার কখনই ছিলো না, তবে যখন আড্ডায় ঠিক এই বিষয়ক আলোচনা শুরু হয় তখন অন্য সব বিবাহিত এবং অবিবাহিত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষেরাও নিজের অভিজ্ঞতার বয়ান দিয়ে যায়। এবার ঈদেও আমার এক বন্ধু আমাকে গর্ব নিয়ে জানিয়েছে সে বাসর রাতে ৪ বার। এসব তথ্য উন্মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে কিছুটা বিড়ম্বনাও চলে আসে, যেই বর্ণনা শুনি, যার বর্ণনা শুনি, তার সাথে দেখা হয়ে যায় রাস্তায়। বন্ধুর সঙ্গমবর্ণনা এবং ভঙ্গি সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতার জন্যই আমি বন্ধুর বৌয়ের দিকে তাকাতে পারি না। বাংলাদেশে এমন পুরুষ আছে শত শত, আমি ৫ মিনিট, আমি ১০ মিনিট, আমি ১৫ মিনিট, আমার ম্যাক্সিমাম ২৭ মিনিট, শালার আমার একদিন বাজে অবস্থা হয়ে গেছে, দেলেয়ার দেওয়া কনডোম ছিলো, পুরা ৪৫ মিনিট, শেষে একরাশান ব্লু ফ্লিমের নায়িকার কথা কল্পনা কইরা ফেলাইলাম বৌয়ের গর্তে- এইসব আলোচনা উঠে গেলে বিব্রত হলেও আদতে পালিয়ে যাওয়ার পথ থাকে না।

কেউ নিজের যৌনলীলার বর্ননা দিচ্ছে শতমুখে, সেটা শুনে বিব্রত হওয়া একান্তই আমার নিজস্ব দুর্বলতা হয়তো। আমি এইসব বিষয়কে নিজস্ব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রাখতে চাই। আমি ন্যাংটা ছবি দেখি না, এমন না, আমি প্রচুর ন্যাংটা ছবি দেখি, তবে বেশীর ভাগই কোনো রকম যৌনউদ্দীপনা জাগাতে পারে না, হয়তো অধিকাংশ ছবিই ঠিক আমার নিজস্ব যৌনতার ধারণার সাথে যায় না কিংবা আমি নিজস্ব যৌনকল্পনায় যা ভাবি ছবিগুলো ঠিক সে চাহিদা পুরণ করতে পারে না। যৌবনজ্বালায় আমার নিজের একটা আইডি আছে, প্রবল উত্তসাহ নিয়ে করেছিলাম একদিন, তবে এতটা অভিজ্ঞতা ছিলো না যে নিজে খুঁজে কোথায় বড়দের জিনিষ লুকানো বের করে ফেলবো। যাই হোক অভিজ্ঞতা না থাকলেও যাওয়া যে হয় নি একদম সে কথা বলবো না।

যদি আমার ইন্টারনেত কানেকশন সাপোর্ট করে তবে আমি যাবো, বাস্তবতা হলো আমার পর্ণোবিহার সম্ভব হয় না বাইট সংক্রান্ত জটিলতায়। বখে যাওয়া সাহিত্যিক তসলিমার বয়ানে কিংবা নিজস্ব পরিচিত বয়ানে এইটুকু বুঝি, এইসব যৌনতাভিত্তিক আলাপনে মেয়েরাও পিছিয়ে নেই তেমন। তারাও টিকে থাকা কিংবা শীর্ষসুখ আর রাগমোচনের গল্প করে পরিচিত মহলে ঘনিষ্ট মেয়েদের সাথে, শরত বাবুর পবিত্র, শুচীতাসম্পন্ন, কোমল সুশীলা নারী হয়তো রয়েছে পৃথিবীতে, তবে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক শুদ্ধতাবাদের গল্পে মেয়েরা বিশুদ্ধ চরিত্র এমনটা আমার বিশ্বাস হয় না। তারা যে ন্যাংটা ছেলে দেখায় পিছিয়ে আছে এমনও না। পর্ণোসাইটকে একবাক্যে নারীর প্রতি সহিংসতার প্রকাশ বলে ভাবতে আমার প্রবল আপত্তি আছে।

পুরুষতান্ত্রিক হয়ে উঠবার কারণেই মেয়েদের এমন অধপতন, তারা আদতে এমন নয়, মূলত তারা শুদ্ধতাবাদী, পুরুষের কামনার সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে তারা ন্যাংটো হয়ে কামলীলায় মত্ত হয় বিষয় এমন সহজ সাধারণ নয় মোটেও। মানুষমাত্রই যে যৌনতার চাহিদায় ভুগে, মেয়েরাও এর ব্যতিক্রম নয়, তবে আমাদের সমাজে মেয়েদের সাথে এইসব আলোচনার চল নেই বলেই আমরা মেয়েদের রহস্যময় ভাবতে আগ্রহী, মেয়েদের অতিমাত্রায় সুশীলা শুদ্ধতাবাদী কল্পনার মোড়কে উপস্থাপন করতে আগ্রহী। তবে পিয়ালের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতার মাত্রা এমন নয় যে তার সাথে আমার এইসব নিয়ে আলোচনা চলে, হঠাত একদিন শুনলাম যৌবনজ্বালায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করছে, আমার প্রথম প্রশ্নটা ছিলো, পৃথিবীতে এত জায়গা থাকতে সেখানে কেনো? ইউজার বেস- যে যার নিজের মতো লড়াই করবে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী কোথা থেকে উত্থাপিত হলো এটা বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না। পিয়াল যা করেছে সেটা তার নিজের বিষয়, তবে এটা নিয়ে এত হাহাকার, এত পর্যালোচনার কোনো প্রয়োজন ছিলো না আদতে। করতামও না, নাস্তিকের ধর্মকথার একটি মন্তব্য পড়ে বিষয়টা নিয়ে পুনরায় জলঘোলা করতে হলো।

আহসান হাবীবের পোষ্টের মন্তব্যে তার বক্তব্য ছিলো জাতেমাতালের পোষ্ট পড়ে তার ভাবনা বদলেছে। সুতরাং জাতেমাতালের পোষ্ট পড়লাম, যতটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার প্রয়োজন ছিলো ততটা মনোযোগ দিতে পারি নি। পিয়াল যৌবনজ্বালায় আশ্রম নামে কি কি পোষ্ট দিয়েছে সেটা দেখার সময় কিংবা আগ্রহ আমার নেই। হিডেন ক্যাম ভিডিও বিষয়টা অনৈতিক, তবে পিয়ালকে আমি যতটুকু চিনি, হিডেন ক্যাম লাগিয়ে নিজের সঙ্গমলীলা প্রচারের কাজটা মেয়ের অগোচরে ও করবে না। পিয়াল সুফিবাদী এমনও না, পিয়াল শুদ্ধতাবাদী এমন ধারণাও দিতে চাইছি না আমি, আমার অভিমত পিয়ালের সাথে আমার যতটুকু যোগাযোগ তাতে আমার মনে হয় না পয়সা দিয়ে কোনো মেয়ের ছবি উঠিয়ে সেটা যৌবনজ্বালা এক্সক্লুসিভ করে দেওয়ার মতো মানসিকতার তাকে মনে হয় নি আমার।

অবশ্য আমার জানায় ভুলও থাকতে পারে। জাতেমাতালের পোষ্ট পড়ে মনে হলো পিয়াল এইসব মেয়েদের অগোচরেই এইসব ছবি তুলেছে। এবং এটা যদি পিয়াল করে থাকে তবে সেটা গর্হিত অপরাধ। পিয়াল কি পোষ্ট করছে ওখানে, সে ওখানের টপ রেটেদ বস কি না, এইসব নিয়া আমার বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা নাই। পিয়াল আমার ধর্মগুরুও না, চেতনার গুরুও না, তাকে আইডল ভাবি না আমি।

তাকে আমি সহযোদ্ধা ভাবি। তার লড়াইয়ের ময়দান এই মুহূর্তে আমার লড়াইয়ের ময়দান থেকে পৃথক তবে উপলক্ষ এবং উদ্যোগ এবং তার ডেডিকেশন নিয়ে আমার কোনো সংশয় নেই। পিয়াল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় বলে তাকে আমাদের সামাজিক অনুভুতি মেনে চলা আদর্শ মানুষ হয়ে উঠতে হবে এমনটা আমি দাবি করি না। সহযোদ্ধার কাছে প্রত্যাশা থাকে সে যেনো পিঠে ছুঁড়ি মেয়ে দল বদল না করে, পিয়ালের উপরে আমার সেই ভরসাটুকু আছে বলেই তার আপলোড করাও ভিডিও আর ছবিগুলোর নৈতিকতা নিয়ে কিংবা বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি না। এই বিষয়ের বাইরে একটা মানুষ আছে যে লড়াই করতে চাইছে, সাম্ভাব্য সকলকে সাথে নিয়েই লড়াই করতে চাইছে।

আমি হাত মারতে মারতে কোরানের আয়াত নিয়ে আলোচনা করতে পারি, তাতে আমার বিন্দুমাত্র গ্লানিবোধ জাগে না। আমি পর্ণো ছবি দেখতে দেখতেও বীরাঙ্গনার কষ্ট বুঝতে পারি, ন্যাংটা মেয়ে দেখে তাকে বীরাঙ্গনার সাথে গুলিয়ে ফেলি না, সব ন্যাংটা মেয়েকে আমার বীরাঙ্গনা মনে হয় না। তাতে যদি কারো মনে হয় আমার মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত আবেগগুলো নিয়ে তাদের সমস্যা আছে, তাদের কথা ভেবে বিব্রত হই না আমি। তবে এই ইস্যুতে সুশীলতাবাদী, পুরুষতান্ত্রিক শুদ্ধতাবাদের প্রলেপে আছড়ে পড়া মেয়ে এবং পুরুষদের হাহাকার দেখে আপন মনেই হাসি। ইতিহাসের কিছু কিছু অংশ সচেতন উপেক্ষা করে যেতে হয়, কামুক মুক্তিযোদ্ধা ছিলো না এমনও না, হঠাত হিরো হয়ে যাওয়া কোনো মুক্তিযোদ্ধা যৌবনের বশে কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে নি এমন বাস্তবতাও ছিলো না।

যাদের ধন দাঁড়াতো এবং যাদের চুদবার ইচ্ছা ছিলো সেইসব মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের অবসরে নিজের জৈবিক চাহিদা পুরণ করে যুদ্ধা করেছে, মুক্তিযোদ্ধামাত্রই শিশ্নবিহীন পবিত্র সত্ত্বা বিষয়ক ধারণা নিয়ে জীবনযাওন করা অর্বাচীনদের জন্য কিছু বলা মুশকিল। আমাদের শিশ্নবিহীন পবিত্রতাবোধ হয়তো ফেরেশতা তৈরি করতে পারে, কিন্তু বাস্তবের পৃথিবীতে যাদের বসবাস তাদের জৈবিক চাহিদা ছিলো এবং তারা এইসব জৈবিকচাহিদা সমেত বিশুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাই ছিলো। মুক্তিযুদ্ধ প্রেমিকেরা যেমন হাহাকার শুরু করেছে তাতে আমি কিঞচিত বিরক্ত বলা যায়। শালার বাংলাদেশে আমার পরিচিত মহলে এমন পুরুষ মেয়ের সংখ্যা কম নেই যারা ঘনিষ্ট আড্ডায় নিজের সঙ্গমের আসন এবং সঙ্গমকালীন উচচারন ও অনুভুতি প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করে। এইসব মানুষেরাই উতসাহ পাওয়ার আশায় নিজের ভিডিও আপলোড করে দিতে পারে।

আমার জানা একটা ঘটনা এমন আছে, একটু বয়স্ক এক মানুষ ছুকড়ির প্রেমে মজেছে, সম্পর্কে যাই হোক না কেনো, তার এই হোমমেড ভিডিও ডিজিট্যালি কনভার্ট করবার জন্য সে দিয়েছে পাড়ার দোকানে। সেটা সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা শহরে। অনভিপ্রেত তবে বিষয়টা বাস্তব, তেমনই বাস্তব রোকেয়া হলের বাথরুমে হিডেন ক্যাম লাগিয়ে গোসলের ভিডিও ধারণের চেষ্টা- অবশ্য এই কাজটা করেছে সেখানকার কতিপয় ছাত্রী। সুতরাং পুরুষই একমাত্র অপরাধী এমন না, প্রলোভন থাকলে অনেকেই এই কাজ করতে আগ্রহী। তথাকথিত শুদ্ধতাবাদীদের পুরুষতান্ত্রিকতা নিয়ে তেমন কিছু বলবার নেই, সামাজিকবোধগুলোই পুরুষতান্ত্রিক এবং পুরুষতান্ত্রিক অধিকারবোধগুলোকে সর্বদা তোষণ করে চলে।

সুতরাং যখন কেউ বলে আমি এই মঞচকে আদর্শ মঞচ মনে করি না, তখন সেটাকে মেনে নিতে সমস্যা হয় না আমার। প্রত্যেকের নিজস্ব পছন্দের লড়াইয়ের মাঠ আছে। কিন্তু যখন কেউ বলে পিয়ালের কাজে মুক্তিযুদ্ধের আবেগ অপবিত্র হয়েছে তখন ঠা ঠা হাসতে ইচ্ছা করে আমার।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।