আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামাতী পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামের ইতিহাস চর্চা ও একজন উদীয়মান বুদ্ধিজীবির কাকতাল!

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের একটা বিষাদময় দিন। এই দিনে জাতি হারিয়েছে তার মেধাবী সন্তানদের। হত্যাকারী ছিলো পাকিস্তানী বাহিনী আর তাদের দোসর আলবদর বাহিনী। আজ সেই আল বদরের প্রধান নিজামী আর মুজাহিদরা আবারও সক্রিয়। হত্যাকারীদের মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিতে দিয়ে যখন বুদ্ধিজীবিদের জন্যে শোক করি - তা আসলে আমাদের নিজেদের প্রতি নিজেরাই প্রতারনা করি।

শহীদ বুদ্ধিজীবিদের প্রতি উপযুক্ত সন্মান সেইদিনই প্রদর্শতি হবে - যেদিন হত্যাকারীরা তাদের কুতকর্মের উপযুক্ত শাস্তি পাবে। তাই বুদ্ধিজীবি দিবসের শপথ হলো - যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। (২) শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস উপলক্ষে আল-বদর/রাজাকারদের সংগঠন জামাতের দৈনিক পত্রিকাও মায়াকান্না কেঁদেছে। তারা এই উপলক্ষে কিছু ইতিহাস চর্চাও করেছে - দেখুন নীচেঃ ইতিহাস বলে, একাত্তরে টানা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে যখন শত্রুদের হাত থেকে জাতি পরম মুক্তির প্রহর গুণছিল, ঠিক তখনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও ঘাতকচক্রের হাতে প্রাণ হারান বর্তমান বাংলাদেশের মেধা ও মননের ধারক, প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী, ধীমান সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদগণ। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয়ের পূর্ব মুহূর্তে দেশকে মেধা-প্রতিভা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি শূন্য করার হীনমানসিকতা থেকেই সাঁইত্রিশ বছর আগে এমনি এক দিনে একটি নীল নকশা অনুযায়ী ঠাণ্ডা মাথায় মানব সভ্যতার অন্যতম বর্বর ও কাপুরুষোচিত এই হত্যাকাণ্ড পরিচালিত হয়।

গোটা জাতির আবেগঘন শ্রদ্ধা ও ফুলেল ভালোবাসায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হচ্ছে Click This Link আপাত দৃস্টিতে সবই ঠিক আছে। শুধু কয়েকটা শব্দের দিকে খেয়াল করলেই দেখা যাবে সেখানে একটা বিরাট ব্লাকহোল তৈরী করা হয়েছে। এরা বলছে বুদ্ধিজীবি হত্যার সাথে জড়িত - "পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও ঘাতকচক্র"। এই ঘাতকচক্রের নাম বা পরিচয় কখনও জামাতী পত্রিকা বলবে না। এইটাই স্বাভাবিক।

এরা সুযোগের অপেক্ষায় আছে কখন এই শব্দগুলো জায়গায় কোন একটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নাম বসাবে। কয়েক বছর আগে জামাতিরা জোরেসোরে প্রচার শুরু করেছিলো জহীর রায়হান নিখোঁজ হবার পিছনে আওয়ামীলীগের হাত আছে - পরে অবশ্য ওদের মিথ্যাচার ধরা পড়ে গেলে এই নিয়ে আর আগায়নি। ভবিষ্যতে হয়তো বুদ্ধিজীবি হত্যার পুরো দায় কোন একটা দলের উপরে চাপিয়ে দেবে জামায়াত। (৩) একই দিনে ব্লগে একটা পোস্ট দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ক্যান্সারের উপর গবেষনারত এক উদীয়মান নব প্রজন্মের বুদ্ধিজীবি। উনি নতুন প্রজন্মের বুদ্ধিজীবি হত্যার ইতিহাসের বিষয়ে উদাসীনতা নিয়ে আক্ষেপ করেছেন।

প্রাসংগিক ভাবে উনিও বুদ্ধিজীবি হত্যার ইতিহাস চর্চা করেছেন এই ভাবে - একটি নবীন জাতির জন্মলগ্নে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করার মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে পঙ্গু করার নির্মমতার ৩৮ বছর পূর্তি হলো আজ । তাদেরকে হত্যা করার পেছনে যে কালোশক্তি দায়ী তারা তাদের উদ্দেশ্য অনেকাংশেই পূরণ করতে পেরেছে বলেই মনে হয় । স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের যে দিকনির্দেশনাহীনতার শুরু তা থেকে আমরা এখনও বের হয়ে আসতে পেরেছি বলে মনে করিনা। - এখানে এসে একটা ধাক্কা খেলাম। উনি বলছেন এই জন্যে দায়ী "কালোশক্তি"।

কারা এই কালো শক্তি। নতুন প্রজন্ম এই শিক্ষকের কাছ থেকে বুদ্ধিজীবি হত্যার ইতিহাস শিখবে - আর শিখবে এর পেছনে ছিলো একটা কালো শক্তি। এই ইতিহাস জানা আর না জানার মধ্যে পার্থক্য কতটুকু। উনি আক্ষেপ করেছেন আমরা দিক নির্দেশনাহীন। একজন নতুন পাঠক যখন উনার "কালোশক্তি" কে দায়ী করে লেখা ইতিহাস পড়বে - তারা কোন ধরনের দিক নির্দেশনা পাবে আমার ধারনা নেই।

শুধু এইটুকু বুঝতে পারি - ১৯৭৫ সাল থেকে ৯০ পর্যন্ত আমরা একটা ইতিহাসের সংস্করন দেখতে পেয়েছি - যেখানে "পাকিস্থানী বাহিনী" বদলে বলা হতো "হানাদার বাহিনী" আর "রাজাকার- আলবদর" এর পরিবর্তে ব্যবহূত হতো "সহযোগী"। ফলাফল হিসাবে আমরা পেয়েছি একটা বিরাট বিভ্রান্ত প্রজন্ম - যারা আমাদের স্বাধীনতার শত্রুদের চিনতে ভুল করে। এই রূপকথার ইতিহাস প্রচারের পিছনে কারা দায়ী আমরা জানি। সূত্র: শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস : আমাদের স্মরণ এবং বিস্মৃতির সংস্কৃতি Click This Link (৩) জামাতের পত্রিকার "ঘাতকচক্র" আর নব প্রজন্মের বুদ্ধিজীবির "কালোশক্তি" র মধ্যে যে মিল দেখা গেল - এইটা কি কাকতাল - নাকি একই মতার্দশের প্রতিফলন - তা নিশ্চিত হওয়া কঠিন। কারন বুদ্ধিমান লোকেরা সুশীলতার আড়ালে নিজেদের এমন ভাবে লুকায় - তাদের প্রকৃত রং চিনতে চাইলে রীতিমতো গবেষনা করতে হয় - যদিনা এরা নিজেদের ফাৎদে নিজেরা না জড়িয়ে পড়ে।

আলোচন্য তরুন বুদ্ধিজীবি আজ আবার গর্জে উঠেছেন। এবার "মা-বোন" এর ইজ্জত রক্ষায় জেহাদে নেমেছেন। উনি বলছেন - যারা এডাল্ট কন্টেন্ট তৈরী করে উনি তাদের সাথে মিলে যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাইতে রাজী না। আমার প্রশ্ন - উনি কখন যুদ্ধাপরাধীর বিচারে পক্ষে ছিলেন? একজন স্বজন হারা বিচার প্রার্থী কিভাবে/কথন/কোথায় বিচার চাইবে সেইটা সম্পূর্ন বিচারপ্রার্থী উপর নির্ভর করে। এখানে শর্ত দেবার অধিকার কে এই বুদ্ধিজীবিকে দিলো - তা ভাবনা বিষয় বটে।

নাকি উনি স্বপ্রনোদিত হয়েই এই দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিয়ে নিলেন - তাই ভাবছি। গনহত্যার বিচার চাওয়ার ক্ষেত্রে শর্তারোপ করে উনি আসলে কার পক্ষে কথা বলছেন - তাই ভাবছি। যখন শিবিরের কর্মীরা দিনরাত এই ইস্যুতে ব্লগে মায়াকান্না চালাচ্ছে - তখন উনার এই শর্তারোপ যুক্ত ফতোয়া কি আরেকটা কাকতাল! বিঃদ্রঃমুখোশধারী সুশীলদের থেকে সাবধান করার একটা বাসনা থেকেই এই পোস্ট লেখা। কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে আহত করার কোন ইচ্ছা লেখকের নেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।