আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রম্য রচনা : বিবাহ, যৌতুক ও অন্য সমীকরণ

সকল ব্লগার ও ভিজিটর যদি আমার ধারাবাহিক উপন্যাসটি পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শ রাখেন কৃতজ্ঞ থাকব- এখন থেকে প্রতি শনিবার পর্ব পোস্ট করব--লেখক

রম্য রচনা : বিবাহ, যৌতুক ও অন্য সমীকরণ পার্থসারথি ( লেখাটির শিরোনাম অকাল প্রয়াত সঞ্জীব চেৌধুরীর দেয়া। উনি বেশ আগ্রহ ভরেই প্রস্তাব করলেন আমার দেয়া শিরোনামটি পরিবতর্ন করবেন। দেখার পর আমি সাদরেই গ্রহণ করলাম উনার দেয়া উপরোক্ত শিরোনামটি। লেখাটি ১৮ মার্চ, ১৯৯৬ সংখ্যায় দৈনিক ভোরের কাগজ-এ প্রকাশিত। ) মেয়েদের বয়স যখন বাড়তে থাকে চাহিদা বিধি অনুযায়ী বাবা-মা'র ঘুমের পরিমাণটা কমতে শুরু করে।

কারণ মেয়ের বয়সের সাথে অর্থগত ব্যাপার জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে, তা আবার ব্যবসায়িক ভিত্তিতে। অবশ্য এ ব্যবসাতে ছেলের বাপের লাভের উপর লাভ ; একটা সুন্দরী বউ আসে ( যার হাতের স্পর্শে বাড়ী হযে ওঠে লক্ষ্ণীর ভান্ডার ) , সঙ্গে আসে বিরাট অংকের অর্থ ও অর্থ-মূল্যমান বিলাস সামগ্রী। এই ব্যবসায়িক লেনদেনে ছেলে বিক্রি হয় অথচ বিক্রীত মাল বিক্রেতার ঘরেই ফিরে আসে। আবার সঙ্গে আসে ক্রেতার চুক্তিবদ্ধকৃত ক্রয়মূল্যমান বিষয়বস্তু। ব্যবসায়িক দিক থেকে দেখলে সত্যিই এক আশ্চর্য রকমের বাজার ব্যবস্থা ; যার কোন আইনগত ভিত্তি নেই অথচ আইনের উর্ধে্বই সে ব্যবস্থা বহাল তবিয়েতই আছে।

মেয়ের বাবা-মা'র যখন নাজুক অবস্থা ছেলের বাবা-মা তখন যোগান বিধিতে আমদানিকৃত ঘুমের রাজ্যে নাক ডেকে ঘুমান। ছেলের বয়স যতই বাড়তে থাকে ( বিয়ের পূর্ব লগ্ন পর্যন্ত )গুণধর পিতার ঘুম হু...হু... করে সুখকর হতে থাকে। এই দুই ভুবনের বাসিন্দা অনন্তযুগ যেন দুই ভুবনেই থেকে যাবে। কিন্তু সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব ( ? ) হিসেবে এটা কি মনুষ্য প্রজাতিকে অপমান করা নয় , যখন একটি সুন্দর জীবন পৃথিবীর বুকে বাধাপ্রাপ্ত হয় যেৌতুকের কারণে? এই যেৌতুকে বলি হচ্ছে অসংখ্য সবুজ জীবন । ঈদের বাজারে ক্রেতার চাহিদার ওপর ভিত্তি করে গরু-ছাগরের দাম ক্ষণে ক্ষণে উঠা-নামা করে।

যদি ক্রেতার চাহিদার তুলনায় গরু-ছাগরের আমদানি বেশি থাকে তাহলে বিক্রেতার অনিচ্ছা সত্বেও দাম কমাতে বাধ্য । কিন্তু বিয়ের বাজারে জামাই নাম্নী স্বর্গের ষাড়-এর দাম জামাই-পিতা নির্ধারণ করে রাখেন। এতটুকু নড়চড় হবার উপায় নেই। স্বর্গের ষাড় যখন বিক্রি হয় মাছ বাজারের চেচামেচিকেও হার মানায়। এই বাজারের মেয়েপক্ষ সবসময় নিগৃহীত, নিপীড়িত হচ্ছে।

দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে কোনকিছু আদায় করার জন্য অহরহ হরতাল-ধর্মঘট হচ্ছে। যদিও এটা রাজনীতির ব্যাপার-স্যাপার তবুও যেৌতুক প্রথা বিলুপ্তির জন্য ধর্মঘটকে একটা পন্হা হিসেবে ধররে কেমন হয় ? এ ব্যাপারে আমি নারীপক্ষের নির্ভেজাল সাপোর্টার। কারণ না-দিয়ে তো উপায় নেই ; আমিও তো একদিন মেয়ের বাবা হব। তবে এই ধর্মঘট আহবানের আগে নারী-পক্ষকে খুব ভালোভাবে সংগঠিত হয়ে মাঠে নামতে হবে। এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তের বয়সের সকল নারীপক্সকে এই আন্দোলনে সামিল হতে হবে।

শেষ বয়সে বৃদ্ধও যেন বৃদ্ধার শরীরের উত্তাপ থেকে বঞ্চিত হয়ে আন্দোলনের উদ্দেশের কাছে নত হতে বাধ্য হন। প্রেমিক প্রেমিকার ভালোবাসায় গদগদ হয়ে বলে- তোমার জন্য আমি জীবন দিতে প্রস্তুত। মাননীয়া প্রেমিকা এক্ষেত্রে আপনার প্রেমিককে শুধু বলেন এই ধর্মঘটের আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য যেন সমর্থন দেন। এটা জীবন দেয়ার চেয়ে অনেক সহজ ও শান্তিদায়ক। মহাশয়া আপনি হয়তো ভাবতে পারেন; আমার তো হিল্যে হলোই, যেৌতুক-ফেৌতুক নিয়ে আর মাথা ঘামাতে চাই না।

এক্ষেত্রে আপনি কিন্তু রেহাই পাবেন না। আপনিও একদিন মা হবেন এবং যদি বহু সংখ্যক কুতসিত মেয়ের মা হন তাহলে অবস্থাটা কী দাড়াবে একবার ভেবে দেখেছেন কি? অতএব সাবধান ! পুরুষকূল হয়ত এই ধর্মঘটের কথা শুনে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরাবেন। কিন্তু কিন্তু ভয় পাবার কোন কারণ নেই। স্থায়ী ও ভ্রাম্যমান গণিকালয় আপনাদের ধর্মঘটের আওতায় ফেলে দিন, দেখবেন হালুয়া একেবারে টাইট। দিনের বেলায় চোখে সর্ষেফুল দেখবেন অতিশয় ভদ্র-পুরুষ কূল।

পুরুষ মানুষের মর্যাদাবোধ আবার একটু বেশি। প্রথম প্রথম এমন ভাব দেখাবে যেন যেৌতুক বিরোধী ধর্মঘটটা একটা ফালতু জিনিস। কিন্তু তা' বেশি দিন টিকবে না। রক্ত-মাংসে গড়া মানুষতো সে। পুরুষকূল হয়ত বলবে নারীকূল কি রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ নয় ? একটা প্রবাদ আছে- নারীদের বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটে না।

একটা সন্তানকে যেহেতু দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করার ধৈর্য আছে অতএব আপনাদের জেতার সম্ভাবনাতে কোন সন্দেহ নেই। যেৌতুকের সাথে ধর্মঘটের আত্মীয়তা ঘটিয়ে দিন। সাত-পাচ ভাবার কো প্রয়োজন নেই ; হিসেব সোজা-- যেৌতুক বাজার + ধর্মঘট = বিয়ে বাজার - যেৌতুক == যেৌতুকবিহীন বিয়ে। শেষ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.