আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার কৈশোরে কাব্যের ঘোড়ারোগ পর্ব-৪

আত্মবিশ্বাসহীনতায় প্রকট হচ্ছে আত্মার দেউলিয়াত্ব, তবুও বিশ্বাস আগের মতই নিশ্চল..

পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেছে। যে কয়দিন হলে আছি সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে ব্লগের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মাধ্যম কি হতে পারে আমার মত 'পঞ্জম প্রজাতির গর্দভ ব্লগারের কাছে। অতএব জয় বাবা ব্লগনাথ! গতকাল ব্লগার ফারিহান মাহমুদের একটি পোষ্ট পড়ে কৈশোরের দিনগুলোতে ফিরে গিয়েছিলাম। আমি ছড়া-গল্প লিখি ক্লাস থ্রি থেকে, তবে তা একেবারে বিপদজনক চরম আকার ধারণ করে নাইন-টেনে পড়ার সময়, এবং সেটা এতটাই যে টেনের প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় জীবনে প্রথমবারের মত গণিত+উচ্চতরগণিতে লেটারমার্ক পাই তো না-ই বরং নম্বরগুলো ছিল সেইরকম: ৫৪ এবং ৪৭! আপাতত কোন কাজ যেহেতু নেই, তাই আমার পুরনো ডায়েরী ঘেটে সেই সময়কার লেখা শিশুতোষ কবিতাগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের সামান্য শখ হয়েছে। এই শখের সৌজন্যে হলেও এতদিনপর সেই পুরনো ডায়েরীটা নতুন করে খুললাম।

এখানকার বেশিরভাগ কবিতাই ক্লাস সেভেন-ক্লাস টেন এর মধ্যবর্তী সমযকালে লেখা। । । । আরও আগের লেখাগুলো এই মুহূর্তে হলে নেই।

ছুটিতে বাসায় গেলে খুজতে হবে। শ্রদ্ধেয় যতিন সরকারের একটি বইয়ে পড়েছিলাম " ম্যালেরিয়া এবং কাব্যরোগ বাঙালি জীবনে অনিবার্য। ম্যালেরিয়া হতে যদিওবা রেহাই পাওয়া যায়, কাব্যরোগ থেকে নিষ্কৃতির আশা দুরস্থান!"- আপনাদের দোয়ায় ম্যালেরিয়া তো শৈশবে হয়েছেই, কাব্যরোগটাও এমন বাড়াবাড়ি রকম হয়েছিল যে সেটা ঘোড়ারোগে রূপ নিয়েছিল। সেই ঘোড়ারোগের দৃণ্টান্তগুলো ব্লগে প্রকাশ করতে চাইছি। এবং সম্পূর্ণ ধারাবাহিকটি উৎসর্গ করছি শ্রদ্ধেয় ব্লগার ফারিহান মাহমুদকে [/sb ১৩.মন মন তুমি কি সুনীল আকাশ, নাকি আকাশের তারা? মন তুমি কি ঝড় নাকি ঝড়ের ঝাপ্টা হাওয়া? মন, হয়তো তুমি খরস্রোতা নদী কনো ভাঙ্গো, কখনো গড়ো।

তোমার দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে পাই প্রেরণা মন, কোথায় তোমার আবাস? তোমাকে অনুভব করি, স্পর্শে পাইনা স্বর্গের দান তুমি,মর্তে তোমার ঠাই আজ সকলে সমবেত সুরে তোমারই গান গাই। । । ১৪.আমি হব আমি কখনই সকালবেলার পাখি হবনা হলে হব সকালের স্বর্ণালী আলো। আমি অনেক কিছুই হব হয়ত আজ , নাহয় কাল।

একটা কিছু তো অবশ্যই হব। কবিতা লিখে হব মধুসূদন নয়তো মধুকে ছাপিয়ে হব ইতিহাস। আমি একটু বেশিই বোধহয় অন্যরকম চারদিকে হয়ে যায় যখন এতকিছু, তখন আমি.. আমি শুধু নির্বিষভাবে বসে থাকি। তারুণ্যের দীপ্ততা আমায় স্পর্শ করেনা, সময়ের গতি আমাকে স্তব্ধ করেনা এমনকি নারীর হাসিও পারেনা সামান্যতম মুগ্ধতা ছড়াতে। তবুও ভাবি কিছু একটা হবই হওয়ার তো আর শেষ নেই।

কৈশোরের মুহূর্তগুলো কেটে যায় এগিয়ে আসতে থাকে সময় ঘোলাটে হয়ে আসে সবকিছু কিন্তু আমার কিছুই হয়না আমি কি আমার কল্পনাকে আনতে পারবো বাস্তবতায়? দিন যায়, ঘনিয়ে আসে আঁধার.........তারাপর? সম্ভবত তার আর কোন পর নেই। । ১৫.অতৃপ্ত পৃথিবী জীর্ণ-শীর্ণ পৃথিবীর বুকে সর্বত্রই আজ দুখ দুঃখের ভীড়ে মিলিয়ে গেছে জীবনের যত সুখ। বিশ্বাস নামের শব্দটি আজ তিন আক্ষরেই বাধা ধোকাবাজি আর প্রতারণা তাই একইসূত্রে গাথা। কারিগরের চেয়ে নিন্দুক বেশি, শ্রোতার চেয়ে নেতা মানুষগুলো বন্দীপাখি, নয়কো স্বাধীনচেতা।

বাপের চেয়েও বড় টাকা, মা-ভাই সবই টাকা টাকা থাকলেই বন্ধু অনেক, না থাকলেই ফাকা। অন্যায় আর অনাচার আছে বাতাসের সাথে মিশে একটাই শুধু প্রশ্ন মনে_"সমাধান হবে কিসে?" নিত্যনতুন করছে মানুষ মানুষ ধরার ফন্দি বিবেক চির ঘুমিয়ে গেছে, জীবনটা তাই বন্দী। মিথ্যে জীবন, মিথ্যে বাঁচা, মিথ্যে সকল আশা এ পৃথিবীর সবখানেতে তাই ঘুণেরা বেধেছে বাসা। ১৬.পাপী শুন হে বন্ধু, শুন হে মানুষ, শুনে রাখ সব আদম কম বেশি মোরা সবাই পাপী, এ আমার চির কসম। মোদের পাপে সুন্দর ধরা হয়ে উঠেছে নরক দেহের মাঝে কলুষিত মন, উপরে রঙিন মোড়ক।

পাপ করেছে আদ-হাওয়া_ খেয়ে গন্ধব ফল তাদের থেকেই আজ জগতে নেমেছে পাপের ঢল। জগৎজুড়ে পাপের হাওয়া, নেই কোথাও পূণ্য যে যত বড় পাপী সে-ই তত ধন্য! ইচ্ছায় করি-অনীহায় করি-করি মনের ভুলে পাপের ফসিল জীবিত হয়ে ঘুরে বিশ্বজুড়ে। মায়ের পাপে সন্তান দোষী পুরো সমাজের চোখে সমাজপতিই আসল পাপী, তবুও আছে সুখে। মনের কাছে পাপী মোরা, পাপী সকল কাজে তবুও যেন পাপী ধরণীতে রয়েছি সাধুর সাজে। ........... টাইপ করতে গিয়ে হাসি থামিয়ে রাখাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল।

। । বেচারা ছন্দ মেলানোর জন্য কিশোরমনের কি যে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা! ক্রিয়েটিভ কাজের ধরনটাই বোধহয় এমন_ পুরনো দিনের কর্ম দেখলে সেগুলোর অপরিপক্কতা হাসির খোরাক যোগায়। তাইতো ব্লগে এখন যেসব লেখা দেই, ৫বছর পর হয়ত এগুলো পড়েই এখনকার চেয়েও বেশি হাসবো। ।

। এভাবে জীবনের সায়াহ্নে এসে হয়ত সারাজীবের কর্ম দেখেই হাসি চলে আসবে। মিল্টন কি সেজন্যই শেষের দিকে লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন, ফ্রানজ কাফকা তার বন্ধুকে বলেছিলেন সকল পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলতে, এমনকি রবিঠাকুর স্বয়ং কবিতা লেখার চেয়ে চিত্রকলাতেই যে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, তার নেপথ্য কারণও কি এই পুরনো লেখাগুলোকে হাস্যকর লাগা??? সৃজনশীলতার ধর্মই কি এমন??? ঘোড়ারোগের সময়টাতে আরও একটা রোগ ছিল সব লেখা কাউকে না কাউকে উৎসর্গ করা। একটা সময় চলে আসল যখন পরিচিত একজন মানুষও বাদ ছিলনা যাকে একাধিক কবিতা উৎসর্গ করা হয়নি। ।

। ও হো, আসল কথাই তো বলা হয়নি সে সময় আমি বাংলা-ইংরেজি কবিতা লিখতাম John F. Harton নামে। ধরতে পারেন এই কবিতাগুলো (!!)John F. Harton এরই লেখা!!! .........(চলবে).........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।