আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিনত মোহ কিংবা অপরিনত ভালোবাসা (চতুর্থ পর্ব)

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

এই কয়মাসে আনন্দিত হওয়ার মতো বেশ ঘটনা ঘটেছে। একটা রচনা প্রতিযোগিতায় রচনা লিখে প্রথম পুরস্কার পেয়ে গেলাম। তারপর থেকে অবশ্য একটা সমস্যা হয়েছে, মনের ভিতর ধারণা হয়ে গেছে আমি লেখালেখি ভালো পারবো। ভাব দেখানোর জন্যই হয়তো রাতে ঘুমানোর আগে হাতের কাছে কাগজ কলম নিয়ে থাকি। কখন আবার কোন ভাব চলে আসে।

সব ভাবকেই কাগজে ধরে রাখা উচিত। কয়েক রাত পরে দেখি খালি কাগজটাতে বেশ কিছু আকিবুকি। তবে কাজের কাজ কিছুই না। তাই বলে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র আমি নই। কিছু একটা লিখতেই হবে।

একসময় বেশ কয়েকটা গল্প লিখে ফেললাম। ট্রিপিক্যাল প্রেমকাহিনী নিয়ে গল্প। প্রথম পাঠক আমার রুমমেট। পড়ে চোখে জল এনে ফেললেন তিনি। আমি মনে মনে ভাবলাম কি এমনটা লিখলাম যে চোখে পানি নিয়ে আসতে হবে! প্রেমে ব্যার্থ হইছোতো বাপু, এখন প্রেম এর কাহিনী দেখলেই চোখে পানি আসে! রুমমেটের কথা হলো এই গল্পগুলো পাঠকদের পড়তে দেওয়া উচিত, তারমানে কোন একটা পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করা উচিত।

আমি সামনে পিছনে চিন্তা না করে রাজি হয়ে গেলাম। একদিন সাহস করে হাজির হয়ে গেলাম একটা নামকরা পত্রিকা অফিসে। গেটে অবশ্য অনেকক্ষণ দাড় করিয়ে রাখা হলো। হয়তো আমার পোশাক আশাক বিশেষ সুবিধার মনে হলো না রিসেপশনিস্ট এর কাছে। তারপর বেশ ঝামেলা পার করে সাহিত্য সম্পাদকের ছোট্ট রুমটাতে পৌছলাম।

গিয়ে দেখি টেবিলের উপর একটা প্লেটে মুড়ি আর আরেক কাপ চা নিয়ে বসে আছেন মধ্যবয়স্ক সাহিত্য সম্পাদক সাহেব। একটা চামচে করে মুড়ি নিয়ে চায়ে ভিজিয়ে বেশ আরাম করে খাচ্ছেন। দেখে হাসি এসে গেল। জোরে হেসে ফেললে উনি আবার কি মনে করেন এই ভেবে হাসি আটকে রাখি। সাহিত্য সম্পাদক সাহেব আনমনে চা মুড়ি খেয়ে চলেছেন।

আমি এর মধ্যে অবশ্য বেশ কয়েকবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলাম। কিন্তু উনার কোন মনোযোগ নেই আমার দিকে। অনেকক্ষণ পর আমার দিকে মাথা তুলে জিজ্ঞেস করলেন- কি চাই? না মানে দুইটা গল্প নিয়ে আসছিলাম। যদি একটু দেখতেন। আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম।

এবার কিছুটা তাচ্ছ্বিল্য দৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে। ভাবটা এমন যেন, তুমি কে হে বাপু, দেখতেতো এখনো ছোকরা মনে হয়। তুমি লিখছো গল্প! তাও আবার সাহিত্য পাতায় ছাপানোর জন্য আমার কাছে নিয়ে এসেছো। নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাড়িয়ে দেওয়া গল্প দুটি তিনি হাতে নিলেন। কিছুক্ষণ উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলেন।

মাঝখান থেকে কিছু পড়েও দেখলেন। বুঝতে পারছিলাম উনি বিশাল এবং জ্ঞানগর্ভ বানী শোনানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। দেখো, তোমার গল্পটা ট্রিপিকাল প্রেমের গল্প হয়ে গেছে। এইসব পাঠক খাবে না। নিম্নবৃত্ত কিংবা মধ্যবৃত্তের জীবনকে গল্পে নিয়ে আসো।

আর তোমকে প্রচুর গল্প পড়তে হবে। জানোই তো গল্পের বেসিক বিষয় হলো...... কিছুটা হতাশ হয়ে বের হয়ে আসলাম পত্রিকা অফিস থেকে। রাস্তায় কড়া রৌদ্রের মধ্যে হাটতে হাটতে বুঝলাম আসলেই গল্পে নিম্নবৃত্তের কষ্ট থাকলে ধনিক শ্রেণীও তা পড়ে চোখে জল আনে। বাস্তব জীবনে নিম্নবৃত্তের কষ্ট দেখেও ধনিক শ্রেণীর লোকগুলো মনে হয় না এতোটা কষ্ট পায়। লেখালেখি যে আমাকে দিয়ে হবে বুঝতে পারলাম সেই দুপুরে কড়া রৌদ্রের মধ্যে হেটে হেটে।

টিউশনীতে আমার পারফর্মেন্স দেখে ছাত্রীর মা খুবই মুগ্ধ। ছাত্রী নাকি স্কুলের হাফ ইয়ারলি পরীক্ষায় আগের চেয়ে বেশ ভালো ফলাফল করেছে। এজন্য ছাত্রীর মা বেশ বিনয় করে এর সিংহভাগ কৃতিত্ব আমাকে দিয়েছেন। অবশ্য কৃতিত্বের চেক ভাঙ্গিয়ে বাড়িওয়ালার বাড়তি বাড়ি ভাড়া দেওয়া সম্ভব না। তবে আমার জন্য সুখকর হলো ছাত্রীর মা বেতন বাড়িয়েও দিয়েছেন।

তাছাড়া টিউশনীটা মোটামোটি পার্মানেন্ট করে দিয়েছেন। বিকালের নাস্তা এখন আগের চেয়ে ভালো আসে। কড়াকাড়ি নিয়মও অনেকটা শিথিল হয়ে গেছে। এখন আর ছাত্রীকে পড়ানোর সময় ছাত্রীর মা এসে পাহারা দিতে বসে থাকেন না। এই সুযোগে অবশ্য ছাত্রীর সাহস কিছুটা বেড়ে গেছে।

একটা উদাহরণ দেই- একদিন অংক বুঝিয়ে দিচ্ছি। হঠাৎ করেই আমার কাছ থেকে কলম নিতে গিয়ে আমার হাত ধরে ফেললো। আমি সঙ্গে সঙ্গেই কলমটা ছেড়ে দিলাম। সে তখন হাত ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে কলমটা উঠিয়ে নিলো। অবশ্য আমি তার এইসব কাজের পিছনে কিছু যুক্তি খুঁজে বের করেছি।

মেয়েটা বেশ কড়া নিয়মের মধ্যে বেড়ে উঠেছে। ছোট থেকেই পড়ছে মেয়েদের স্কুলে। এজন্যই হয়তো খুব বেশি ছেলের সাথে পরিচয় হয় নি তার। তাই অনেক কিছুতেই তার বেশি বেশি আগ্রহ। ইদানিং খেয়াল করছি পড়তে আসার সময় বেশ পারফিউম দিয়ে আসে ছাত্রী।

আমি অবশ্য এর জন্য দুই ধরনের যুক্তি দাড় করেছি। এক, হয়তো সে সব সময়েই পারফিউম ব্যবহার করে মানে সব সময়ই পারফিউম ব্যবহার করা শুরু করেছে। অথবা এমনটাও হতে পারে যে আমার শার্টের ঘামের দুর্গন্ধ থেকে দুরে থাকলেই কড়া পারফিউম ব্যবহার করে পড়তে আসে। আমিই বা কি করবো! আমার শার্টের সংখ্যাও খুব বেশি না। ইউনিভার্সিটি যাওয়ার সময় পাবলিক বাসে মাঝেমধ্যে ঝুলে ঝুলে যেতে হয়।

শার্টের অবস্থা ঠিক থাকে কিভাবে! আর আমার এতো বেশি শার্ট নেই যে প্রতিদিন একটা করে পড়ে যাবো। একদিনতো ছাত্রী জিজ্ঞেস করে বসলো- আচ্ছা স্যার, আপনার কি অন্য রঙের কোন শার্ট নেই? হয়তো ভদ্রতা দেখানোর জন্য এমন প্রশ্ন। নাহয় সরাসরি এমনটাও বলতে পারতো- আচ্ছা স্যার, আপনার আর কোন শার্ট নেই? ছাত্রীকে পড়িয়ে বিকালে ফেরার সময় প্রায় দিনই অবন্তীর বাসার দিকে যাই। বিকালের সময়টা অবন্তী বাগানের দিকেই বেশি থাকে। বাগানের এক কোনে তার ছবি আঁকার বেশ চমৎকার একটা জায়গা আছে।

ওইখানটায়, নাহয় দোলনায় বসে থাকে সে। কেন যে এইভাবে রুটিন করে অবন্তীদের বাসায় গিয়ে উপস্থিত হই নিজেও বুঝি না। মাঝেমধ্যে ভাবি অবন্তীদের বাসায় কেন যাই, অবন্তীর সাথেতো আমার কোন সম্পর্ক নেই, এমনকি অবন্তীর বাবার সাথেও নেই। কেবল একদিনের বাজারের ব্যাগ এগিয়ে দেওয়া থেকে পরিচয় এ পরিবারটার সাথে। অবশ্য যখন অবন্তীর সাথে গল্প করি তখন এতোসব বিষয় মাথায় থাকে না।

বই পড়ে পড়ে আমি পেইন্টিং, আর্ট এইসব বিষয়ে ভালোই শিখে ফেলেছি। এই বিষয়গুলো নিয়ে অবন্তী আলোচনা করলে বেশ ভালোই তাল মিলাতে পারি। মাঝেমধ্যে অবশ্য বিকালের হাটাকে বাদ দিয়ে অবন্তীর বাবা আমাদের সাথে গল্পে যোগদান করেন। এই লোকটাকে আমার সরলবিশ্বাসী মনে হয়। স্বল্প পরিচিত একটা ছেলে উনার মেয়ের সাথে প্রায় বিকালেই গল্প করছে অথচ তিনি তেমন কিছুই মনে করছেন না।

অবন্তীর বাবা যখন গল্পে থাকেন তখন অবশ্য গল্পের মোড় অন্যদিকে ঘোরে যায়। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে শুরু করে বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি নিয়েও কথা হয়। একটা পর্যায়ে অবন্তী অতিষ্ট হয়ে বলে বলে, বাবা তোমরা থামোতো। তোমাদের এইসব জ্ঞানী কথা শুনতে ভালো লাগছে না। একটা বিষয় ইদানিং খেয়াল করছি, অবন্তীর সাথে গল্পের বিষয়বস্তু এখন পেইন্টিং কিংবা আর্টের বাইরে বের হয়ে যাচ্ছে হুটহাট করে।

অন্য বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হচ্ছে মাঝেমধ্যে। এটা কিসের লক্ষণ! (চলবে......) প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.