আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম ও বিজ্ঞান : পর্ব- ৭

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ

ধর্ম ও বিজ্ঞান : পর্ব- ৭ Click This Link রায়হান ধর্মগ্রন্থ ও বিজ্ঞানের গ্রন্থের মধ্যে পার্থক্য : ধর্মগ্রন্থের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মশুদ্ধি ও সমাজ সংস্কার, বিজ্ঞান শেখানো নয়। সেখানে পার্থিব-অপার্থিব অনেক বিষয় এয়াড্রেস করা হয়েছে। অন্যদিকে বিজ্ঞানের গ্রন্থের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে বিজ্ঞান শেখানো, আত্মশুদ্ধি বা সমাজ সংস্কার নয়। সেখানে পার্থিব-অপার্থিব কোন বিষয় এয়াড্রেসও করা হয় না, যেভাবে ধর্মগ্রন্থে করা হয়েছে। যেমন প্রত্যেকটি ধর্মগ্রন্থে কিছু উপদেশ বাণী আছে (এটা কর না; সেটা কর না; এটা খাও না; সেটা খাও না; ইত্যাদি)।

কিন্তু বাণীগুলোর স্বপক্ষে পরীক্ষামূলক ডেটা সহ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। ধর্মগ্রন্থের প্রত্যেকটি বাণীর স্বপক্ষে যদি পরীক্ষামূলক ডেটা সহ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয় তাহলে সেটি যেমন আর ধর্মগ্রন্থ থাকবে না তেমনি আবার তার ভলিউম হবে বিশাল এনসাইক্লোপেডিয়ার মত! সবার পক্ষে বিশাল ভলিউমের একটি ধর্মগ্রন্থ পড়া যেমন সম্ভব নয় তেমনি আবার দরকারও নেই। এখন কেহ যদি ধর্মগ্রন্থের কোন বাণীর স্বপক্ষে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতে চায় তাহলে তাকে বিজ্ঞানের গ্রন্থের সরণাপন্ন হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কোরানে মৃত জীব-জন্তু, হিংস্র প্রাণী, রক্ত, শূকরের মাংস, ও মাদকদ্রব্য (Intoxicant) নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তার স্বপক্ষে পরীক্ষামূলক ডেটা সহ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

বেশীরভাগ মানুষ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছাড়াই এগুলো ফলো করে। এবার কেহ যদি কোন নিষেধাজ্ঞার পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতে চায় তাহলে তাকে বিজ্ঞানের সরণাপন্ন হতে হবে। ব্যাপারটা এরকম : পিতা-মাতা তাদের সন্তানের মঙ্গলের জন্য সবসময় কিছু না কিছু উপদেশ দিয়ে থাকে। কিন্তু তাদের উপদেশ বাণীর স্বপক্ষে পরীক্ষামূলক ডেটা সহ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয় না! কারণ পিতা-মাতা নিশ্চিত যে, তারা যা কিছু বলেন সেটা সন্তানের মঙ্গলের জন্যই বলেন। এমনকি ডাক্তাররাও একই কাজ করেন।

কেহই কিন্তু ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের স্বপক্ষে পরীক্ষামূলক ডেটা সহ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতে চায় না, যদিও ভুল চিকিৎসার কারণে অনেক মানুষ মারা যায়! অনুরূপভাবে, মানুষের জন্য কোন্‌টা ভাল আর কোন্‌টা মন্দ সেটা এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরের চেয়ে অন্য কেউ ভাল জানতে পারে না। এখন কেউ যদি একটি গ্রন্থকে এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরের বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে সেক্ষেত্রে সেই গ্রন্থের বাণীর স্বপক্ষে পরীক্ষামূলক ডেটা সহ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা চাওয়াটাই তো বোকামী! তাতে প্রমাণ হবে যে, তার ক্রিয়েটরের উপরই কোন আস্থা নেই! সাধারণ একজন ডাক্তারের উপর আস্থা রাখা গেলে এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরের উপর আস্থা রাখা যাবে না, এ আবার ক্যামন ক্রিয়েটর! তার মানে কিন্তু এই নয় যে, কেউ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতে পারবে না বা জানা উচিত নয়। কেউ প্রয়োজন মনে করলে জানবে। কিন্তু পরীক্ষামূলক ডেটা সহ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না পেলে বিশ্বাস বা ফলো করা যাবে না, এমন ভাবাটাই তো চরম মূর্খামী! তাছাড়া যারা কথায় কথায় বিজ্ঞানকে টেনে এনে ‘পরীক্ষামূলক ডেটা’ ‘পরীক্ষামূলক ডেটা’ বলে মুখে ফেনা তোলেন তারা কি ‘পরীক্ষামূলক ডেটা’ ছাড়া কোন কিছুই বিশ্বাস করেন না? ফাগোল নাকি! তাহলে তো লজিক, রাশনালিটি, ও এমপিরিসিজমকে বাদ দিয়ে মানুষকে একদম রোবট সেজে প্রত্যেকটি বিষয়ের উপর বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কী বলেন না বলেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে! পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল সবসময় যে সঠিক হবে তারও কিন্তু কোন নিশ্চয়তা নেই! এমনকি অনেক বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাও সম্ভব নয়! বিজ্ঞানীরাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই অনেক কিছুতে বিশ্বাস করেন! যেমন অক্সফোর্ড প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স হয়ত বিশ্বাস করেন যে, আজ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে শুকনা মৌসুমে উঁচু ডালের পাতা খেতে যেয়ে রান্ডম মিউটেশন ও ন্যাচারাল সিলেকশনের মাধ্যমে জেব্রা থেকে জিরাফ ইভল্ভ করেছে! তাঁর অন্ধ অনুসারীরাও কোনরকম সংশয়-সন্দেহ না করে ঠিক তা-ই বিশ্বাস করে! অথচ তারাই আবার কথায় কথায় ‘পরীক্ষামূলক ডেটা’ ‘পরীক্ষামূলক ডেটা’ বলে মানুষের কাছে বিজ্ঞানমনস্ক সাজার ভান করে। ফলে বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধরণের উটকো বিজ্ঞান লাভারদের কোনই মূল্য নেই।

নোট : কোন বিষয়ে পুনঃ পুনঃ পরীক্ষা-নিরীক্ষা তখনই দরকার হয় যখন সেই বিষয়ে মানুষের মধ্যে মতবিরোধ বা সংশয়-সন্দেহ দেখা দেয়। কিন্তু এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরের ক্ষেত্রে পুনঃ পুনঃ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোন বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার দরকার আছে কি!?! বিজ্ঞান, অপবিজ্ঞান, ও বিজ্ঞানের সাথে ধর্মগ্রন্থের সমন্বয় বিজ্ঞান : বিজ্ঞান হচ্ছে পুনঃ পুনঃ পরীক্ষা-নিরীক্ষা লব্ধ ফলাফল। এখানে ম্যাথমেটিক্যাল মডেল, পরীক্ষামূলক ডেটা, ও পর্যবেক্ষণ এর যে কোনটি বা সবগুলোই থাকতে পারে। একটি প্রপঞ্চ বা দাবি বৈজ্ঞানিক নাকি অবৈজ্ঞানিক সেটা প্রমাণ করতে হলে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে, সেই প্রপঞ্চ বা দাবিটি বিজ্ঞানের আওতাভুক্ত কি-না। অর্থাৎ সেই প্রপঞ্চ বা দাবিটির উপর পুনঃ পুনঃ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ চালানো সম্ভব কি-না।

বিষয়টি বিজ্ঞানের আওয়াভুক্ত হলে পুনঃ পুনঃ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে একটি যৌক্তিক উপসংহারে পৌঁছা যেতে পারে। যেমন পৃথিবীর ‘আকার’ ও ‘ঘূর্ণন’ বিষয় দুটি বিজ্ঞানের আওয়াভুক্ত। ফলে এক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে মতবিরোধ বা সংশয়-সন্দেহ দেখা দিলে পুনঃ পুনঃ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিষয় দুটির নিষ্পত্তিও সম্ভব। অপবিজ্ঞান : অপবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পুনঃ পুনঃ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো সম্ভব নয়। এমনকি ম্যাথমেটিক্যাল মডেল যেমন দাঁড় করানো সম্ভব নয় তেমনি আবার বিষয়টি পর্যবেক্ষণেরও বাহিরে।

যেমন ধরা যাক প্রফেসর ডকিন্সের মত কেহ দাবি করলেন, “আজ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে কোন এক প্রাণী থেকে রান্ডম মিউটেশন ও ন্যাচারাল সিলেকশনের মাধ্যমে মানুষ ইভল্ভ করেছে; পানি থেকে ডাঙ্গায় উঠে মাছ থেকে রেপ্টাইল ইভল্ভ করেছে; উপর দিকে লাফিয়ে পোকা-মাকড় ধরতে যেয়ে মাটিতে ধপ্পাস ধপ্পাস করে পড়ে রেপ্টাইল থেকে পাখি ইভল্ভ করেছে; শুকনা মৌশুমে উঁচু ডালের পাতা খেতে যেয়ে জেব্রা থেকে জিরাফ ইভল্ভ করেছে; ইত্যাদি; ইত্যাদি; ইত্যাদি। ” এই দাবিগুলো দিয়ে শিশু বাচ্চাদের জন্য ফেয়ারী টেইল টাইপের সুন্দর সুন্দর গল্প তৈরী করা গেলেও এগুলো কোনভাবেই বিজ্ঞানের আওতাভুক্ত হতে পারে না। এর পরও যারা বিষয়টিকে ‘বৈজ্ঞানিক’ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তারা অপবিজ্ঞানী এবং তাদের সেই বিজ্ঞানকে অপবিজ্ঞান বলা হবে। অনুরূপভাবে, আত্মাকে যেহেতু ধরা, ছোঁয়া, দেখা, বা এমনকি অনুভব পর্যন্ত করা যায় না সেহেতু ‘আত্মা’ বিষয়টিও বিজ্ঞানের আওতাভুক্ত হতে পারে না। অর্থাৎ অপবিজ্ঞান হচ্ছে সেটিই যেটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ দ্বারা প্রমাণ করা সম্ভব না হওয়া সত্ত্বেও ‘বৈজ্ঞানিক’ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞানের সাথে ধর্মগ্রন্থের সমন্বয় : ধর্মগ্রন্থগুলো হচ্ছে একেকটি তত্ত্বের মত। সেখানে ম্যাথমেটিক্যাল মডেল ও পরীক্ষামূলক ডেটা যে থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। এমনকি চার্লস ডারউইনের ‘দা অরিজিন অফ স্পেসিজ’-ও একটি তত্ত্ব, বিজ্ঞানের সঙ্গা অনুযায়ী এটি কোন বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ নয়। তবে ধর্মগ্রন্থে ম্যাথমেটিক্যাল মডেল বা পরীক্ষামূলক ডেটা না থাকলেও সেখানে অনেক ন্যাচারাল প্রপঞ্চের উপর সংক্ষিপ্ত স্টেটমেন্ট আকারে মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। এই স্টেটমেন্টগুলো নিজে বৈজ্ঞানিক বা অবৈজ্ঞানিক কোনটাই নয়।

একটি স্টেটমেন্ট বৈজ্ঞানিক নাকি অবৈজ্ঞানিক সেটা নির্ভর করবে সেই স্টেটমেন্ট প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি-না তার উপর। কোন স্টেটমেন্ট যদি প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তাহলে তাকে বৈজ্ঞানিকভাবে একটি ভ্যালিড স্টেটমেন্ট বলা যেতে পারে। অন্যথায় সেটি হবে বৈজ্ঞানিকভাবে একটি ইনভ্যালিড স্টেটমেন্ট, যদি বিষয়টি বিজ্ঞানের আওতাভুক্ত হয়। এখানে অপবিজ্ঞানের কিছুই নাই! উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, কোনরকম পরীক্ষামূলক ডেটা ছাড়াই পৃথিবীর আকার সম্পর্কে দু’জন মানুষ দু’রকম দাবি করলেন। প্রথম জনের দাবি অনুযায়ী পৃথিবীটা ডিমের মত স্ফেরিক্যাল।

দ্বিতীয় জনের দাবি অনুযায়ী পৃথিবীটা ডিস্কের মত সমতল। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের দাবির স্বপক্ষে যেহেতু পরীক্ষামূলক ডেটা হাজির করা হয়নি সেহেতু তাদেরকে ‘অপবিজ্ঞানী’ এবং তাদের দাবিকে ‘অপবিজ্ঞান’ বলা যাবে কি-না। উত্তর হচ্ছে, মোটেও না। তাদের দাবি বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল বা সঠিক যে কোনটি হতে পারে কিন্তু তাদেরকে কোনভাবেই ‘অপবিজ্ঞানী’ বা তাদের দাবিকে ‘অপবিজ্ঞান’ বলা যাবে না, যেহেতু বিষয়টি বিজ্ঞানের আওতাভুক্ত। এর পরও যারা বিষয়টিকে অপবিজ্ঞান বলে প্রোপাগান্ডা চালায় তাদের না আছে বিজ্ঞানের জ্ঞান, না আছে অপবিজ্ঞানের জ্ঞান, আর না আছে দর্শন ও যুক্তিবাদের জ্ঞান।

অপবিজ্ঞানীরাই আসলে অন্যদেরকে ‘অপবিজ্ঞানী’ বলে প্রোপাগান্ডা চালায়। কথায় বলে না, কার মায়ের যেন বড় গলা। “আর এ কোরআন এমন নয় যে, তা আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারো কর্তৃক মনগড়া রচিত হয়ে থাকবে, বরং এটি পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তার সত্যায়নকারী এবং বিধানসমূহের বিশদ ব্যাখ্যা, এতে কোন সন্দেহ নেই, এটা সারাজাহানের প্রতিপালকের তরফ থেকে। ” (কোরআন ১০:৩৭) (চলবে …)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.