আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিনত মোহ কিংবা অপরিনত ভালোবাসা (দ্বিতীয় পর্ব)

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

আমার নিয়মিত কাজের মধ্যে একটা সীমাবদ্ধতা চলে এসেছে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠি। হাত,মুখ ধুয়ে প্রস্তুত হয়ে ব্যাগটা নিয়ে বের হয়ে যাই ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস ধরার জন্য। যাওয়ার পথে মোড়ের হোটেলটাতে সকালের নাস্তা সেরে নেই। বাসায় বুয়া সকালের খাবার রান্না করেন না।

একদিন বলেছিলাম, বুয়া মুখ বাকা করে জানালো, ভাইজান, আমগোওতো সক্কালের ঘুম বলে কিছু্ আছে। নাকি নাই? আমি আর কোন কথা বাড়ালাম না তখন। কারণ সকালের ঘুম আমারও খুব পছন্দের। সুতরাং অন্যের সকালের ঘুম নষ্ট করে কি লাভ! ইউনিভার্সিটিতে খুব কম দিনই রুটিন অনুযায়ী পুরো ক্লাস হয়। তারপরেও অপেক্ষা করি বসে বসে।

ক্লাস শেষে সোজা ফিরে আসি বাসায়। বিকালে টিউশনীতে যাই। সন্ধ্যায় ফিরে আসি। গল্প করার লোকজন তখন পাই না। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকি।

তারপর উঠে পড়তে বসি। অনেক রাতে ঘুমাতে যাই। এই হচ্ছে সাদামাটা রুটিন। মাঝেমধ্যে এইসব খুব বিরক্ত লাগে। পরক্ষণই মনে আসে, এই বিরক্ত হওয়া মধ্যবিত্তের সেন্টিমেন্ট ছাড়া আর কিছু না।

অবশ্য নিজেকে মধ্যবিত্ত দাবি করাও বোধ হয় ঠিক না। দিনে এনে দিনে খাওয়ার মতোই আমার অবস্থা। টিউশনীর টাকাটা দিয়ে কোনমতন চলি। ইদানিং প্রায়ই অর্থাভাবে পড়তে হয়। প্রায়ই ভাবি আরেকটা টিউশনী করা শুরু করবো।

কিন্তু যতসই কিছু খুঁজে পাই না। নতুন টিউশনীটা বেশ ভালোই চলছে। ছাত্রীর মা একটু কড়া টাইপ হলেও অন্তরটা ভালো বলতে হয়। অন্তত প্রতিদিনকার বিকালের খাবার তাই বলে। আমি হচ্ছি অনেকটা ছাপোষা টাইপের টিউটর।

খাবার ভালোতো মহিলার মন ভালো, খাবার খারাপ মহিলার মন খারাপ। তবে কয়েকদিনের অভিজ্ঞতায় বুঝতে পারছি,এই ছাত্রীকে নিয়ে আমি সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি। প্রথম দিনের পড়ানোর কথাই বলি। বেশ আগে গিয়ে বসে আছি। আমাকে এক ঘন্টা বসিয়ে রেখে ছাত্রী আসলো।

ততক্ষণে ভিতরে ভিতরে বেশ ক্ষোভ জমে গেছে। টিউশনী করাতে আসছি বলে কি আমার কোন মুল্য নেই! আমি কি কেনা চাকর! মধ্যবিত্তের আরো অনেক অনেক সেন্টিমেন্ট। এইসব দিয়ে অবশ্য জীবন চলবে না। তাই চুপ করে থেকে পড়ানোতে মনোযোগ দিলাম। শুরতেই ছাত্রী অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞেস করে বসলো- স্যার আপনাকে কি বলে ডাকবো? স্যার নাকি ভাইয়া? কেন? তুমিতো এরইমধ্যে একটা সম্বোধনে ডেকে ফেলছো।

কিছুটা অবাক এবং বিরক্ত হয়ে বললাম। ও, কিন্তু আপনাকে দেখে ঠিক স্যারদের মতো মনে হয় না। মেয়েটা ফিক করে হেসে দিলো। আমি তারচেয়ে গম্ভীর হয়ে বললাম- তো আমাকে এরজন্য কি করতে হবে? আমার গাম্ভীর্য্য দেখে ছাত্রী কিছুটা ভয় পেয়ে গেছে মনে হলো। সেইদিন ভালোভাবেই পড়ানো শেষ করতে পেরেছিলাম।

পরে আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম ছাত্রীর অনেক বিষয়েই আগ্রহটা বেশি। আমি যথাসম্ভব কড়া নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করি। কারণ জানি, ছাত্রীর মা খুব কড়া নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন আমার জন্য। তবে মেয়েটার কিছু কাজ মাঝে মাঝে মজারই মনে হয়। যেমন হঠাৎ করেই্ একদিন বলে উঠলো- স্যার আপনি কি ফুল আঁকতে পারেন? না।

ছোট্ট করে বললাম। কি পারেন আপনি! আমি খুব সুন্দর ফুল আঁকতে পারি। দেখতে চান ? যান আপনাকে একটা ফুল একে দিবে একদিন। ও, আচ্ছা। আমি হাই তুলে বললাম।

আগের রাতে না ঘুমানোর ফল বুঝতে পারছিলাম তখন। ছাত্রী আমার নিরাসক্ত ভঙ্গিতে বেশ হতাশ হলো মনে হয়। সেই দিন আর তেমন কথা বলেনি। আমিও অবশ্য বেশি ঘাটাতে যাই নি। টিউশনী করে ফিরি সন্ধ্যার দিকে।

কখনো একটু রাত হয়ে যায়। কখনো আবার বিকালেই ফিরতে পারি। যাওয়ার পথেই একটা পার্ক। পার্কের ভিতর দিয়ে গেলে বেশ তাড়াতাড়ি পৌছা যায়। তবে ইদানিং আমি খুব দ্রুত পার্কটা পার হয়ে যাই।

একটু রাত হয়ে গেলে পার্কের ভিতর দিয়ে সংক্ষিপ্ত রাস্তা দিয়ে যাই না। এমনটা অবশ্য একদিনের ঘটনার কারনে। একদিন পড়াতে পড়াতে রাত একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল। ফিরছি পার্কের ভিতর দিয়ে। হঠাৎ নারীকন্ঠের ডাকে থমকে দাড়ালাম।

দেখলাম কাছেই বেশ সেজেগুজে দুইটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। উগ্র মেকআপ পরিস্কার। একজন বলে উঠলো, আসবো নাকি সঙ্গে? আমি তখন আরেকটা টিউশনীর চিন্তার ভিতরে। কি ভেবে যেন বলে উঠলাম, আমার সাথে আপনি আসবেন কেন! বলা শেষেই অমঙ্গলের চিন্তা মাথায় চলে আসলো। জোরে হেটে পার্কের রাস্তা পার হয়ে আসছি, এমন সময় দুর থেকে শুনলাম একটা মেয়ে আরেকটার উপর হেসে পড়তে পড়তে বলে উঠলো, ন্যাকা একটা! যেন কইমাছ উল্টে খেতে জানে না।

একদিন টিউশনীতে যাওয়ার পর ছাত্রী হাসিমুখে জানালো, তারা নানীবাড়ি বেড়াতে যাবে। তাই আজ পড়বে না। কিছুই বলার ইচ্ছা হলো না তখন। শুধু মনে পড়লো, ক্লাস শেষে একটা মুহুর্তও বিশ্রাম নিয়ে হেটে হেটে টিউশনীতে আসার কথা। যেখানে টিউশনী করতে আসি, বাসা থেকে জায়গাটার দূরত্ব অনেক।

তবে টাকা বাচানোর জন্য হেটে হেটে যাই। বের হয়ে চলে আসলাম। অবশ্য ছাত্রীর মা বিকালের নাস্তার কথা বলেছিলো। আমি ভিতরে ভিতরে খুব বিরক্ত ছিলাম বলে না খেয়েই বের হয়ে আসি। রাস্তায় এলোমেলো হাটতে হাটতে ভাবি, আরেকটা টিউশনী যোগাড় করতে হবে।

একটা টিউশনীর টাকায় ঠিকমতো চলছে না। রাস্তায় হাটতে গিয়ে বিকালের খাবারের কথা মনে পরলো। তখন রাগ করে না খেয়ে চলে আসলাম। এখন নিজের টাকায় কিনে খেতে হবে। হঠাৎ মনে পড়লো, অবন্তীদের বাসার কথা।

সেই যে অবন্তীর আব্বুর বাজারের ব্যাগ এগিয়ে দিতে তাদের বাসায় গিয়েছিলাম, তারপর আর যাওয়া হয়নি। অবশ্য অবন্তীর আব্বুতো বলছে মাঝেমধ্যে যেতে। তাহলে আজকে যাওয়া যায়। হাটতে হাটতে অবন্তীদের বাসার সামনে গিয়ে উপস্থিত হলাম। বাসার নাম কৃষ্ণচুড়া।

বেশ কমন একটা নাম। সেদিনই দারোয়ানের সাথে অবন্তীর বাবা পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। দারোয়ান কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ভিতরে যেতে দিলো। চাহনীটা এমন যে, কই থেকে এইসব পাগল-ছাগল এসে হাজির হয়। পরনের কাপড় দেখলেতো এই বাসায় আসার যোগ্য মনে হয় না।

আমি টিটকারীমুলক কথাকেও ইদানিং পাত্তা দেই না, আর চাহনীতো কোন ছার! ভিতর বাড়ি গিয়ে কলিং বেল টিপলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর ফিরে আসবো এমন সময় দরজা খুলে গেল। বের হয়ে আসলো অবন্তী। হাতে রংতুলি। আমার দিকে তাকিয়েই বললো- আরে আপনি! (চলবে.....) প্রথম পর্ব


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.