আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম ও বিজ্ঞান : পর্ব- ৫

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ

ধর্ম ও বিজ্ঞান : পর্ব- ৫ Click This Link রায়হান “লোকেরা কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ একথা বললেই তারা অব্যাহতি পেয়ে যাবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আর আমি তো এদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম; অতএব আল্লাহ্‌ অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন তাদেরকে যারা সত্যবাদী এবং তিনি অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন মিথ্যাবাদীদেরকেও। ” (কোরআন ২৯:২-৩) একটা সময় ছিল যখন মানুষ জানতো না যে, গাছ-পালা তথা উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে। তারাও ব্যাথা পায়। তারাও কাঁদে। কারণ সাদা চোখে সেটা তো বুঝতে পারা সম্ভব নয়।

কিন্তু মানুষ ও পশু-পাখিদের যে প্রাণ আছে সেটা তো দেখেই বুঝা যায়। ফলে সেই সময় কে যেন (সঠিক জানিনা) ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ নামক ফিলসফি প্রচার শুরু করেন। সেই ফিলসফির উপর ভিত্তি করে আজও কিছু মানুষ নিরামিষ ভোজন করে। অর্থাৎ তারা মাছ-মাংস না খেয়ে শাক-সব্জি ও অন্যান্য জিনিস খায়। কিন্তু উদ্ভিদেরও যে প্রাণ আছে সেটা বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছেন।

ফলে নিরামিষভোজীদের ফিলসফি কিন্তু মডার্ণ বিজ্ঞানের যুগে অচল হয়ে পড়েছে। কে কী খাবে আর কে কী খাবেনা সেটা নিজ নিজ ব্যাপার হলেও এই বিষয়টি উত্থাপন করার পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে, নিরামিষভোজীরা আমিষভোজীদেরকে এনিম্যাল, বুচার, ইত্যাদি বলে গালিগালাজ করে। তাদের আরো যুক্তি হচ্ছে, যারা পশুর মাংস খায় তারা নাকি পশুর মত আচরণ করে! কিন্তু যারা শাক-সব্জি খায় তারা শাক-সব্জির মত আচরণ করে কি-না সেটা জানা যায় না! মজার বিষয় হচ্ছে, হিটলার নাকি নিরামিষভোজী ছিল! তাহলে তাদের এই যুক্তি কিন্তু একদমই মাঠে মারা যাচ্ছে! তারা বিজ্ঞান ও যুক্তি-তর্কের ধার ধারে না। শুধুমাত্র আবেগ দিয়ে আমিষভোজীদেরকে আক্রমণ করে। এমনও শোনা যায় যে, নিরামিষভোজীরা নাকি নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্লটার হাউজে নিয়ে গিয়ে সেখানোকার ‘বিভৎস সিনারিও’ দেখিয়ে তাদেরকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করে, যেটা একদমই অনৈতিক।

নিরামিষভোজীদের বিশ্বাস অনুসরণ করে আগামীকাল থেকে এই পৃথিবীর সবাই যদি নিরামিষভোজী হয়ে যায় সেক্ষেত্রে বাস্তব অবস্থাটা একবার ভেবে দেখুন! তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, এই ফিলসফি সার্বিকভাবে বাস্তবসম্মতও নয়। অন্যদিকে আমিষভোজীরা বাস্তবতা ও পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে আমিষভোজী ও নিরামিষভোজী উভয়ই হতে পারে। নোট : যদিও নিরামিষভোজীরা ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ নামক ফিলসফিতে বিশ্বাস করে তথাপি কেহ এই মহাপাপ করে ফেললে তার শাস্তি কী হবে এবং কে-ই বা এই শাস্তি দেবে সেটার যৌক্তিক কোন ব্যাখ্যা তারা দিতে পারে না। যেমন হিটলার নিরামিষভোজী হওয়া সত্ত্বেও মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছে। তাহলে নিরামিষভোজীদের ফিলসফি অনুযায়ী হিটলারের শাস্তি হওয়া উচিত কি-না এবং কে-ই বা এই শাস্তি দেবে? মহাপাপের শাস্তিস্বরূপ হিটলারের আত্মা হয়ত কোন এক শাক-সব্জির দেহে স্থানান্তরিত হবে এবং সেই শাক-সব্জিকে আবার কোন নিরামিষভোজী ভক্ষণ করবে! অথবা হিটলারের আত্মা হয়ত কোন কীট-পতঙ্গের দেহে স্থানান্তরিত হবে এবং সেই কীট-পতঙ্গকে কোন পাখি খেয়ে ফেলবে! এই হচ্ছে হিটলারের মহাপাপের ‘ন্যাচারাল’ শাস্তি! অধিকন্তু হিটলারের আত্মাকে কে এবং কীভাবে অন্য কোন প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহে স্থানান্তরিত করবে তারও যৌক্তিক কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।

অথচ এটিই আবার কোন কোন ধর্মের একদম মৌলিক ফিলসফি বা বিশ্বাস! “আমি বনি ইসরাঈলের প্রতি এ বিধান দিয়েছি যে, কেউ কাউকে প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ কিংবা দুনিয়ায় ফাসাদ সৃষ্টি করার কারণ ছাড়া হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল, আর যে কেউ কারো জীবন রক্ষা করল, সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করল। ” (কোরআন ৫:৩২) আর এখানেই কিন্তু এয়াবসলিউট নৈতিকতার প্রশ্ন চলে আসে যার ব্যাখ্যা কেহই দিতে পারছে না। হিটলার ও তার ভিকটিমদের ন্যায়বিচার হওয়া উচিত কি-না … উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে এই ন্যায়বিচার কে এবং কীভাবে করবে … তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা তারা দিতে পারবে বলে মনে হয় না। তবে কেহ যদি মনে করেন যে তার কাছে যৌক্তিক ব্যাখা আছে তাহলে তাকে সদালাপ সাইটে তার ব্যাখ্যা উপস্থাপন করার জন্য আহবান জানানো হচ্ছে। “তোমাদের বৃথা আকাঙ্খায় কোন কাজ হবে না এবং আহলে কিতাবের বৃথা আকাঙ্খায়ও কোন কাজ হবে না।

যে কেউ মন্দ কাজ করবে সে তার প্রতিফল পাবে এবং সে আল্লাহ্‌ ছাড়া তার কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী পাবে না। ” (কোরআন ৪:১২৩) ৯/১১ নাটক ও টেররিজমের সুযোগ নিয়ে ইসলামকে একটি ভায়োলেন্ট, ইন্ট্যলারান্ট, ও ভয়ঙ্কর ধর্ম বানানোর জন্য কিছু কিছু ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মে হেভেন ও হেলকে অস্বীকার করা শুরু করেছে! তাদের গড নাকি এতটাই লাভিং ও কাইন্ড যে, তার কাছে হিটলার ও মাদার তেরেসার মধ্যে কোন পার্থক্যই নেই! শুধু তা-ই নয়, (অপ)বিজ্ঞানের নামে ডারউইনবাদীদের ঠেলা খেয়ে তারা এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরকেও অস্বীকার করা শুরু করেছে! কেহ কেহ ন্যাচারের মধ্যে মাথা গোঁজা শুরু করেছে; কেহ কেহ আবার তাদের বিশ্বাসকে স্পিনোজা ও আইনস্টাইনের বিশ্বাসের সাথে ‘লিঙ্ক’ করে (অপ)বিজ্ঞানের নামে প্যানথিইজমের মধ্যে মাথা গোঁজা শুরু করেছে। ভাব-সাব দেখে মনে হচ্ছে, ন্যাচার ও স্পিনোজার বিশ্বাসের মধ্যে মাথা গুঁজলেই প্রকৃত যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী, ও বিজ্ঞানমনা হওয়া যায়! ভাল কথা, তাদের ধর্মে যদি সত্যি সত্যি হেভেন, হেল, ও ক্রিয়েটরের কোন কনসেপ্ট না থাকে তাহলে সেটা অকপটে স্বীকার করে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেওয়া উচিত। অন্যথায় লুকোচুরি খেললে মানুষ ভন্ড বলবে! কিছু ইল্লজিক্যাল, ইরাশনাল, অমানবিক, ও ভেগ ডকট্রিন দিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে আমজনতাকে বোকা বানিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না।

এই প্রশ্নের জবাব দিতে গেলেই কে বা কারা প্রকৃত যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী সেটা দিনের আলোর মতই পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা। “মহামহিমান্বিত তিনি, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফয়সালাকারী গ্রন্থ আল-কোরআন নাযিল করেছেন, যাতে তিনি বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হোন; যিনি আসমান ও জমিনের আধিপত্যের অধিকারী এবং তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, এবং রাজত্বে তাঁর কোন শরীক নেই। তিনিই প্রত্যেকটি বস্তু সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে পরিমিত করেছেন নির্ধারিত অনুপাতে। আর তারা তাঁর পরিবর্তে এমন সব উপাস্য গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং তারা নিজেদের অপকার কিংবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না। আর তাদের কোন ক্ষমতা নেই মৃত্যুর উপরে, আর না জীবনের উপরে, আর না পুনরায় জীবিত করে উঠানোর উপরে।

” (কোরআন ২৫:১-৩) (চলবে …)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.