আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেলানী হত্যাকারী নির্দোষ ।। বিচার বঞ্চিতা ফেলানী, বঞ্চিত বাংলাদেশ

জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায়

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি। শীতের সকাল। কুড়িগ্রাম জেলার অনন্তপুর সীমান্ত।

কথিত আছে প্রতিবছর ইসরাইল-ফিলিস্তিন সীমান্তে দখলদার ইসরাইল যত পরিমাণে ফিলিস্তিনি খুন করে তার চাইতেও নাকি বেশি হত্যাকা- ঘটিয়ে থাকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তের কোন না কোন অংশে বিএসএফ এর হাতে নির্যাতিত হয়, আটক হয় বাংলাদেশের মানুষ। ভয়ঙ্কর সেই মৃত্যুফাঁদ অতিক্রম করতে গিয়ে বাংলাদেশের মেয়ে ফেলানী বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হয়। বাংলাদেশের নাগরিক ফেলানী দিল্লিতে কাজ করত গৃহকর্মী হিসেবে। দীর্ঘ দশ বছর সেখানে সে কাজ করে।

বিয়ে ঠিক হওয়ায় বাবা নুরুল ইসলাম নুরুর সাথে কাটাতারের সীমানা পার হয়ে দেশে আসার চেষ্টা করে সে। কিন্তু বিধিবাম। কাটাতারের বেড়ায় থাকা অবস্থায়ই সে বিএসএফ এর গুলিতে প্রাণ হারায় এবং দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা সে কাটাতারে ঝুলে থাকে। পরে তাকে টেনে হিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিএসএফ তখন দাবি করে তারা আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালিয়েছে।

তাদের বক্তব্যে অবাক হয় বিশ্ব বিবেক। পনের বছর বয়সী একজন কিশোরী সশস্ত্র বিএসএফ এর কাছে হুমকিস্বরূপ! বিএসএফের হাতে ফেলানীর এই নির্মম হত্যাকা-ের বিচার দাবি করে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও ব্যক্তিরা। নিহত ফেলানীর বাবাও মিডিয়ায় মেয়ে হত্যার বিচারের দাবি জানান। পরবর্তীতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির পক্ষ থেকেও বিএসএফের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে ফেলানী হত্যার বিচারের জন্য চাপ দেয়া হয়। বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১২ সালের মার্চে নয়াদিল্লীতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে ফেলানী হত্যার বিচার দ্রুত শুরু করা হবে বলে আশ্বাস দেন বিএসএফের মহাপরিচালক।

অবশেষে বিএসএফ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় দ-বিধির ৩০৪ ধারা (অনিচ্ছাকৃত খুন) এবং বিএসএফ আইনের ৪৬ ধারায় বিচার শুরু হয় ফেলানী হত্যার। এরই ধারাবাহিকতায় বিএসএফ সদর দপ্তর ‘জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্ট’ গঠন করে এবং আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য বাংলাদেশের দুইজন সাক্ষী, একজন আইনজীবী এবং বিজিবির একজন প্রতিনিধিকে ভারতে যেতে বলা হয়। সে অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কুুড়িগ্রামের ৪৫ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউল হক খালেদ, কুড়িগ্রাম আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন এবং ফেলানীর বাবা মো. নুরুল ইসলাম ও মামা মো. আব্দুল হানিফকে ভারতে গিয়ে সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি দেয়। গতকাল এ হত্যাকা-ের রায় ঘোষিত হয়। রায়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) অভিযুক্ত সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সেই আদালত।

বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পরপরই মুক্তি দেওয়া হয় বিএসএফের ১৮১ নম্বর ব্যাটেলিয়নের সদস্য কনস্টেবল অমিয় ঘোষকে। বিএসএফ সূত্র এই খবর নিশ্চিত করেছে। পাঁচজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বিচারক প্যানেলের নেতৃত্ব দেন বিএসএফের গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি কমিউনিকেশনস সি পি ত্রিবেদী। আদালতটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোর্টমার্শালের সমতুল্য। এখন চূড়ান্ত ছাড়পত্রের জন্য রায়টির কপি বাহিনীর মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে ভারতীয় দ-বিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিলো। ফেলানী হত্যার মামলায় সাক্ষ্য দিতে বাংলাদেশ থেকে তার বাবা ও মামা ভারতে গিয়েছিলেন। এর আগে ধারণা করা হয়েছিল যে সর্বোচ্চ সাত বছরের সাজা হতে পারে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যের। কারণ এমনকি ইচ্ছাকৃত হত্যাকা-ের ক্ষেত্রেও বিএসএফ এর আইনে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদ-ের বিধান রয়েছে। কিন্তু চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-ে ন্যুনতম শাস্তি না হওয়াটা হতবাক করেছে সবাইকে।

ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম এ বিচারের রায়কে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন তিনি এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট নন, সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে তিনি আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হবেন। অন্যদিকে কুড়িগ্রাম আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.