আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম ও বিজ্ঞান : পর্ব-১

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ

ধর্ম ও বিজ্ঞান : পর্ব-১ Click This Link রায়হান “সেদিন বড়ই দুর্ভোগ হবে মিথ্যাবাদীদের জন্য, যারা সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কাজে অনর্থকভাবে লিপ্ত থাকে। ” (কোরআন ৫২:১১-১২) (ক) বিষয়টি শুরুর আগে কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নিলে পাঠকদের বুঝতে সুবিধা হবে। কোরানে ‘বৈজ্ঞানিক তথ্য’ খোঁজাখুজি শুরুর অনেক আগে থেকেই অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মগ্রন্থে বৈজ্ঞানিক তথ্য আছে বলে দাবি করে আসছে। মুসলিমরা কখনোই কিন্তু তাদের দিকে লাঠি-সোটা নিয়ে তেড়ে যায়নি বা তাদেরকে অপবিজ্ঞানী, অসৎ, প্রতারক, মিথ্যেবাদী, এক্সট্রিমিষ্ট ইত্যাদি বলে গালিগালাজও করা হয়নি। তাছাড়া মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের মধ্যেও কিছু তথ্য ও সত্য বাণী থাকাটাই স্বাভাবিক, যেহেতু কোরান অনুযায়ী যুগে যুগে প্রত্যেক জাতির মধ্যে মেসেজ সহ মেসেঞ্জার পাঠানো হয়েছে (১০:৪৭, ৩৫:২৪, ১৬:৩৬, ৪০:৭৮, ৪:১৬৪)।

কিন্তু মুসলিমরা কোরানে ‘বৈজ্ঞানিক তথ্য’ খোঁজাখুজি শুরুর পর থেকে দু-একটি ধর্মাবলম্বীদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে! তারা মুসলিমদের দাবিকে মেনে নিতে তো পারছেই না, তা না হয় ঠিক আছে; সেই সাথে আবার বিভিন্নভাবে প্রোপাগান্ডাও ছড়ানো হচ্ছে। এমনকি অমুসলিম বিজ্ঞানী/স্কলার’রা কোরানের স্বপক্ষে কিছু বললেও তাদেরকে কোন তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই অসৎ, মিথ্যেবাদী, ঘুষখোর, অপবিজ্ঞানী ইত্যাদি বলে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। কিন্তু কেন? ওয়েল, এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে কিছুটা ব্যাকগ্রাউন্ড জানার দরকার আছে। মরণ কামড়ের কারণ তো বুঝতে হবে! কোরানের বৈজ্ঞানিক তথ্য ও অন্যান্য যে কোন বিষয়ের বিরুদ্ধে যেহেতু প্রোপাগান্ডা চালানো হয় মূলতঃ দুটি ধর্মের ক্ষুদ্র অথচ উচ্চ শিক্ষিত কিছু গ্রুপ থেকে সেহেতু এই ধর্মগুলোর ধর্মগ্রন্থ নিয়ে সামান্য আলোকপাত করা যাক। বাইবেল : বাইবেল প্রথমত দুই খন্ডে বিভক্ত : ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্ট।

তাছাড়াও অনেকেই হয়ত জানেন যে, বর্তমান বাইবেল অনেকগুলো ছোট ছোট বই এর সমষ্টি। মোজেস ও যীশুখ্রিস্টের মৃত্যুর পর প্রায় পনেরশ’ বছর ধরে প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ জন অথার মিলে এই বইগুলো লিখা হয়েছে। বইগুলোর অথার ও রচনার সময়কাল আলাদা। পরবর্তীতে সবগুলো বইকে একত্রে করে ‘বাইবেল’ নাম দেওয়া হয়েছে। ‘বাইবেল’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘লাইব্রেরী’, যেহেতু বাইবেলের মধ্যে অনেকগুলো ছোট ছোট বই আছে।

তবে ‘বাইবেল’ বলে কোন শব্দ বাইবেলে নেই। যাহোক, মোদ্দা কথা হচ্ছে, প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ জন অথার মিলে শত শত বছর ধরে বাইবেল লিখা হয়েছে। এটি আমার কোন বানোয়াট কথা নয়, এটি তাদেরই কথা। তাছাড়া বাইবেল ও তার ইতিহাস পড়লেও বুঝা যায়। এমনকি বর্তমান বাইবেলে মোজেস ও যীশুখ্রিস্টের সরাসরি কোন অবদানও নেই।

এ তো গেল একটি দিক। যারা ড. উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের সাথে জাকির নায়েকের ডিবেট দেখেছেন তারা খুব ভালো করেই জানেন যে, ড. ক্যাম্পবেলের মত বাইবেলের একজন প্রমিনেন্ট স্কলারও বাইবেল থেকে উল্লেখ করার মত তেমন কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি। নিদেনপক্ষে যুক্তি দিয়ে দাবি করতে হবে তো। কিন্তু সেই দাবিটাই তিনি করতে পারেননি। তবে ইন্টারনেট সার্চ দিলে দেখা যায় যে মিশনারিজরা বাইবেল থেকে গোটা কয়েক বৈজ্ঞানিক তথ্য দাবি করেছে।

তবে তাদের দাবির স্বপক্ষে যেমন কোন যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি তেমনি আবার দু-একটি ছাড়া বাকিগুলোকে একদমই সিলি মনে হয়েছে। যাহোক, কোনরকম তেনা পেঁচানিতে না যেয়ে মিশনারিজদের দাবিকেই সত্য বলে ধরে নেওয়া যাক। অর্থাৎ ধরেই নেওয়া যাক যে, বাইবেলে সত্যি সত্যি গোটা চার-পাঁচেক বৈজ্ঞানিক তথ্য আছে, যদিও আধুনিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মধ্যে সম্ভবত কিছু নেই। এবার এই গোটা চার-পাঁচেক বৈজ্ঞানিক তথ্যকে যদি চল্লিশ-পঞ্চাশ জন অথারের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয় তাহলে প্রত্যেকের ভাগে প্রায় ০.১ টি করে বৈজ্ঞানিক তথ্য পড়বে!?! অর্থাৎ প্রতি দশ জন অথারের ভাগে একটি করে বৈজ্ঞানিক তথ্য পড়বে!!! ‘শত শত বছর’ সময়কাল না হয় বিবেচনার বাহিরেই রাখা হল। মজার বিষয় হচ্ছে, এই গোটা কয়েক বৈজ্ঞানিক তথ্যের বিপরীতে ডজন ডজন সুস্পষ্ট অবৈজ্ঞানিক তথ্য এবং সুস্পষ্ট গাণিতিক ও অন্যান্য অসঙ্গতিও বাইবেলে আছে, যেগুলো মিশনারিজরাই ডিফেন্ড করার চেষ্টা করে না (ড. ক্যাম্পবেল বনাম জাকির নায়েক ডিবেট সহ অন্যান্য ডিবেট দ্রষ্টব্য)।

এমনকি বাইবেলকে যদি চল্লিশ-পঞ্চাশ ভাগে ভাগ করা হয় তাহলে প্রত্যেক অথারের ভাগে হয়ত ৪-৬ পেজ করে পড়বে! অর্থাৎ বাইবেলের প্রত্যেকটি অথার গড়ে ৪-৬ পেজ করে বাইবেলে কন্ট্রিবিউট করেছেন! কোরান ও প্রফেট মুহাম্মদের জন্য ঈর্শা হবে না কেন! আর কেনই বা প্রোপাগান্ডা চালানো হবে না এই বলে যে, বাইবেল থেকে কোরান কপি করা হয়েছে! পাঠক! ইতোমধ্যে বাইবেলে নারীদের (করুণ) অবস্থা দেখেছেন নিশ্চয়। এবার বাইবেলে বিজ্ঞানের (করুণ) অবস্থাও দেখলেন তো! ইরাশনাল থিওলজি ও মৌলিক বিশ্বাস যেমন ম্যান-গড, ট্রিনিটি (ফাদার-সান-হলিঘোস্ট), অরিজিনাল সিন, ইত্যাদিকে না হয় বিবেচনার বাহিরেই রাখা হল। এবার তাহলে ভেবে দেখুন, এই মডার্ন ও বিজ্ঞানের যুগে উল্লেখ করার মত বাইবেলে আদৌ কিছু আছে কি-না। এই যখন বাইবেলের বাস্তব অবস্থা তখন ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এর বিজ্ঞানীদের প্রায় সবাই নাস্তিক কেন এবং সেই সাথে ইউরোপ-আমেরিকাতে নাস্তিকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে কেন তার কারণ এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। আইনস্টাইন-ই বা ধর্ম সম্বন্ধে এতটা উদাসীন ছিলেন কেন সেটাও পরিষ্কার হওয়ার কথা।

আর এ কারণেই মিশনারিজরা এই বিষয়গুলোর উপর কোনরকম জোর না দিয়ে ‘সেক্যুলার’ সেজে কৌশলে ‘লাভ’ এর উপরই বেশী জোর দিয়ে থাকে (God died for your sins! He loves you! God is love! God = love?)! মিশনারিজদের নাম্বার-১ ‘যুক্তি’ হচ্ছে ‘লাভ’। তারা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে কতবার যে এই ‘লাভ’ শব্দটাকে ব্যবহার করে তার কোন হিসাব নাই! কিন্তু লাভ ও শান্তির বাণী সবগুলো ধর্মগ্রন্থেই আছে। ফলে এটি ‘স্পেশাল’ কিছু হতে পারে না। বেদ-গীতা-রামায়ণ-মহাভারত : ব্রাহ্মিনিজমে বেদ হচ্ছে সবচেয়ে পুরাতন ধর্মগ্রন্থ। বেদ আবার চার খন্ডে বিভক্ত : ঋগ্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ, ও ইয়াজুরবেদ।

এই চার খন্ড বেদ এর লেখক যে কতজন তা আমার জানা নেই। এমনকি বেদ এর লেখক বা লেখকবৃন্দ আসলে কে বা কারা - তারা ক্রিয়েটরের মেসেঞ্জার না-কি অবতার না-কি শুধুই মনি-ঋষি ছিলেন - সেটারও সঠিক কোন হদিস পাওয়া যায় না। তবে বাইবেলের মত যুগ যুগ ধরে অনেক অথার মিলে যে এই চার খন্ড বেদ রচনা করা হয়েছে তাতে মনে হয় কোন সন্দেহ নেই। তথাপি চার খন্ড বেদ এর লেখক নিদেনপক্ষে চার জন-ই ধরে নেওয়া যাক। গীতা কতজন মিলে লিখা হয়েছে সেটাও আমার জানা নেই।

এক্ষেত্রেও গীতার লেখক একজন ধরে নেওয়া যাক (গীতা আসলে মহাভারতের একটি অংশ)। তবে গীতা ও মহাভারতে কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের সরাসরি কোন অবদান নেই। তাছাড়াও ব্রাহ্মিনিজমের নামে শত শত বছর ধরে ডজন ডজন ধর্মগ্রন্থ লিখা হয়েছে এবং এই গ্রন্থগুলোর লেখক ও রচনার সময়কালও আলাদা। এবার বেদ-গীতাতে বিশ্বাসীদের থেকেই জেনে নিতে পারেন তারা তাদের ধর্মগ্রন্থে এ পর্যন্ত কতগুলো বৈজ্ঞানিক তথ্য আবিষ্কার করেছে - নিদেনপক্ষে যুক্তি দিয়ে দাবি করেছে। সুস্পষ্ট অবৈজ্ঞানিক তথ্য ও অসঙ্গতি যদি কিছু থেকে থাকে সেগুলোকে আপাততঃ ভুলে যেতে পারেন।

তাদেরই দেওয়া সংখ্যাকে এবার অথারের সংখ্যা তথা ধর্মগ্রন্থের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে দেখুন প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থের ভাগে কয়টি করে বৈজ্ঞানিক তথ্য পড়ে। মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলা যেতে পারে যে, এমন ‘উটকো’ ক্যালকুলেশনের কথা শুনে বেদ-গীতাতে বিশ্বাসীরা লজ্জায় বালিশে মাথা লুকাবে। তারা আসলে সবগুলো ধর্মগ্রন্থ থেকে দু-একটি করে পয়েন্ট নিয়ে সর্বসমেত যোগ করে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সেটা তো কোনভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। কারণ ধর্মগ্রন্থগুলোর অথার এবং রচনার সময়কালও আলাদা।

ফলে প্রত্যেকটি ধর্মগ্রন্থকে আলাদা আলাদা ভাবে বিচার করতে হবে। ঘটনার এখানেই কিন্তু শেষ নয়। কারণ এই দুটি ধর্মে বিশ্বাসীরা যথাক্রমে যীশুখ্রিস্ট ও শ্রীকৃষ্ণকে এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরের অবতার হিসেবে বিশ্বাস করে (Creator of the universe in human form)। ফলে বাইবেল ও গীতাতে দু-চারটা কেন শত শত বৈজ্ঞানিক তথ্য থাকলেও কি তাতে কোনভাবে প্রমাণ হবে যে তাঁরা এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটর? যার মাথায় সামান্যতমও ‘ঘিলু’ বলে কিছু আছে তার পক্ষেও এমন যুক্তিকে মেনে নেওয়া অসম্ভব। একটি ধর্মগ্রন্থের মধ্যে কম বা বেশী বৈজ্ঞানিক তথ্য কোনভাবেই একজন মানুষকে এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটর হিসেবে প্রমাণ করে না।

তাছাড়া যেখানে বাইবেল-বেদ-গীতা এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটরের বাণী কি-না তার স্বপক্ষেই তেমন কোন যুক্তি-প্রমাণ পাওয়া যায় না; সেখানে যে কোন ধর্মগ্রন্থ দিয়ে একজন মানুষকে এই মহাবিশ্বের ক্রিয়েটর বানানো সোনার পাথর বাটির মতই শুনায়, তা সেই ধর্মগ্রন্থের মধ্যে যত মিরাকলই থাক না কেন। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি অন্ধ বিশ্বাস। এমনকি কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য একটি গ্রন্থকে অটোমেটিক্যালি ক্রিয়েটরের বাণী হিসেবেও প্রমাণ করে না। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, নিউ টেস্টামেন্ট (যীশুখ্রিস্টের উৎস) ও মহাভারতে (শ্রীকৃষ্ণের উৎস) যদি কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য থেকেও থাকে, যদিও উল্লেখ করার মত তেমন কিছু আছে বলে মনে হয় না, সেটা তাদের বিশ্বাসের স্বপক্ষে কোন যুক্তিই বহন করে না। একই যুক্তি শ্রীরাম ও রামায়ণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

আর এ কারণেই বাইবেল ও বেদ-গীতাতে বিশ্বাসীরা এই বিষয়টি নিয়ে সেভাবে মাথা ঘামায় না। কিন্তু বাইবেল ও বেদ-গীতাতে বিশ্বাসীরা লজ্জায় বালিশে মাথা লুকালেও বিশেষ একটি ধর্মের এলিট গ্রুপের নাস্তিকরা বালিশে মাথা লুকাতে রাজি নন। কারণ তারা নাস্তিক। নাস্তিক দাবি করেও এই সত্যগুলোকে খোলাখুলিভাবে বলা তো দূরে থাক বরঞ্চ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ‘যাহাই লাউ তাহাই কদু’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। জাতে মাতাল হলেও তালে কিন্তু ঠিকই আছে।

কোরানের বৈজ্ঞানিক তথ্যের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডার যৌক্তিক কারণ ইতোমধ্যে নিশ্চয় পরিষ্কার। কোরানকে ডিসক্রেডিট করার জন্য বার বার এমন কথাও বলা হচ্ছে যে, পেট্রোডলার ও ইচ্ছা থাকলে যে কোন গ্রন্থের মধ্যে বৈজ্ঞানিক তথ্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব! এ যেন মেয়ের হাতের মোয়া! কিন্তু এই উটকো দাবির স্বপক্ষে কখনোই কোন প্রমাণ হাজির করা হয়নি। ব্যাপারটা যদি এতটাই সহজ হত তাহলে ইহুদী, খ্রিস্টান, ব্রাহ্মণ, বৌদ্ধ, ও শিখরা তাদের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে ইতোমধ্যে হাজার হাজার বৈজ্ঞানিক তথ্য আবিষ্কার করে ফেলতেন। তারা যে চেষ্টা করছে না তা কিন্তু নয়। অথচ ‘বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের ডিসক্রেডিট করা হচ্ছে’ বলে ইসলামিক স্কলারদেরকেই উল্টোদিকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর (অপ)চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

কত নিম্নরুচির প্রোপাগান্ডা! একটি ধর্মগ্রন্থকে ডিসক্রেডিট করার জন্য যত রকমের প্রতারণা সম্ভব তার সবগুলোই ব্যবহার করা হয়েছে। আমি নিজে কয়েকজন খ্রিস্টান ও ব্রাহ্মণের টেস্টিমনি শুনেছি যারা ইসলাম গ্রহণ করার পেছনে অনেকগুলো যুক্তির মধ্যে কোরানের বৈজ্ঞানিক তথ্যকেও একটি যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছে। বাইবেল ও বেদ-গীতাতেও কোরানের মতই বৈজ্ঞানিক তথ্য থাকলে তারা এই বিষয়টাকে হাইলাইট করতে যাবে কেন? কমনসেন্স! ধর্মকে বিজ্ঞান থেকে কীভাবে পৃথক করা যাবে সেটা কিন্তু কোনভাবেই মাথায় আসে না। ধর্ম ও বিজ্ঞান কি পানি ও চিনির মিশ্রণ যে তাদেরকে কোন কারণে পৃথক করার প্রশ্ন উঠবে! বিজ্ঞান মহলে যে কোন বিষয়ের বিপরীতে অনেক ক্ষেত্রেই একাধিক তত্ত্ব প্রস্তাব করা হয়। অবশেষে কোন একটি তত্ত্ব বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

ধর্মগ্রন্থগুলোও একেকটি তত্ত্বের মত। সেখানে পার্থিব-অপার্থিব অনেক বিষয় অ্যাড্রেস করা হয়েছে। চার্লস ডারউইনের ‘দা অরিজিন অফ স্পেসিজ’-ও একটি তত্ত্ব, বিজ্ঞানের সঙ্গা অনুযায়ী এটি কোন বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ নয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে যে তত্ত্বগুলো তাল মিলাতে পারবে না সেই তত্ত্বগুলোকে মানুষ ধীরে ধীরে প্রত্যাখ্যান করবে। ইহাই নিয়ম।

ফলে ধর্মকে বিজ্ঞান থেকে পৃথক করার ‘অভিনব’ আবদারের মধ্যে কোনরকম শুভ উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হয় না। বরঞ্চ এটি প্রতিক্রিয়াশীলতারই লক্ষণ। এই ধরণের উটকো আবদারের আড়ালে আসলে ধর্মের নামে ছড়ানো-ছিটানো মিথ ও গার্বেজ নিয়ে একদিকে যেমন ব্যবসা করা হচ্ছে অন্যদিকে আবার গালিবল লোকজনকে বিভ্রান্তও করা হচ্ছে। (খ) ইন্টারনেট সার্চ দিলে অসংখ্য সাইট ও ফোরাম পাওয়া যায়, যেখানে কোরানের মধ্যে ডজন ডজন বা শত শত বা এমনকি হাজার হাজার অবৈজ্ঞানিক তথ্য, অসঙ্গতি, ও ভুল-ভ্রান্তি আছে বলে দাবি করা হয়েছে। এগুলোর বেশীরভাগই মিশনারিজ পরিচালিত সাইট, যাদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ফিসিং।

এগুলো থেকেই কিছু কিছু বিষয় কপি করে বাংলা ফোরামগুলোতে ‘জনপ্রিয়’ করে তোলা হয়েছে। কোরানের সাথে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ ও প্রচলিত বিশ্বাসকে গুলিয়ে ফেলে অত্যন্ত কৌশলে এই কাজটি করা হয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে ‘কোরানে অসঙ্গতি ও বৈজ্ঞানিক ভ্রম’ শিরোনামে একটি আর্টিকল লিখে সদালাপ সহ অনেকগুলো ফোরামে পোস্ট করা হয়েছিল : Click This Link সেখানে কোরানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত প্রায় সবগুলো প্রচলিত অভিযোগের জবাব দেওয়া হয়েছে। আরো বলা হয়েছিল যে, এ বিষয়ে কারো কোন দ্বিমত-প্রশ্ন-সংশয় থাকলে সেগুলো জানানোর জন্যও অনুরোধ রইল। এখন পর্যন্ত কেহই কিন্তু নিদেনপক্ষে দু-একটি পয়েন্ট নিয়েও এগিয়ে আসেনি।

এ ছাড়াও ইন্টারনেট জুড়ে কোরানের বিরুদ্ধে সবগুলো অভিযোগের জবাব দেওয়া হয়েছে। অথচ এগুলোকে পাস কেটে সেই একই বিষয়গুলো নিয়ে কেহ কেহ ‘(অপ)বিজ্ঞান ও (কু)যুক্তিবাদ’ এর আড়ালে বছরের পর বছর ধরে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আনাড়ী পাঠকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। ফলে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে যে, এরাই আসলে প্রতিক্রিয়াশীল বাইগট। কিন্তু ‘(অপ)বিজ্ঞান ও (কু)যুক্তিবাদ’ এর খোলসে ঢুকে পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে মাত্র। একটি গ্রন্থ যে ভুল-ভ্রান্তি থেকে মুক্তও হতে পারে সেটা যেন তারা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না।

এই যৌক্তিক একটি অপশন-ই মনে হয় কারো কারো ব্রেনে নেই! “আর যদি আমি কাগজে লিখিত কিতাবও আপনার প্রতি নাযিল করতাম এবং তারা তা তাদের হাত দিয়ে স্পর্শও করত, তবু যারা কুফরী করেছে তারা অবশ্যই বলত : ‘এ স্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়’। (কোরআন ৬:৭) (চলবে …)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.