আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কথাসাহিত্যিক ও চিত্রপরিচালক হুমায়ূন আহমেদের মূর্তি সম্পর্কে ইসলামিক ব্যাখ্য?



কথাসাহিত্যিক ও চিত্রপরিচালক হুমায়ূন আহমেদের মূর্তি সম্পর্কে ইসলামিক ব্যাখ্য? আফতাব হোসেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও চিত্রপরিচালক হুমায়ূন আহমেদ দৈনিক প্রথম আলোতে ‘বাউল ভাস্কর্য এখন কোথায় যাব, কার কাছে যাব?’ শিরোনামে একটি লেখা লিখেছেন। তাঁকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাকে মোটামুটি সবাই চেনেন। তার লেখাটি আবেগ আছে। খেদ আছেন।

দু’একটি উদাহরণ আছেন। এসব মিলিয়ে তিনি লেখাটির মধ্যে দিয়ে মানুষের সৃষ্টির প্রতি সম্মান দেখানোকে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতিই সম্মান দেখানোর কথা বলেছেন। প্রকৃতপক্ষেই আমরা জানি কোরআন নাযিল হয়েছে মানুষের জন্য। মানুষকে হেদায়েতের জন্য। এর মধ্যে আল্লাহ মানুষের করণীয় সম্পর্কে বলেছেন।

জনাব হুমায়ূন আহমেদ তার লেখায় কিছু বলেছেন সবটা বলেননি। কিন্তু কেন বলেননি তা যদি তিনি স্পষ্ট করে বলতেন তাহলে আমাদের গোটা বিষয়টি বুঝতে এবং প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরো করে স্পষ্ট করে বুঝতে সহজ হতো। তরে তিনি যে সব যুক্তি দিয়েছেন তার পিছনে নতুন করে আবার প্রশ্নও রেখেছেন। এখানে তার কথার প্রেক্ষিতেই দু’একটি কথা চলে আসে। তার উদ্দেশ্য বলতে চাই গোটা বিষয়টি সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা যাতে হয় সে ব্যাপারে আপনি আমরা সবাই মিলেই চেষ্টা করা উচিত।

আর এজন্য কিছু বিষয়ের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। মাদার মেরির বিষয়টি হুমায়ূন আহমেদ উল্লেখ করেছেন, বাইজেন্টাইন যুগের মাদার মেরির একটি অপূর্ব ছবি মহানবী (সা.) নষ্ট করতে নিষেধ করেছেন। এটা কোনো হাদিসের বিষয় নয় বলে। তবু বলতে হয়, কিন্তু এর মানে এই নয় যে তিনি নতুন করে মূর্তি বানাতে বলেছেন। কোথাও কোনো হাদিসে কোনো উদ্ধৃতিতে একথা পাওয়া যায় না যে মহানবী (সা.) মূর্তি গড়তে বলেছেন।

বরং তিনি নিজেই বলেছেন তার আগমনই হয়েছে মূর্তির পূজার বিরুদ্ধে। আর একথা তাঁর নিশ্চয় জানা আছে যে মহানবী (সা.) হযরত আয়েশা (রা.) ঘরের পর্দায় প্রাণীর ছবি দেখতে পেলে তিনি সেখানে আর প্রবেশ করতে দ্বিধা করেন এবং তা ব্যবহার করতে না বলেন। বাস্তবে মহানবী (সা.) কেন `মাদার মেরির' ছবি নষ্ট করতে নিষেধ করেছেন তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পেলে ভালো লাগত। আপনি বলেছেন, কাজটি তিনি করলেন সৌন্দর্যের প্রতি তাঁর অসীম মমতা থেকে। একথাটা কি আপনার নিজস্ব আবেগের না এটা নষ্ট না করার পিছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল।

বিষয়টি যদি আমি আমার মতো করে ব্যাখ্যা করি যে মাদার মেরি আসলে মুসলমানদের কাছে হযরত মরিয়ম (আ.), হযরত ঈসা (আ.) এর মাতা। হযরত মরিয়মকে মুসলমানরা সম্মানের চোখে দেখে থাকে। তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় তিনি সেটা তাৎক্ষণিকভাবে নষ্ট না করার জন্যই হয়ত বলেছিলেন। প্রকৃত ঘটনা বা উদ্দেশ্য আল্লাহই ভালো জানেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি মূর্তির ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন এবং তার আমলে আরো নতুন নতুন মূর্তি বানানো হতো।

কিংবা তার এই কথায় এই ইঙ্গিত ছিল যে ভবিষ্যতে আরো মূর্তি বানানো যাবে। অথচ এটাকে তিনি মূর্তির স্বপক্ষে একটি যুক্তি হিসেবে গ্রহণ করে আছেন। তিনি অকপটে স্বীকার করলেন মহানবী (সা.) ৩৬০টি মূর্তি অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাহলে একটি মাত্র ছবি কি ৩৬০টি মূর্তি অপসারণের বিপক্ষে চলে গেল? ইবনে ইসহাকের দেয়া উদ্ধৃতি সম্পর্কে এতটুকু বলা যায় যে, জীবনীগ্রন্থ বা ইতিহাস নির্ভর কাহিনীগুলো হাদিসের মতো সনদ দলিল দ্বারা প্রমাণ করা হয় না। আর যতটুকু জানা যায় ইবনে ইসহাকের এটা কোনো হাদিস গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

হুমায়ূন আহমদে হযরত আয়েশা (রা.) এর পুতুল খেলা প্রসংঙ্গে উল্লেখ করেছেন, নবীজীর তাতে কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু আমার প্রশ্ন পুতুল নিয়ে খেলা আর মূর্তিকে সম্মান এক জিনিস? যদি তাই হতো তাহলে যুগে যুগে দেশে দেশে মুসলমান শাসকরা তাদের গৌরবময় শাসনকালে মূর্তিতে কেন সেসব দেশ ভরে দিলেন না? অথচ বাস্তব সত্য হলো ইসলামের আগমনের পর থেকে কোনো নবী-রাসূল, খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবী, তাবেইন, তাবেতাবেই সহ কোনো শাসকদেরই কোনো প্রকার মূর্তি বা ভাস্কর্য বানানো হয়নি। এটা কেন সেটা কি ভেবে দেখেছেন? প্রকৃতপক্ষে কোরআন হাদিসের কোথাও তো কোনো প্রকার মূর্তি তৈরির কথা পাওয়া যায় না। তাহলে হুমায়ূন আহমেদ সাহেব কেন সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে এইসব উদাহরণকে সহজে পাঠকদের সামনে এনে হাজির করলেন। তার তো উচিত ছিল আরো তথ্যবহুল বক্তব্য দেয়া।

কোরআন হাদিস থেকে উদাহরণ দেয়? কিন্তু তিনি সেটা না করে ইসলাম পূর্ব যুগের ছবিকে দিয়ে মূর্তির বিষয়টি জায়েজ করতে চাচ্ছেন? প্রশ্ন হলো কোরআনের মূল স্পিরিট কি বেশি করে মূর্তি বানানো? আসলে হুমায়ূন আহমদের আবেগী কথা কোনোভাবে কোরআন বা হাদিসের মূল স্পিরিটের সাথে খাপ খায় না। জনাব হুমায়ূন আহমেদ আপনি মাদরাসার ছাত্রদের যেভাবে কটাক্ষ করার চেষ্টা করেছেন তাতে তা তার ভাবমর্যাদার প্রতি মানানসই নয়। তাদের উত্তেজিত বালকেরা বলে কটাক্ষ করার চেষ্টা করেছেন ঠিকই। কিন্তু এ মূর্তির ঘটনার বাইরে তাদের ইসলামী জ্ঞানকে হেয় করতে চেয়েছেন কি? হতে পারে সকল মাদরাসার ছাত্রই প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান রাখে না। কিন্তু তাই বলে মাদরাসা শিক্ষা তো কোরআন হাদিসের বাইরের কোনো শিক্ষা নয়।

আর সকল মাদরাসার ছাত্ররাই যে কোরআন হাদিস সম্পর্কে অজ্ঞ তা তো বলা যাবে না। এসব মাদরাসা শিক্ষিতদের পিছনেই তো আমরা প্রতিদিন পাঁচবার জামাতে নামাজ পড়ি, খোতবা শুনি, ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারি। তাহলে কেন তিনি এদের অবজ্ঞা করছেন? তিনি উল্লেখ করেছেন মূর্তির বিরুদ্ধে কিছু ছাত্রের হইচই উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় গুটি কয়েক মানুষের ছবিই তো কেবল একই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে মূর্তির পক্ষে। এদেরটাই তাঁর কাছে অনেক বড় হয়ে দেখা দিল? হুমায়ূন আহমেদ আপনি পারস্যেও শেখ সাদী ও ফরিদউদ্দীন আত্তার (নিশাপুর) এর মাজারদ্বয়ে তাঁদের আবক্ষমূর্তির কথা উল্লেখ করেছেন।

কিন্তু এটা বলেননি যে ইরানের শাহের পতনের পর সেখানকার সকল মূর্তি ভাঙা হয়। সেখানে নতুন করে কোনো মূর্তি তৈরি করা হয়নি। এমনকি খোমেনীর মূর্তি পর্যন্ত করা হয়নি যে খোমেনীকে তারা এখনও সর্বোচ্চ আবেগ ও ভালোবাসা দিয়ে শ্রদ্ধা করে। এরপরও বলতে হয়, লিবিয়া, ইরানের মূর্তি আমাদের জন্য কি মূর্তি তৈরির প্রেরণা না ইসলামী স্পিরিট? দেশের ইরানে নতুন করে কোনো মূর্তি বানানো হয়নি। ইরাকের জনগণ সাদ্দাম হোসেনের মূর্তি ভেঙে ফেলে।

সেখানেও নতুন করে কোনো মূর্তি বানানো হয়নি। আপনি প্রশ্ন করেছেন বাংলাদেশে তো অনেক বড় বড় ইসলামী পন্ডিত আছেন। তাঁরা কেন চুপ করে আছেন? তাঁরা কেন পুজার মূর্তি এবং ভাস্কর্যের ব্যাপারটা বুঝিয়ে সবাইকে বলছেন না? অথচ যতটুকু জানি সারা দেশে প্রায় দুই লক্ষ মসজিদে জুমার খোতবায় খতিব সাহেবার মূর্তির ব্যাপারে খোতবা দিয়েছেন। সেটা আপনি শুনেছেন কিনা উল্লেখ করেননি। আর ইসলামী পন্ডিতরা যা বলছে তা তো আপনার আবেগের বিপক্ষেই যাচ্ছে।

হয়ত সেটা না শোনার ভান করে আপনি আপনার প্রশ্নটি করেছেন? এটা আপনার কাছ থেকে আশা করা যায় না। যে ছাত্রদের আপনি উত্তেজিত বালক বলে সম্বোধন করছেন তারা যখন উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত সেখানে আপনি কি কলম ধরবেন হইচই করা উত্তেজিত বালকদের আধুনিক শিক্ষার সুযোগ করে দেয়ার জন্য? আপনি যদি তাদের পক্ষে শিক্ষার সুযোগের জন্য কলম ধরেন তাহলে হয়ত তারা আধূনিক শিক্ষা পেতে পারে। আপনি কি চান না তারা সর্বোচ্চ শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করুক? ইসলাম কোনোভাবেই মূতি গড়ার পক্ষে বলে না। ইসলামে এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নেই। এটা সবারই জানা।

ইসলামী মূল্যবোধের সাথে এটা কোনোভাবেই খাপ খায় না। সে সত্য আমাদের সত্য বলেই উপলব্ধি করা উচিত। ২৭.১০.২০০৮

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.