আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হককে মূল্যায়নে আমরা কি অক্ষম?



ষাটের দশকের অন্যতম কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হক (ওরফে বটু ভাই) আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন গত ২০ জুলাই রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে, মানে ক্যালেন্ডারের হিসেবে ২১ জুলাই ২০০৮। রাত থেকে শুরু করে বেলা ১১টা/ ১২টার মধ্যেই অন্তত ঢাকা শহরে বসবাসরত অধিকাংশ কবি-সাহিত্যিকের কানে এ সংবাদটি পৌঁছে যায়। ১টার দিকে লাশ আসে বাংলা একাডেমীর বর্ধমান হাউসের সামনে। সেখানে কবি-সাহিত্যিকদের অনেকেই ছুটে আসে এই বরেণ্যসাহিত্যিককে শেষবারের মতো একনজর দেখতে এবং সম্মান জানাতে। সকালে বন্ধুপ্রতীম আশফাকুর রহমানের ফোনে সংবাদটি জানতে পেয়ে আমিও যাই বাংলা একাডেমীর চত্বরে।

কখনো আমার মাহমুদুল হকের সঙ্গে দেখা করা হয়ে উঠেনি। তাঁর `জীবন আমার বোন' উপন্যাসটি পড়ার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে দেখা করার এক দুরন্ত তাড়া অনুভব করছিলাম। বেশ অনেকবার প্লান-পরিকল্পনাও করেছি, কিন্তু কোনো না কোনো কারণে সম্ভব হয়নি। অবশেষে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে দেখা হলো তাঁর সাথে, কিন্তু কথা হলো না কোনো! আশ্চর্য হলাম ওখানকার উপস্থিতি দেখে। এত কম উপস্থিতি! এত বড় মাপের কথাশিল্পী যার হাত দিয়ে বেরিয়েছে- খেলাঘর, জীবন আমার বোন, অনুর পাঠশালা, নিরাপদ তন্দ্রা, কালো বরফ, প্রতিদিন একটি রুমাল, মাটির জাহাজ, চিক্কোর কাবুক, অশরীরী ইত্যাদি রচনা- তাঁর কফিনের পাশে সাহিত্যিকমহলের হাতেগোনা মাত্র ৪০/৫০ জন, আত্মীয়পরিজন ২০/৩০ জন, এবং বাংলা একাডেমীর কর্মকর্তা-কর্মচারী ৭/৮জন! বাংলা একাডেমীতে জানাজা শেষে ২.৩০টা/৩ টার দিকে যখন লাশ নিয়ে মীরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের দিকে রওনা দেওয়া হলো, তখন দেখা গেল কফিনের গাড়িতে সাহিত্যিকমহলের আমরা তিনজন ছাড়া বাকি সবাই মাহমুদুল হকের আত্মীয় পরিজন।

সামনে ড্রাইভারের পাশে `লোক' সম্পাদক অনিকেত শামীম, আবু তাহের সরফরাজ এবং পিকআপের ওপরে লাশের কফিনের পাশে অন্যান্য লোকজনের সাথে আমি দাঁড়িয়ে, বুক পকেটে আমার মাহমুদুল হকের ডেথসার্টিফিকেট। আর পেছনে ট্যাক্সিক্যাবে কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, কবি শামীম রেজা, কবি চঞ্চল আশরাফ এবং অন্য গাড়িতে সাহিত্যিক মারুফ রায়হান ও হামিদ কায়সার। এই আটজন ছাড়া শবযাত্রায় সাহিত্যিকমহলের আর কাউকে চোখে পড়েনি। কেন পড়েনি, জানি না। জানি না! এছাড়া বাংলা একাডেমীতে কবি রফিক আজাদকে ছাড়া ষাটের উল্লেখযোগ্য কাউকে চোখে পড়েনি।

কেন তারা এলেন না, তারাই ভালো জানেন। অথচ এদেশের অনেক চোর-বাটপারের জানাজা বা শেষকৃত্যতেও অনেক লোকসমাগম ঘটে এবং আমাদের সাহিত্যিকমহলের অনেকেই সেখানে দৌড়ে যান। মাহমুদুল হক প্রথাগত তথাকথিত বাজারি লেখক ছিলেন না বলে, দলবাজি-মিডিয়াবাজি-তেলবাজি করতেন না বলেই কি তার শেষকৃত্যে এত কম উপস্থিতি ছিল? নাকি মাহমুদুল হকের মতো এত বড়মাপের লেখককে আমরা বুঝতে পারিনি এখনও? কবি বিনয় মজুমদার অবশ্য লিখেছেন `ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?' এ প্রশ্নটির সঙ্গে সুর মিলিয়ে এখানে বলা যায় `কথাশিল্পী মাহমুদুল হককে মূল্যায়নে আমরা কি অক্ষম?'

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.