আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাঝিপাড়ার শিশুদের স্কুলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন (আপডেট)

যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর।

মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন মাঝিপাড়ার শিশুদের স্বপ্নের স্কুল বাস্তবায়ন (আপডেট) মাঝিপাড়ার সেই শিশুদের স্বপ্নের স্কুল বাস্তবায়নে আমরা একধাপ এগিয়ে গিয়েছি। সেদিন ব্লগে লেখাটি পড়ে অনেকেই স্বপ্নের এই স্কুলটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এত দ্রুত সাড়া পাবো ভাবতে পারিনি।

কাঙ্গাল মুরশিদ ঈদের আগেই ১ হাজার টাকার একটি ক্রস চেক স্কুলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এক ফাঁকে ঈদের ছুটির পর ওখানে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। ত্রিভুজ, বিডি আইডল, সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন, লিপিকার, মাহমুদুল হক ফয়েজ, তরু, রুখসানা তাজীন- সবার উৎসাহ, সমর্থন পেয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। মাঝখানে ঈদের ঝুট-ঝামেলায় ব্লগে আপডেট দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এর মাঝে আমরা মেঘনাপাড়ের সেই স্কুলটিকে দেখতে সুদূর লক্ষ্মীপুর চলে গিয়েছিলাম।

সাথে সাফায়েত এবং আমার স্ত্রী। সাফায়েতের সাথে আমার পরিচয় ব্লগে লেখালেখির সূত্র ধরে। ঈদের পর ৪ তারিখ আমাদের কথা হয় মোবাইলে। আমরা সিদ্ধান্ত নেই ৬ অক্টোবর ভোর ৬.৩০ এর গাড়িতে স্কুলটি দেখতে আমরা চলে যাবো। আমার স্ত্রী এরকম একটি স্কুল দেখার লোভ সামলাতে পারে না।

ও ঢাকাতে একটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। এরকম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখার লোভে সে ও গোঁ ধরে স্কুলটি দেখতে যাবে বলে। ইকোনো বাসে চড়ে ঢাকা থেকে রওনা হই লক্ষ্মীপুরের পথে। বৃষ্টিস্নাত সে ভ্রমণ আমাদের যাত্রাটাকে বিঘ্ন করলেও আমাদের উদ্দেশ্যকে দমাতে পারেনি। লক্ষ্মীপুর শহরে নেমে একটা সিএনজি চড়ে একেবারে চলে যাই মজুচৌধুরী হাট।

সেখান থেকে পায়ে হাঁটা পথ একবারে ‌'মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন' পর্যন্ত। মেঘনা শাখার বুকে স্লুইস গেটকে কেন্দ্র করে সরকারি বাঁধের এই কাঁচা রাস্তাটুকু বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে আছে। ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আমরা যখন শিশুদের ছোট্ট স্বপ্নের স্কুলটিতে পা রাখি- একটা বিষন্নতা এসে ভর করে। বৃষ্টিতে ভিজে সারি বাধা নৌকাগুলো কেমন জবুথবু হয়ে আছে। সারাদিন অবিরাম বর্ষণে নৌকায় টিকতে না পেরে দুই তিনটি পরিবার স্কুল ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।

সামান্য এই স্থানটুকু দুর্যোগপূর্ণ কয়েকটি নিঃস্ব পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছে। সাফায়েতসহ আমরা সবাই সেই আশ্রিতদের সাথে একাত্ম হয়ে যাই। আমার স্ত্রীর সাথে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই থাকে যা সময়ে খুব কাজে লাগে। ঘরটিকে পুরোপুরি মাপার কাজে স্ত্রীর বয়ে আনা এই গজ ফিতাটি খুব কাজে লেগে গেল। সাফায়েত এবং মেঘনাপাড়ের সোহরাব মিলে বের করে ফেলল যে, স্কুল ঘরটি দৈর্ঘ্যে ১৮ ফুট বা ১২ হাত।

এবং প্রস্থে ৯ ফুট বা ৬ হাত। এটিই মাঝিপাড়ার শিশুদের স্বপ্নের স্কুল। এর চারিদিকে বেড়া দিতে হবে। স্কুলটির চারিদিকে মোট ৩৬ হাত বেড়া প্রয়োজন। প্রতি হাত ৭০ টাকা হিসেবে মোট ২৫২০/- টাকা এ মুহূর্তে লাগে।

এর মাঝে সাফায়েত স্থানীয় লোকজনের সাথে খুব আন্তরিকতার সাথে মিশে গিয়েছে। ওদের সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছে যে, শিশুদেরকে স্কুলে যেতে দিতে অভিভাবকদের অসচেতনতাই দায়ী। প্রায় ১ কিলোমিটারের মধ্যে একটি সরকারি স্কুল আছে । মেঘনা নদীর পাশের গ্রামে একটি কিন্ডারগার্টেন আছে। কিন্তু পশ্চাদপদ এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষা ভীতি তাদেরকে সচেতন করতে পারছে না।

এই জনপদের মধ্যে এমন অনেক মাঝি আছে যাদের আয় ঈর্ষণীয়। সন্তানকে অর্থের জন্য নয় বরং শিক্ষা বিমুখতার জন্যই তারা স্কুলে পাঠাতে পারছে না। সাফায়েতের মতে এটি একটি কমিউনিটি স্কুল হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় এখান থেকে এই শিশুরা শিক্ষার প্রাথমিক ধারণাটুকু নিয়ে সাধারণ শিক্ষায় ছড়িয়ে পড়বে। এভাবে বঞ্চিত একটি জনপদের কাছে একটি প্রাথমিক স্বপ্নের সিঁড়ি স্থাপিত হবে।

স্কুলটিকে কেন্দ্র করে মাঝিপাড়ার মাঝিদের বয়স্ক শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা যায়। ভরা মৌসুমে মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ, নয় ইঞ্চি সাইজের জাটকা ধরা নিষিদ্ধ, কারেন্ট জাল ব্যবহার করা নিষিদ্ধ- সামান্য এই বিষয়গুলো শিখিয়ে তাদেরকে আমাদের অর্থনীতির মূল স্রোতে নিয়ে আসা যায়। আরও আরও সম্ভাবনাময় অনেক কিছুই হতে পারে স্কুলটিকে কেন্দ্র করে । আসুন না মাঝিপাড়ার শিশুদের স্বপ্নের এই স্কুলটিকে সাহায্যের জন্য আমরা সবাই মিলে ১৪ মাসের জন্য ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেই। আমার আগের লেখায় ব্যয়ের একটি খাত দেওয়া হয়েছে।

এই ব্লগেই আমাদের কর্মকাণ্ডগুলো নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হবে- আমরা কি করতে যাচ্ছি এবং চাচ্ছি। আসুন সবাই মিলে আমাদের মতামতগুলো শেয়ার করে মাঝিপাড়ার শিশুদের স্বপ্নের স্কুলটি বাস্তবায়ন করি। আর্থিক আপডেট সংবাদ : স্কুলের নামে এ পর্যন্ত ৪,০০০/- টাকা নিজস্ব অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। আগামী ১৪ অক্টোবর স্কুলের চারিপাশে বেড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে স্কুলের সভাপতি এবং সদস্যরা তা মনিটরিং করবেন এবং পরবর্তী আপডেটে তা প্রকাশ করা হবে।

ও হ্যাঁ। বৃষ্টিভেজা এই দুর্যোগের মধ্যেও সাফায়েত ঝটপট কতগুলো ছবি তুলে ফেলেছে। চমৎকার এই কাজটুকু মাঝিপাড়ার শিশুদের স্বপ্নের স্কুলের স্মারক হয়ে ফুটে আছে। আপডেট সংবাদ স্কুলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এ পর্যন্ত জমা হয়েছে- কাঙ্গাল মুরশিদ = ১,০০০/- সাফায়েত = ৩,০০০/- সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন চলতি হিসাব নং ০০১-৭২৩২ সোনালী ব্যাংক, লক্ষ্মীপুর সদর

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।