আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাঝিপাড়ার শিশুদের স্কুলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন-২ (আপডেটেড)

যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর।

একটি স্কুল। একটি স্বপ্নের ঠিকানা। মজু চৌধুরী হাটের মাঝি পাড়ার আরিফ, নারগিছ, আলামিন, মুক্তা, রাসেল, রাজনদের কাছে এটি স্বপ্নই বটে।

এই শিশুদের জন্ম হয়েছে নৌকায়। নৌকাতেই তাদের বেড়ে উঠা। জন্মেই তারা নিজেদের আবিস্কার করেছে নদীতে ভাসমান অবস্থায়। তাদের পূর্ব পুরুষরাও নৌকাকেই ঘর বানিয়ে জীবন কাটিয়ে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। বিশ বছর, ত্রিশ বছর ধরে এক নদীতেই তাদের জীবন কেটে গেছে।

এই শিশুরাও কি এর বাইরে বেরিয়ে আসতে পারবে? বলছিলাম লক্ষ্মীপুর শহর ছাড়িয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে মজু চৌধুরী হাটের মাঝি পাড়ার এই জনপদটির কথা। কোলের শিশু থেকে আরম্ভ করে আশি বছরের বুড়ো সবাই এখানকার বাসিন্দা। কেউ কেউ পড়ন্ত যৌবনে এসে এখানে আস্তানা গেড়েছে। এখানেই তাদের সন্তানাদি হয়েছে। সন্তানরা বড় হয়েছে।

এক মাঝি পরিবারের ছেলের সাথে আরেক মাঝি পরিবারের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আলাদা নৌকায় নতুন সংসার হয়েছে। তাদেরও সন্তানাদি হয়েছে। এভাবেই এই জনপদের জনসংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৬০-৭০ নৌকা হয়েছে। জনসংখ্যা প্রায় ৫০০ এর মতো হয়েছে।

এর প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ আড়াইশ শিশু-কিশোর। জন্মের পর বুঝে উঠার বয়স থেকেই তারা হাল ধরতে শিখেছে। মাছ ধরতে শিখেছে। কিন্তু কেউই তাদের শিক্ষাটা ধরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি। এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যান ভোটের জন্য মাঝিপাড়ার ভোটারদের কাছে যান।

দুর্গতদের মাঝে বণ্টনের জন্য ত্রাণ সহায়তা দেন কিন্তু কেউই শিক্ষা সহায়তার কথা বলেন না। কারণ এরা শিক্ষিত হলে সচেতন নাগরিক হবে। আর সচেতন হয়ে গেলে তো মেম্বার-চেয়ারম্যানের সমস্যা! স্লুইস গেটের একটু সামনে হাতের ডানে যে রাস্তাটি মেঘনা নদীর বুকে ৫০০ গজ গিয়ে থেমে গেছে, এর মাথাটিকে কেন্দ্র করে দুই পাশে সারি সারি নৌকায় জুয়েল, সাগর, শারমিনদের বাস। এক টুকরো চরের মতো জেগে থাকা রাস্তার এই মাথাটুকুই ওদের কাছে ভূমি। সেখানে বিকাল বেলাটা শিশুদের কলকাকলিতে জমজমাট হয়ে উঠে।

এখানেই দেখা হয় রহিমা এবং কুলছুমার সাথে। বয়স ওদের ৮ এবং ১০। ওদের সাথে আরও আছে সাগর, জুয়েল, সুমি। প্রায় একই বয়সী হবে। আমাদের দেখে এগিয়ে আসে ওরা।

'ছার......এইহানে কি করবেন। ' টিনের চালা উঠে যাওয়া স্কুল ঘরটিকে দেখিয়ে কুলছুমার প্রশ্ন। "তোমাদের জন্য স্কুল হবে। তোমরা এখানে পড়াশুনা করবে। "- আমাদের মধ্য থেকে একজনের উত্তর।

'কি তোমরা স্কুলে ভর্তি হবে না?" খুশীতে চিক চিক করে উঠে ওদের মুখ। 'হ ভর্তি অমু। আমাগো নাম লিস্টি করছে'। স্কুলের নাম শুনে ওদের চোখে মুখে রঙ্গিন স্বপ্নের ছোঁয়া আমি দেখতে পাই। আমার কল্পনায় জেগে উঠে স্কুলের সময় ঢং ঢং করে ঘণ্টা বেজে উঠছে।

রহিমা, কুলছুমারা স্কুল ড্রেস পরে নৌকার ভিতর থেকে দলে দলে বেরিয়ে স্কুলে আসছে। সবাই স্কুল শুরু হওয়ার আগে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সুর করে জাতীয় সঙ্গীত গাইছে- আমার সোনার বাংলা.....আমি তোমায় ভালবাসি.......চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস....আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি.........। মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতেনের স্কুল ঘরের চালা উঠে গিয়েছে। ঈদের বোনাস থেকে কাটছাঁট করে আমরা ক'জন স্কুল ঘরটিকে প্রায় দাঁড় করিয়ে ফেলেছি। একজন অবৈতনিক প্রধান শিক্ষক এবং একজন সহকারী শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ঈদের পর থেকেই মাঝিপাড়ার এই শিশুদের নিয়ে স্কুলের যাত্রা শুরু হবে। স্কুলটিকে পুরোপুরি চালু করতে আর সামান্য কিছু অর্থের প্রয়োজন। আর প্রয়োজন স্কুলটিকে টিকিয়ে রাখতে মাসে ন্যূনতম ২/৩ হাজার টাকার একটি নিশ্চয়তা। মাঝিপাড়ার শিশুদের স্বপ্নের স্কুল বাস্তবায়নের জন্য এখন দরকার সামান্য একটু আর্থিক সহযোগিতা। এই সামান্য সহায়তাটুকুই একটি পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীর জীবন ইতিহাস বদলে দিতে পারে।

রোস্তম আলি, হানিফ বয়াতি, সোহরাব মাঝি, চুন্নু মোল্লারা অপেক্ষায় আছে তাদের সন্তানরা স্বপ্নের স্কুলে যাবে। সেই স্কুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা ছড়িয়ে পড়বে দেশের আনাচে-কানাচে। দেশ গড়ার প্রত্যয় থাকবে তাদের চোখে মুখে। আসুন না, মাঝিপাড়ার এই শিশুদের স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। আপডেট সংবাদ স্কুল ঘরের ভিটি প্রস্তুত হয়েছে।

এখনও চারিপার্শ্বে বেড়া দেওয়া হয়নি। ঈদের বন্ধের কারণে আপাতত কয়েকদিন স্কুলের উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ঈদের পর ০৫ অক্টোবর তারিখ থেকে কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে। মাঝিপাড়ার শিশুদের স্কুলের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যাঁরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং যাঁরা এই স্বপ্নের স্কুলটিকে বাস্তবায়নের জন্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন- তাঁদের প্রত্যেককে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা। (কাঙ্গাল মুরশিদ, ত্রিভুজ, শাফায়েত, বিডি আইডল, সাইফুল ইসলাম শোভন, লিপিকার সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।