আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগার সীমান্ত আহমেদের আম্মা...

পরে

সীমান্ত আসলে শিমুল। শিমুলের প্রিয় বন্ধু ছিল ওর মা। এই এতটুকু বয়সে শিমুল পিকনিকে গিয়েছিল ওর মায়ের সঙ্গে। মা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রী। পিকনিকে একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান মত হয়েছিল।

সেখানে যে যা পারে পরিবেশন করবে। সবাইকে কিছু না কিছু করতেই হবে। শিমুলকেও মাইক ধরিয়ে দেয়া হলো। অতটুকুন বাচ্চা মাইক হাতে নিয়ে কী করবে? সবাই ভীষণ কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। শিমুল মাইকটা হাতে নিয়েই আবৃত্তি করা শুরু করল, তখন আকাশে ছিল পঞ্চমীর চাঁদ, মরিবার হলো তার সাধ...।

সবাই অবাক। এতটুকু বাচ্চাকে কে শেখালো এই কবিতা! শিমুল বলল, আম্মা শিখাইসে। ... শিমুল আমার বন্ধু। পৃথিবীতে ওর সব থেকে ভালো বন্ধু ওর আম্মা। কোথায় কোন অপকর্ম করল, কোন মেয়েকে দেখে ভালো লাগল, কোন বন্ধুটাকে আর একদম সহ্য করা যচ্ছে না - সব গিয়ে সে বলত তার মাকে।

এইতো কয়েকদিন আগে, এই সামহয়্যারে ব্লগিং সঙ্ক্রান্ত একটা ব্যাপার নিয়েই শিমুলের ওপর আমি খুব ক্ষেপে গেলাম। শিমুল গিয়ে মাকে সব বলল। মা বললেন, বাবা কাউকে নিজের অজান্তেও কষ্ট দিস না। তুই ওর সঙ্গে যা-ই করে থাকিস না কেন, মাফ চেয়ে নে। শিমুল আমার কাছে যখন ফোন করে মাফ চাচ্ছে ওর আম্মা তখন হাসপাতালের বিছানায়।

কোনো কথা বলতে পারছেন না, কাউকে চিনতে পারছেন না। পেশায় উনি শিক্ষিকা ছিলেন। অচেতন অবস্থায় একা একা হাত নাড়াচ্ছিলেন, যেন পরীক্ষার খাতা কাটছেন। শিমুল আমাকে ফোনে বলছে, দোস্ত তুই আমারে বদ-দোয়া দিস না। যা করসি, করসি ফান হিসেবে।

আম্মা বলসিল, কাউরে কষ্ট দিলে সে মনে মনে বদদোয়া দেয়। আম্মা তর কাসে মাফ চাইতে বলসে। দোস্ত, আম্মার অবস্থা খুবই খারাপ। তুই আমারে মাফ কইরা দে দোস্ত। আমি তখন বাসে।

বাড়িতে ঈদ করে ঢাকায় ফিরছি। শিমুলের কথায় আমি কথা হারালাম। মাকে আমি প্রথম দেখি শিল্পকলার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারে। শিমুলরা প্রায় প্রায়ই পারিবারিকভাবে, মানে ওর মামা, মামী, মামতো ভাই-বোন, সবাই মিলে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যায়। নাটক দেখাটাও ওদের একটা পারিবারিক উপলক্ষ।

শিমুল আমাকেও নিয়ে গেছিল আমাদের ভার্সিটির হল থেকে। সেই একবারই আমি শিমুলের আম্মাকে দেখি, যাকে নিয়ে এত গল্প আমি শিমুলের মুখে শুনেছি। শিমুলের আম্মা আমাকে দেখে এমন একটা হাসি দিলেন যেটাতে সব থেকে বেশি মিশে ছিল দুষ্টুমি। তুমিই তানিম? এই একটা কথাই তিনি বলেছিলেন আমাকে। বাদ বাকিটা জেনেছিলাম শিমুলের মুখেই।

শিমুল আমাকে যতটা জানে ওর আম্মাও ঠিক ততটাই জানতেন। কারণ শিমুল তার কাছে ডিটেইলে সব কিছু বলে দিত। হায়, আমার ছ্যাকা খাওয়ার ঘটনাও নিশ্চয়ই এই মহিলার জানা! ক্লাসে সবাই আমাকে কী নিয়ে ক্ষেপায় তাও নিশ্চয়ই তিনি জানতেন! আমি তার দুষ্টুমি মাখা হাসিটা ভুলতে পারি নি। ওইদিন থেকেই, শিমুল তুই যদি এই লেখা পড়িস তুইও জেনে রাখ, তিনি আমার চেনা সেরা মা। আজ সকালে আমার ঘুম ভেঙ্গেছে মায়ের মৃত্যুসংবাদে।

গতকাল সারাদিন তিনি আইসিইউতে কোমার ভেতর ছিলেন। আজ সকালে মা চলে গেলেন। অথচ বিজয়া দশমীর এখনো একদিন বাকি...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.