আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিফটে আটকে

ইমরোজ

আজকে লিফটে আটকে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন মেসবাহ ভাই। আমার জীবনেও এরকম একটা ঘটনা আছে। সেটা বলছি। আমার ঘটনা অত্যন্ত ভয়াবহ। সেদিন সকাল থেকে কারেন্ট যায়নি (বিশ্বাস করুন একদম সত্য কথা) আমি মনের আনন্দে লিফটে করে পাঁচতলা থেকে নেমে দোকানে গেলাম।

ফিরে এসে দেখি এক হোমড়া-চোমড়া লোক লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। পাঁচ-তলায় প্রথমটা হেটেই উঠতে গিয়ে ভাবলাম থাক, ওয়েট করি। লোকটি আর আমি লিফট আসতেই উঠে পরলাম। লোকটা কঠিন দু'টো হাত দিয়ে আটতলার বোতামে টিপ দিলেন। আমি ৫ তলায় দিলাম।

খানিকটা সময় লিফট চলেই সব অন্ধকার! একটা ঝাকি খেলাম জোরে সরে। পাশের লোকটাকে দেখা যাচ্ছে না। উনি মোবাইল বের করে নেটওয়ার্কিং করার চেষ্টা করছেন। তখন খানিকটা আলো পেলাম। লোকটা বলছে, "ভয়ের কোন কারণ নাই, জেনারেটর আছে"।

সেটা তো আমিও জানি, কিন্তু কাজ করছে না কেন? এমন সময় লোকটা মোবাইলে নেটওয়ার্ক না পেয়ে জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে। লিফটের মধ্যে যেন কেয়ামত শুরু হলো। দুজনই ঘামছি। এমন সময় তিনি গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলেন, "ঐ হারামজাদারা কই তোরা"? এরপর আমার দিকে ফিরে বললেন, "ভয় পাওয়ার কোন কারণ নাই" যেভাবে চিৎকার চেচামেচি করছেন তাতে ভয় না পাওয়াই অস্বাভাবিক। তিনি ফিট হয়ে না যান।

এরপর আরও কয়েকটা ধুরুম ধারুম বারি দিলেন। কিন্তু কেউ শুনছে বলে মনে হচ্ছে না। লোকটা আমাকে আবার বললেন, "ভয় পাচ্ছ না তো"? আমি বললাম, "নাহ"। এরপরে চিৎকার করে উঠলেন, "বারি দাও না, কেউ তো শুনতেছে না। " আমি বারি দিচ্ছি।

আর গার্ডের নাম ধরে ডাকছি। এমন সময় ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, "তোমার কাছে কী সিটিসেলের মোবাইল আছে"? আমি তখন হাফপেন্ট আর গেঞ্জি পরে আছি। আমার কাছে আবার মোবাইল থাকবে কেমনে? বললাম, "আমি একটা গ্রামীণ ইউস করি"? আবার চিৎকার, এইবার তিনি দরজায় বারি দিচ্ছেন আর বলছেন, "সিটিসেল আছে"? আমিও চিৎকার করছি, "ও ভাই কই গেলেন সব"? ইতিমধ্যে ১০ মিনিট এই নরকে পার হয়ে গেছে। দর দর করে ঘামছি। লোকটা আবার বলল, "ভয় নাই, আমি আছি"? (আমার তো সেটাই ভয় আপনি হার্ট এটাক করলে এখানে ভুতের সাথে কে থাকবে) লোকটা আমাকে চুপ থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, "তোমার কী বের হতে ইচ্ছা করতেছে না"? বললাম, "জ্বি অবশ্যই"।

"তো চুপ করে আছো কেন"? আমি এইবার গলা ফাটালাম, "ঐ কে আছেন"? লোকটা বলল, "আস্তে আস্তে, ভয় পাচ্ছ কেন, আমি আছি না"? মনে মনে বলি হালা তোর তো পুরাই স্ক্রু খুইল্যা গেছে দেখতাছি এরপরে হঠাৎ ধুমধাম শব্দ। আমরা ভাবলাম লিফটটা খুলেই পরে যাবে নাকি? নাহ! ধারাম করে শব্দ করে দরজা খুলে গেল। গার্ড মিয়া চা খাইতে গেছিলেন। তাই তার খেয়াল নাই। জেনারেটর অটো অন হওয়ার কথা।

জিজ্ঞেস করতে বললেন, "জেনারেটরে তেল নাই"। আজব লোকটা মাটিতে বসে হাপাচ্ছেন আর গালাগালি করছেন গার্ডের চৌদ্দ গুষ্টিতে। আমি দৌড়ে বাসায় গেলাম!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।