আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উকুন বাছা দিন। ১২। উদ্বাস্তু

মাহবুব লীলেন
এই বংশের নামের সাথে খুন জড়িত। এরা নাম বলার আগে বলে বংশের নাম। আর বংশের আগে স্মরণ করে- খুনী’ শব্দটি। এদের সবার হাতে বর্শা। বর্শ ওদের বংশের হাতিয়ার।

এরা বর্শাবংশ বর্শাবংশ এপারে। নদীটি খরস্রোতা। এপারে নদীর ঢালটি নেমে গেছে ধীরে ধীরে। ওপারে খাড়াই। এবং খাড়াই জুড়ে অ-বসতি - আগাছা- জঙ্গল বর্শা যুবরাজ উঠে বসলেন নৌকায়।

তার বিশাল দেহের আড়ালে আড়াল করা মেয়েটি। পাড়ে অস্ত্রসহ প্রস্তুত বর্শা-সৈনিকেরা। মুখে বংশের স্লোগান যুবরাজ নির্দেশ দিলেন- নৌকা ছাড়ো নৌকা ছাড়েনি। খাড়াই পাড়ের জঙ্গলে ঝিলিক দিলো কয়েকশ’ বল্লম। এবং কণ্ঠস্বর।

ওরা বল্লমবংশ। ওদেরও বংশের আগে খুনী শব্দ যুক্ত মাঝিসহ সবাই প্রস্তুত বর্শাবংশ। সবাই বাগিয়ে ধরেছে বর্শা। ওপারেও প্রস্তুত ওরা। উঁচিয়ে ধরেছে বল্লম না যুদ্ধ নয়।

বল্লমবংশ এসেছে প্রস্তাব নিয়ে। বল্লম যুবরাজের সাথে মেয়েটির বিয়ের প্রস্তাব - খুশির কথা। কোথায় তিনি। সামনে আসুন বর্শা যুবরাজ আহ্বান করলেন বল্লমবংশকে - এই যে আমি এক হাতে বল্লম ধরে অন্য হাতে পাগড়ি খুলতে খুলতে এগিয়ে এলেন বল্লম যুবরাজ। এটা তাদের বংশের রীতি।

পরিচয় দিতে গেলে পাগড়ি খুলতে হয় - চমৎকার। আসুন আলাপ করি বর্শা যুবরাজ প্রস্তাব দিলেন বল্লমবংশ বল্লম উঁচিয়ে দাঁড়ালো খাড়াই পাড়ে। আর বর্শাবংশ বর্শা বাগিয়ে এগিয়ে গেলো মাঝ নদীতে। একটা সাদা দাড়ি আর ঝকঝকে বল্লম লাফিয়ে উঠলো বল্লমবংশে হঠাৎ- কু ঝিক ঝিক রেল গাড়ি যায় রোদের ঘামে ঝিলিক মারে বল্লমের এই তীক্ষ্ম ফলায় সে নেচে নেচে দূরে চলে গেছে অনেক - পাগল। কিন্তু আমাদের মুরব্বি বল্লম যুবরাজ আশ্বস্ত করলেন বর্শবংশকে - আসুন আলাপ করি - আসুন - কিন্তু মেয়ে কোথায়? - কী! কোথায় গেলো? - কোথায়!? নেই।

মেয়েটি নেই সুতরাং..... - মারো ওদের - বিদ্ধ করো - কোপাও বর্শায়- বল্লমে লাগলো রোদের ঝিলিক। আহত নদী। লাল হলো জল দুই. এরা জেলেবংশ। আজ তাদের মাছ ধরা উৎসব। শিশু-বৃদ্ধ সবাই নেমেছে জলে।

হাতে হাতে মাছের হাতিয়ার। এখানে নদীর জল ঘোলা। উপর থেকে আসা লাল রং হারিয়ে গেছে কাদা-রং এর নিচে আমি। কিংবা কালো কুচকুচে ছেলেটি। জাল ধরে ভেসে যাচ্ছে কৌশলী সাঁতার কেটে।

অনেক্ষণ পরে তুললো জাল। কিচ্ছু নেই। ...আছে। গলায় কোপ খাওয়া- রক্ত ঝরা দুটো টেংরা। ছেলেটি এগিয়ে গেলো পাড়ে বসা মায়ের কাছে - নদীটির বয়েস বেড়ে গেছে অনেক।

এখন আর মাছ হয় না ওতে কে যেন মন্তব্য করলো শূন্য জালের দিকে তাকিয়ে গলা-কাটা টেংরা দুটো নিতে নিতে স্বগতোক্তি করলো মা- উপরে যুদ্ধ লেগেছিলো আজ পানিতে। বর্শা আর বল্লমে মারা গেছে সব মাছ ফিরলো ছেলের দিকে- যা বাবা। আবার যা। আজ উৎসব। আজ জ্যান্ত মাছ চাই ছেলেটি নামলো ফের।

স্রোতে ভাসলো জাল ধরে। অনেক দূর। ...উঠলো সে হ্যাঁ পড়েছে। জালে একটা গলদা চিংড়ি পাড়ে এলো জেলেবংশের ছেলে। ফিরে তাকালো জালে।

অবাক! চিংড়িটা মানুষের মতো জালে দাঁড়িয়ে আছে লেজে ভর করে। তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ...আরও অবাক! বদলে যাচ্ছে চিংড়িটা! হাসছে! বদলে গেছে চিংড়ির চোখ! মানুষের চোখ এখন চিংড়ির মাথায়! বদলাচ্ছে আরো। .... মুখ সেই মেয়েটা! চিংড়িটা মানুষ হলো। জাল থেকে লাফিয়ে নামলো মেয়েটি।

তাকালো জেলেবংশের ছেলের দিকে- তোমার জন্য জলে আমি লুকিয়ে ছিলাম তিন. জায়গাটা গর্তমতো। চারদিকে পাহাড়। সামনের পাহাড়টা অন্য দেশের সীমান্ত। বাম পাশের পাহাড়ের গায়ে মন্দির। মাটি থেকে অনেক উঁচুতে প্রতিমা।

প্রতিমার আশেপাশে ঝুলন্ত অসংখ্য দোলনা-দড়ি আর একটা দাঁড়ি-পাল্লা। প্রতিমার পায়ের নিচে; মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে কতগুলো লাঠি- বাঁশ বড়ো মানুষ আর ছোটো বাচ্চা। সবাই আজ আমরা সমবয়েসী। নিজের বয়েসগুলোকে বাড়িতে রেখেই আজ আমরা এখানে এসেছি সবাই লাফিয়ে- ঝঁপিয়ে একেকজন উঠে পড়লো একেকটা দোলনা কিংবা দড়িতে। আমি পারলাম না।

আর কোনো দোলনা কিংবা দড়ি খালি নেই। ওরা দুলছে। কেউ কেউ দুলতে দুলতে আলতো ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রতিমার গাল। আমি নিচে আমি তুলে নিলাম লম্বা একটা বাঁশ। জোরে আঘাত করালাম প্রতিমার সবচে কাছের যে; তার পিঠে।

চিৎকার করে উঠলো সে। আরেক জন। এবং প্রত্যেককে নেমে এলো দুজন- এসো তুমিও দুলবে আমাদের সাথে - কিন্তু দোলনাতো খালি নেই - দাঁড়ি-পাল্লা খালি আছে। এসো - উঠবো কী করে? - আমরা তুলে দেবো - কিন্তু পাল্লার দড়িগুলো চিকন। ছিঁড়ে যাবে - ছিঁড়বে না।

এসো ওরা আমাকে তুলে দিলো একটা পাল্লায়। ধাক্কা মেরে দুলিয়ে দিলো। কিন্তু.... যখন আমি ঝুলন্ত। ...দড়ি ছিঁড়লো। ছিটকে পড়লাম আমি অন্য দেশের মাটিতে।

দৌড়ে এলো বিদেশের সীমান্ত প্রহরী - তুমি অবৈধ সীমান্ত প্রহরী হাতকড়া পরালো আমাকে। তাকালাম। দোলনার বন্ধুরা হাসছে- যাও বেড়িয়ে এসো প্রহরী আমাকে নিয়ে চললো। চোখ পড়লো প্রতিমার দিকে। প্রতিমা নয়।

সেই মেয়েটি। মেয়েটি হাসছে। হাত নাড়লো- টা টা ১৯৯৮.০৯.২২ মঙ্গলবার ............................................ উকুন বাছা দিন প্রকাশক- শুদ্ধস্বর। প্রচ্ছদ- শিশির ভট্টাচার্য্য। ২০০৫
 



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.