আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উকুন বাছা দিন। ০১। ফসিল

মাহবুব লীলেন
ফসিল পুরো বাড়িটাই সিঁড়ি দিয়ে তৈরি। একটা স্তুপ। কৌশলে সিঁড়ির ফাঁকে সিঁড়ি গুঁজে দিয়ে বানানো হয়েছে ঘরের দেয়াল। মেঝেতে পেতে দেয়া হয়েছে সাইজ মিলিয়ে অসংখ্য সিঁড়ি। সিঁড়িতেই এ বাড়ির লোকজন খায়দায় ঘুমায় এবং অতিথি আপ্যায়ন করে এ বাড়ির বয়স চারশ’ বছর।

কেউ বলে রাজবাড়ি- কেউ বলে জমিদার বাড়ি। আর কেউ উঁচা বাড়ি। অবশ্য বাড়িটাকে নাম ধরে ডাকার জন্য আশপাশে দশ কিলো পথের মাঝে কোনো লোকালয় নেই। আছে জঙ্গল আর ছোটখাটো জঙ্গলি পশুপাখি। কোনো এক কালে নাকি এ বাড়িকে ঘিরে এই জঙ্গলে লোকালয় ছিল।

কথাটা শুনলাম দশ কিলো দূরের সরকারি ডাকঘরের পোস্ট মাস্টারের মুখে। একমাত্র তিনিই জানেন ওই বাড়িতে এখনো লোকবসতি আছে। এবং বছরে প্রেরকের ঠিকানাবিহীন খামে তিন-চারটা চিঠি আসে ওই বাড়িতে। তিনিই বললেন একমাত্র বৃদ্ধ ডাকপিয়ন ছাড়া ওই বাড়ির রাস্তা চেনে না কেউ। পোস্ট মাস্টার এ বাড়ির অসংখ্য নাম আর ইতিহাস বলে গেলেন অনর্গল।

এবং উপসংহারে বললেন- সেখানে না যাওয়াই ভালো - কেন? এই কেন’র কোনো উত্তর দিলেন না তিনি। বললেন- যদি যেতে চান তো আমার ডাকপিয়নকে আপনার সাথে দিতে পারি। অবশ্য যদি এখনও আপনার যাবার ইচ্ছে থাকে - ইচ্ছে থাকবে না কেন? এত দূর থেকে এসেছি - ওই বাড়িটা পার হয়ে সোজা দশ কিলো গেলে একটা জায়গা পাবেন। সেটাও জঙ্গল। নাম বৌবাজার।

প্রতি বছর সেখানে মেলা হয়। এখন গেলে সে মেলা পেয়ে যাবেন - কিসের মেলা? - কোনো প্রশ্ন করবেন না উনাকে। উনি কানে শোনেন না পেছন থেকে বৃদ্ধ ডাকপিয়ন কথাগুলো বলল কানেকানে। আসোলেইতো। ভদ্রলোককে ঠিকানা লেখা কাগজটা দেখানোর পর তিনি একাই বলে যাচ্ছেন সব।

একটা প্রশ্নের উত্তরও দেননি এতক্ষণ। -পিয়ন কাকু। তুমি উনার সাথে উঁচা বাড়িতে চলে যাও। উনি থাকতে বললে থাকবে। না বললে চলে আসবে - কিন্তু আপনাদের ডাকঘরের কাজ... - বুঝলেন এ অঞ্চলে যত কিছু আছে সব কিছুই নাকি ওই বাড়ির লোকজন দিয়েছেন।

এখানে এই ডাকঘরটিও ওদেরই তৈরি। অবশ্য শোনা কথা। এই ডাকঘরে তেমন একটা কাজকর্ম নেই। তাছাড়া কেউতো আর ওই বাড়ির ঠিকানা জানতে চায় না... অবশ্য আমি জানিও না। পিয়ন কাকুই জানে।

অনেকদিন ভেবেছি পিয়ন কাকুর সাথে গিয়ে একবার বাড়িটা দেখে আসব... আচ্ছা... বছরে যে তিন-চারটা চিঠি ও বাড়িতে আসে সেগুলো কি আপনি লিখেন? আমি পোস্ট মাস্টারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। পিয়ন কাকু মাথা নাড়াল- অসম্ভব। ওই চিঠিগুলোর তিনটা লেখে কোনো বুড়ো মানুষ। আর এ বছর চার নম্বর চিঠিটা লিখেছে একটা জোয়ান মেয়ে - আপনি কী করে বুঝলেন? - বুঝি। লেখার সাথে মানুষের গতরের গন্ধ থাকে।

গতরের গন্ধে মানুষের সবকিছু বোঝা যায় - কীভাবে? - যারা অন্ধ তারা পারে। আমি চোখে দেখি না - এখন রওয়ানা দিলে সন্ধ্যা নাগাদ পৌঁছে যেতে পারবেন। যাবার পথে দেখা করে যাবেন। ...অবশ্য যদি ফিরে আসেন। পোস্ট মাস্টার বললেন - যদি ফিরে আসি মানে? - আমি ছাড়া ওখানে কেউ যায় না।

ফিরেও আসে না কেউ। পিয়ন কাকু লাঠি ঠুকে বলল। - চলেন একটা ইউক্যালিপটাস গাছের মতো দীর্ঘ এই বৃদ্ধ পিয়ন কাকু। ঠিক তেমনই সোজা আর চিকন। লম্বা বাঁশের লাঠিটা কাঁধে নিয়ে লম্বা পা ফেলে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।

কারো পক্ষেই বোঝা সম্ভব না লোকটা অন্ধ। মুখে কোনো কথা নেই। শুধু মাঝে মাঝে কাঁধের লাঠিটা দিয়ে ঠাসঠুস করে দুয়েকটা বাড়ি মারছে আশপাশের গাছের গায়ে। একটা গাছের গায়ে বাড়ি মেরে বলল- এটা জারুল গাছ না? - আমি জারুল গাছ চিনি না লোকটা গাছের গায়ে হাত বুলালো- হ্যাঁ জারুল গাছ। ডানে যেতে হবে।

এ সমস্ত জায়গায় চলতে হলে গাছ চিনতে হয় ...আপনি মেয়েটার খোঁজে যাচ্ছেন আমি চমকে উঠলাম- কে বলল? - আমি বলছি। শোনেন। ও বাড়িতে গিয়ে কোনো কিছু করতে চাইলে আমি যা বলব সে মতো কাজ করবেন। মনে রাখবেন ওটা রাজবাড়ি - এখনতো আর রাজাদের যুগ নেই - অনেক কিছুই আছে। না হলে আপনি যেতেন না - ওখানে কে কে থাকে - ওই মেয়েটা ওখানে থাকে না - আমি বলছি কারা থাকে - আমাদেরকে বামে যেতে হবে লোকটার পিছু হাঁটতে হাঁটতে একটা তিন পথের মোড়ে এসে পৌঁছালাম।

সে বলল- এই জায়গার নাম লামা বাজার। এখানকার লোকজন নিচু জায়গাকে লামা বলত। এখান থেকেই মাটি ভরাট করে রাজবাড়ি আলাদা করা হয়েছে এলাকা থেকে। এজন্য এর নাম উঁচা বাড়ি... আপনি জুতা খোলার দরকার নেই। আপনি রাজা-বাদশা মানেন না।

লোকটি তার জুতা খুলে হাঁটতে থাকে ক্রমশ উঁচু হয়ে ওঠা রাস্তায়। তার পেছনে আমি সন্ধ্যা প্রায় হয় হয়। টিলার উপরে বাড়িটাতে পৌঁছালাম আমরা। এই এত পথের মাঝে একমাত্র বাড়ি। এই বাড়িতেই নিয়ে আসা হয়েছিল রীনাকে - আপনি কোনো কথা বলবেন না।

আমি যে পরিচয় করিয়ে দেবো সেটাই মেনে নেবেন - কেন? - মাঝখানের ঘরে একটা উঁচু রাজকীয় খাট আছে। সেখানে ঢোকামাত্র দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উঠে সেই খাটের ডান দিকের কোণাটায় বসে পড়বেন - কেন? - ওই খাটটা ওই বাড়ির প্রাণ... এখন চুপ করেন বাড়িটা অসম্ভব রকম আলোকিত। কিন্তু উঠানেও গজিয়ে উঠেছে অনেক বয়সের গাছ। বোঝাই যায় বাড়িটা ছাড়া। কোনো কিছু দেখার কোনো লোক নেই।

কিন্তু এ বাড়িতে এত আলো জ্বালানোর পরিশ্রমটা কে করে? - পেন্নাম করিগো রাজাবাবু। পিয়ন কাকু লাঠি ঠুকে চিৎকার করল। এক মিনিট... দু মিনিট... চল্লিশ পঁয়তাল্লিশের এক প্রৌঢ় বের হয়ে আসলেন। পরনে জমকালো পোশাক- এ বছর সবগুলো চিঠিইতো পেয়ে গেলাম। এখন আবার...।

বলতে বলতে থেমে গেলেন- তোমার সাথে মানুষ? - মানুষ নাগো কর্তা। সাংবাদিক। বাড়িটা দেখতে চায়। আপনার সাথে কথা বলতে চায়। ...আমি বলেছি এ বাড়িতে কোনো পত্রিকা আসে না তাই কর্তা কোনো ছবি তুলতে দেন না।

কোনো কিছু লিখতে দেন না। ...তাই কাগজ-কলম রেখে শুধুই দেখতে এসেছে - কী নাম - কর্তা আপনার নাম জানতে চাইছেন - সুমন - সুমন। নামটা আমি স্বপ্নে দেখেছি। ...দেখুন আমি আপনাকে শুধু বাড়িটা দেখাব। এ বাড়ির কোনো লোকজন সম্পর্কে কিছুই বলব না - কেন? - প্রশ্ন করবেন না।

ফিসফিস করে বলল পিয়ন বাড়িটা কোথায় শুরু আর কোথায় শেষ আন্দাজ করা কঠিন। শুধু সিঁড়ি আর সিঁড়ি। এবং সব কিছুই ঝকঝকে তকতকে। আমার অবাক লাগল এ বাড়িতে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় কোনো লোক দেখলাম না অথচ কীভাবে সবকিছু এত পরিচ্ছন্ন রাখা হয়? আমরা মাঝখানের ঘরটাতে এলাম। ঘরটা হল ঘরের মতো বড়ো।

পুরো ঘর ছড়িয়ে অসংখ্য ছোট-বড়ো সিঁড়ি। বোঝা যায় বসার জায়গা। ঘরের মাঝখানে একটা উঁচু খাট। কতগুলো মার্বেল পাথরের সিঁড়ি উঠে গেছে খাটে। খাটে চাঁদোয়া টানানো।

খাটের সব কিছুই ধবধবে সাদা - এটাই এ বাড়ির দরবার কক্ষ। রাজা বললেন। পিয়ন কাকু লাঠি ঠুকল একটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে। -এই সেই ঘর আমার খেয়াল হলো। আমি দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে গিয়ে বসে পড়লাম খাটের ডান দিকের কোণায়।

সাথে সাথে বজ্রপাত। ঠাস করে পিয়নের গালে একটা চড় মারলেন রাজা... একবার তোকে অন্ধ করে দিয়েছিলাম। এবার তোকে বধির করে দেবো আমি - জ্বী মহারাজ - যা পাশের ঘরে যা বৃদ্ধ পিয়ন লাঠি ঠুকে চলে গেল পাশের ঘরে রাজাবাবু বদলে গেলেন। আমার পায়ের কাছের সিঁড়িতে বসলেন হাঁটু গেড়ে - মালিক কী জানতে চান বলুন - আমি রীনার কথা জানতে চাই - কী জানবেন মালিক - রীনা এখন কোথায়। রীনাকে এখানে কেন আনা হয়েছিল।

কে এনেছিল - মালিক। অনেক্ষণ চুপ থাকলেন রাজাবাবু... রীনাকে আমি এনেছিলাম। এনেছিলাম এ বাড়িটাকে রক্ষা করার জন্য। এ বাড়িতে আমি ছাড়া কেউ থাকে না। কিন্তু এ বাড়ির জৌলুসের জন্য রীনার মতো একটা মেয়ের প্রয়োজন ছিল আমার - কেন? - আমাকে এ প্রশ্ন করবেন না মালিক।

আমি একা এই জঙ্গলে থাকি। আমি এই বাড়িটাকে ভালবাসি না। কিন্তু এ বাড়ির কাহিনীগুলোকে বড়ো বেশি ভালবাসি। ...আমার জীবনটা অসহ্য হয়ে গেছে মালিক। তবু এ বাড়ি... - কিন্তু রীনাকে কেন আনা হয়েছিল - রীনা কোনো কিছুকেই ভালবাসত না তাই - অসম্ভব - মালিক।

আমার ধারণা ছিল তাই। আমার এক বুড়ো বন্ধু আছে যে বছরে আমাকে তিনটা চিঠি দেয়। সে আমাকে জানিয়েছে একমাত্র রীনার পক্ষেই সম্ভব আমাকে মুক্ত করা। সে রীনাকে চিনত - তারপর? - রীনাকে আমি আনলাম। কিন্তু... রীনা এ বাড়ির প্রেমে পড়ে গেল মালিক - রীনা বরাবরই পাথরকে ভালবাসে - ঠিক মালিক।

এজন্য... এজন্য আমিও চেষ্টা করলাম রীনার উপর থেকে আমার ভালবাসা তুলে নিতে। ফিরে যেতে চাইলাম সেই পাথরগুলোতে। কেননা এ পাথরগুলোতে আমার অধিকার বেশি। একমাত্র আমিই ভালবাসতে চাই এ বাড়িটাকে। কিন্তু রীনা সেখানে ভাগ বসাল - কিন্তু আপনিতো তাকে এনেছিলেন বাড়িটাকে রক্ষা করার জন্য।

রীনা যদি ভালো না বাসত তাহলে... - না মালিক... এ বাড়িটাকে রক্ষা করার একমাত্র পথ বাড়িটাকে ধ্বংস করে ফেলা। এ বাড়িটাকে ধরে রাখলে আপনাতেই ধ্বংস হয়ে যাবে। সেটা খুবই করুণ। রীনা আমাকে এ বাড়ি ধ্বংস করতে দেয়নি। এজন্য রীনাকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি - কী? - হ্যাঁ মালিক।

রীনার শরীরের অর্ধেক পুড়িয়ে দিয়েছি আমি আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। রাজাবাবু বলে চললেন- আগুনে পুড়তে পুড়তে রীনা আপনার নাম বলেছিল। ওর দুটো মেয়ে আছে আগের স্বামীর ঘরে। একবারও তাদের নাম বলেনি। ...শুধুই আপনার নাম বলেছে।

তারপর থেকে অনেক রাতে আপনাকে আমি স্বপ্নে দেখেছি - রীনা এখন কোথায় - বৌবাজারে। হিজড়া দলে নাচে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছি না আমি। কেমন যেন বমি বমি লাগছে। হঠাৎ মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। উঁচু খাট থেকে পড়ে গেলাম মাথা ঘুরিয়ে।

সাথে সাথে রাজাবাবুর গর্জন শুনলাম- শুয়োরের বাচ্চা। এ বাড়ির কথা তুই বাইরে নিয়ে যাবি? রাজা দেয়ালে ঝোলানো তলোয়ারে হাত দিতেই সামনে এসে দাঁড়াল বৃদ্ধ পিয়ন। তার দুই কান বেয়ে রক্ত ঝরছে। পিয়ন চিৎকার করে উঠল- আপনি পালান। উত্তর দিকে সোজা দশ কিলো গেলে বৌবাজার রাজা তলোয়ার হাতে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন।

মাঝখানে পিয়ন। পালাতে পালাতে পেছনে ফিরে দেখলাম রাজার তলোয়ারের আঘাতে পিয়ন কাকুর মাথাটা নেমে গেল শরীর থেকে সোজা উত্তর দিকে দশ কিলো। যখন পৌঁছালাম তখন ভোররাত। মেলার লোকজন ঘুমে। আমিও ক্লান্ত।

ঘাসেই ঘুমিয়ে পড়লাম। নাকি স্বপ্নের সাথে যুদ্ধ করলাম জানি না। লোকজনের কোলাহলে যখন ঘুম ভাঙল তখন প্রায় দুপুর। স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে শুনলাম হিজড়ে নাচ সন্ধ্যায়। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হবে।

ঘুরতে শুরু করলাম। ঘুরতে ঘুরতে নাগরদোলার কাছে গিয়ে চমকে উঠলাম। শ্যামল দাঁড়িয়ে আছে। শ্যামল রীনার স্বামী। সেই এগিয়ে এল- তোমারতো এখানে আসার কথা না - কেন - যাদের বৌ হারিয়ে যায় তারাই এখানে আসে - তাই নাকি? কিন্তু এর কথা আমি আগে কখনো শুনিনি - না শোনারই কথা।

আমিও জানতাম না। গত কয়েক বছরে জেনেছি। এ বছর মেয়ে দুটোকেও নিয়ে এসেছি - ওরা কোথায় শ্যামল ডাক দিলো ওর মেয়েদের। আইসক্রিম খেতে খেতে দৌড়ে আসলো ছয় আর পাঁচ বছরের দুটো মেয়ে। আমি তাকিয়ে থাকলাম- ওরা রীনার মেয়ে।

শ্যামল পরিচয় করিয়ে দিলো- তোমাদের সুমন কাকু। মেয়ে দুটো দৌড়ে চলে এল আমার কাছে। আমি বুকে জড়িয়ে ধরলাম। আমি এর আগে ওদের দেখিনি। ওরা রীনার মেয়ে।

ওদের গালে আদর দিলাম - আমাকে আরেকটা আদর দাও কাকু। ছোট মেয়েটা বলে উঠল - আরেকটা? আরেকটা থাক তোমাদের মায়ের জন্য - মায়ের কথা শুনলে বাবা রাগ করে। বড়ো মেয়েটা বলল - কেন - মা তো নেই। মা হারিয়ে গেছে আমি ওদের জড়িয়ে ধরলাম- না কাকু মা আসবে। তোমাদের মা আসবে - আসলে ওরা মাকে এবার কাকুর কাছে দিয়ে দেবে।

পাশে দাঁড়ানো শ্যামল বলল - যাও মা চরকিতে ওঠো। ওই যে চরকি থেমেছে শ্যামলের কথা শুনে দৌড়ে গিয়ে মেয়ে দুটো নাগরদোলায় উঠে পড়ল। শ্যামল হাসছে- রীনাকে তুমি এখনও ভালবাস - আর তুমি? - আমার কথা আলাদা। আমি সবকিছুই জানতাম। আমি খুব ভালো করেই জানতাম রীনাকে নিয়ে রাসেলের সাথে তোমার গন্ডগোলের মাঝখানে তুমি আমাকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছ।

...এক দিকে তুমি জিতে গেছ। রাসেল বাদ পড়ে গেছে। কিন্তু তুমিও হারিয়েছ তাকে - আমি কোনো দিনও চাইনি তাকে - তুমি আজ পর্যন্ত আশা ছাড়োনি তার রীনার বিয়ের পর আজই শ্যামলের সাথে আমার প্রথম দেখা। দীর্ঘ সাত বছর পর। শ্যামল এত স্পষ্ট কথা বলে এই প্রথম আবিষ্কার করলাম।

নাকি শ্যামল আগে ইচ্ছে করেই বোকার অভিনয় করত। আমি জানি না - সব কিছু জেনেও তুমি রীনাকে বিয়ে করলে কেন - আমি তাকে স্ত্রী হিসেবে দেখেছি। প্রেমিকা নয়। রীনা ভালো স্ত্রী ছিল। কিন্তু বিয়ের পর তুমিই তাকে আবার প্রেমিকা বানিয়ে দিয়েছ - মানে? - রাসেল সরে যাবার পর তুমি আবার রীনার দিকে এগিয়েছ।

ফলে রীনা এরপর না থেকেছে আমার- না হয়েছে তোমার। ...তুমি রীনাকে আবারো উড়তে শিখিয়েছ। রীনা উড়ে গেছে কোনো এক রাজার হাত ধরে শ্যামলকে আমি এড়িয়ে যেতে চাইছি। উঠে পড়লাম। পেছন থেকে এসে জাপটে ধরল শ্যামলের দুটো মেয়ে- কাকু তোমার সাথে সার্কাস দেখব - সার্কাস।

সার্কাস সন্ধ্যাবেলা। কিন্তু সন্ধ্যাবেলায় আমাকে অন্য কিছু দেখতে হবে। এবং একা। আমি অসহায়ভাবে শ্যামলের দিকে তাকালাম। শ্যামল হয়ত বুঝল।

প্রায় জোর করে নিয়ে গেল মেয়ে দুটোকে হিজড়ে নাচ। আমি এমনভাবে দাঁড়িয়েছি যাতে কেউ আমাকে না দেখে। একটা দুটো করে হিজড়ে এল আর গেল। মাইকে ঘোষণা হলো- এবার আসছে সুদূর আফ্রিকা থেকে আগত নিগ্রো হিজড়া ঘণ্টা পড়ার সাথে সাথেই নাচতে নাচতে এল এক হিজড়া। চমকে উঠলাম।

রীনা। পুরো শরীর কালচে হয়ে গেছে রীনার। নাচতে শুরু করল সে। নাচতে নাচতে শরীরের উপরের সমস্ত কাপড় সরিয়ে ফেলল। সমান।

কৃষ্ণ। রীনা পুরো নিগ্রো হিজড়া হয়ে গেছে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে আসব আমি। পেছন থেকে শার্টের কলারে টান পড়ল। নাচতে নাচতে রীনা চলে এসেছে আমার কাছে। নাচতে নাচতেই কানের কাছে মুখ এনে বলল- আর নিশ্চয়ই আমাকে খুঁজতে আসবে না? ...যাও... ২০০০.০৬.১৬ শুক্রবার ........................................... উকুন বাছা দিন প্রকাশক- শুদ্ধস্বর।

প্রচ্ছদ- শিশির ভট্টাচার্য্য। ২০০৫
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.