আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেশা এবং বউয়ের অভিসম্পাত

আমি আজ এসেছি এইখানে..মানব হয়ে

নেশা জিনিসটাই নাকি খারাপ। তা সে যে কোন নেশাই হোক না কেনো( আমার বউ কইছে)। নেশাখোরকে সবাই অপছন্দ করে(আরেক নেশাখোর বাদে)। তো এহেন বদ একটি নেশা আমারো আছে। সেটি হলো বই পড়া।

বই পড়ার জন্য ছাত্র জীবনে পিতা,মাতা,গুরুজন সবাই মিলে আমাকে যথেষ্ট অত্যাচার করেছে। ভেবেছিলাম, নিজে উপার্জনক্ষম হবার পর আর কোনো ঝামেলা থাকবেনা। কিন্তু বিয়ের পর বউ নামক উপদ্রবটা, আমার বই পড়া নিয়ে সারাক্ষনই ঘ্যান ঘ্যান করে। ভাব দেখে মনে হয়, আমার লাইব্রেরীর সব বইগুলো ওর সতীন। মাঝে মাঝে বলে আমার নাকি, মেয়েমানুষ বিয়ে না করে বই বিয়ে করা উচিত ছিলো।

এটা কোনো কথা হলো? নেশাটা শুরু হয়েছিলো সেবার রহস্য পত্রিকা দিয়ে, দশ বছর বয়েসে। এখনো নতুন কোন বই পেলে, দুনিয়া ভুলে আমি ঝাপিয়ে পড়ি। আমার নেশার একটা নমুনা আপনাদের সামনে পেশ করছি। এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ করেছি সবে। বাবা-মা সহ পরিবারের সবাই গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে যাবে।

আমি অসামাজিক টাইপ বলে, সবাই আমাকে বাড়ীর দারোয়ান নিযুক্ত করে চলে গেলো। আম্মা সব ভাড়াটিয়া খালাদের বলে গিয়েছিলেন, আমাকে তাদের বাসায় খেতে দেয়ার জন্য। তো আমি দরজা জানালা সব বন্ধ করে, কিচেনে গিয়ে বড় এক ফ্লাক্স চা বানিয়ে নিলাম। এরপর কিচেন থেকে মুড়ির টিনটাকে বয়ে আমার রুমে নিয়ে গেলাম। তারপর শুরু করলাম পড়া।

তার আগের দিন মহল্লার সব পোলাপানের কাছ থেকে গোটা ছয়েক বই যোগাড় করে রেখেছিলাম। গোগল, দস্তয়েভস্কি, বুদ্ধদেব গুহ আর সমরেশের মোটা তাজা বই। গোটা দুয়েক আসিমভ আর আর্থার সি ক্লার্কও ছিলো। ওগুলোতে পরে দাঁত বসাবো ভেবে এক কোনে রেখে দিলাম। ইংরেজী জিনিসটা কামড়াতে তখন একটু কষ্ট হতো।

আর আমার কেনো যেন মোটা তাজা বইয়ের প্রতি লোভ বেশী। অনেকক্ষন ধরে মজা নিয়ে পড়া যায়। যাই হোক আমি পড়ছি পড়ছি আর পড়ছি। পড়তে পড়তে আমার দিন-রাত, ভূত বর্তমান ভবিষ্যত সব একাকার হয়ে গেলো। মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে গেছি আবার জেগে উঠে পড়তে শুরু করেছি।

প্রাকৃতিক ডাকেও সাড়া দিয়ে যাচ্ছিলাম। এভাবে মোটামুটি সব শেষ করে আসিমভে কামড় বসাচ্ছি; এমন সময় ড্রয়িং রুমের দরজায় দমাদম শব্দ হাল্কা ভাবে কানে এলো। ভুলে আমি আমার রুমের দরজাও বন্ধ করে রেখেছিলাম। যাই হোক, পড়ি মড়ি করে ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দেখি পুরা গুষ্ঠী হাজির। বাজান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।

ওনারা নাকি আধা ঘন্টা ধরে দরজা নক করছিলেন। আমার ঘোর তখনো কাটেনি। ঠুটা বাইগা আমার মাথার ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুব সরল ভাবে মাকে জিজ্ঞেস করলাম- আজ কি হরতাল? ছোট ভাই বোন গুলো আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো, যেন আমি চিড়িয়াখানার কোনো চিড়িয়া। তখন হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম আসল ব্যাপারটা।

কোনো রকমে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে, ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম- কেমন মজা করলি? ছোট ভাই বললো- ধুর, তিন দিনে আর কি মজা করা যায়? আমি খামোশ খায়া খাড়ায়া রইলাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।