আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাদের তোর রক্ষা নাই (কাদের বৃত্তান্ত)...

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ মঙ্গলবার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার এ কে এম নাসির উদ্দিন মাহমুদ গতকাল সোমবার রায়ের এ তারিখ সাংবাদিকদের জানান। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রায় ঘোষণা করবেন। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় সাড়ে চার শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার এ কে এম নাসির উদ্দিন মাহমুদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, 'দুটি ট্রাইব্যুনালের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো মামলার রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে।

আগামীকাল (মঙ্গলবার) আব্দুল কাদের মোল্লার মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য কার্যতালিকায় থাকবে। এ বিবেচনায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক দিন। ' তিনি বলেন, মামলায় উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল মামলার রায় ঘোষণার বিষয়টি অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিলেন। হরতাল থাকলে রায় ঘোষণা করা হবে কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার বলেন, 'হরতাল ডাকলেও রায় ঘোষণায় বাধা হবে না। কাল রায় দেওয়া হবে।

' কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলায় প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, 'মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আব্দুল কাদের মোল্লার রায় ঘোষণা করা হবে। তাঁর বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। এ কারণে তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য আবেদন জানিয়েছি। জাতির সঙ্গে আমারও আশা, এ মামলায় প্রত্যাশিত রায় হবে। আমরা নিরপেক্ষ রায় প্রত্যাশা করি।

' মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ তথা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে এটাই প্রথম রায়। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কোনো নেতার বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম রায় এটা। এর আগে ফরিদপুরে বাচ্চু রাজাকার নামে পরিচিত জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। একই ট্রাইব্যুনাল গত ২১ জানুয়ারি আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ড দেন। বাচ্চু রাজাকার পলাতক রয়েছেন।

বাংলাদেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত আরেকজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে কলঙ্কমোচনের প্রক্রিয়া আরেক ধাপ এগোবে। মুক্তিযুদ্ধের পর ৪২ বছর ধরে জাতির অপেক্ষা অবসানের আরেক ধাপ অতিক্রান্ত হবে আজ। ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কাদের মোল্লাকে হাজির করার জন্য এরই মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। কঠোর নিরাপত্তা : গতকালই ট্রাইব্যুনাল ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওই এলাকায় গতকাল র‌্যাব-পুলিশের সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে এলিট ফোর্স সোয়াত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই দোয়েল চত্বর হয়ে শিক্ষা ভবন পর্যন্ত রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করতে গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার কার্যক্রম।

এর আগে ২০০৯ সালের ৯ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তা ও কৌঁসুলি নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যাঁদের বিচার চলছে : জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মো. কামারুজ্জামান, গোলাম আযম, বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীমসহ ১২ জনের বিচার চলছে। তদন্ত চলছে আরো ১২ জনের বিরুদ্ধে। সর্বপ্রথম দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা রায়ের পর্যায়ে যায়। কিন্তু কথিত স্কাইপ সংলাপ নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে ১ নম্বর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করায় ওই রায় পিছিয়ে যায়।

এরপর আবার সাঈদীর মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি হয়। শুনানি শেষে আবার সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। গত বছরের ২২ মার্চ গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বাচ্চু রাজাকারের মামলাটি দিয়েই শুরু হয় ২ নম্বর ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম। কাদের মোল্লার বিচারপ্রক্রিয়া : ২০১০ সালের ২১ জুলাই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হয়।

একই বছরের ২ আগস্ট কাদের মোল্লাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর তদন্ত শেষ করে ১৮ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ১ নম্বর ট্রাইব্যুনালে উত্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ১৬ এপ্রিল মামলাটি দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর গত বছর ২৮ মে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে কাদের মোল্লার বিচারকাজ শুরু হয়। গত বছরের ৩ জুলাই আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় এবং ১৩ ডিসেম্বর তা শেষ হয়।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের তালিকাভুক্ত ৫৬ জন সাক্ষীর মধ্যে দুই তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১২ জন সাক্ষ্য দেন। কয়েকজন নারী সাক্ষীও রুদ্ধদ্বার আদালতে সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে গত বছর ১৫ নভেম্বর কাদের মোল্লার পক্ষে ছয়জন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এ ছয়জনের মধ্যে কাদের মোল্লা নিজেও একজন। গত ১৭ জানুয়ারি মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হওয়ার পর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

অভিযোগ : কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যা, কবি মেহেরুন্নেসার বাসায় ঢুকে তিনজনকে হত্যা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে জবাই, কেরানীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি ও গোলাম মোস্তফাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যাসহ শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা, মিরপুর আলোকদি গ্রামের ৩৪৪ জন নারী-পুরুষকে হত্যা, মিরপুরে হযরত আলী, তাঁর স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে হত্যা এবং ১১ বছরের এক মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.