আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাদের মোল্লাই কি সেই কসাই কাদের?

আমি খুব ভালো মানুষ

কাদের মোল্লার ফাঁসি হওয়ার দিন কয়েক আগে থেকেই সাব্জেক্টের আইডেন্টিফিকেশন নিয়া নানান বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় অনলাইন এবং খুব সম্ভব কনভেনশনাল মিডিয়াতেও। বিচারকার্য পুরাপুরি নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নাতীত না থাকার কারনে অনেকের মত আমার মনেও সন্দেহ জাগে। সাবালক হওয়ার পরে কোন মানুষই বেশিদিন নিষ্পাপ থাকতে পারেনা। তারপরেও আমরা জনরোষে কোন নির্দোষ ব্যাক্তি মারা গেলে তাকে নিষ্পাপ বলি। মানষিক ভারসাম্য বিহীন মানুষ ব্যাতিত অন্য সবাইই হয়তো "নিষ্পাপ" লোকের মৃত্যুদন্ডে ব্যাথিত বোধ করবে।

পৃথিবীর অনেক দেশে মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা মুভমেন্টগুলোর মূল বক্তব্যও এটাই। একজন মানুষের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করা হয়তো যায়। কিন্তু মানুষ যেহেতু ভুলের উর্ধে নয় সেহেতু কারো প্রান নাশের মত সিদ্ধান্ত নেওয়াটাকে অনেকেই রিস্কি বলে মনে করেন। ব্যাক্তিগতভাবে আমি নিজেও মৃত্যুদন্ডের বিপক্ষে। কিন্তু ওয়ার ক্রাইম বা যুদ্ধাপরাধের ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম মেনে নিতে রাজি আছি।

আশ্চর্য়জনক ব্যাপার হলেও সত্য এই যে সরকারপক্ষ তথা আওয়ামিলীগ ৭১ এর অপরাধীদের বিচারকার্য থেকে যুদ্ধাপরাধ শব্দটি আনিষ্ঠানিক ভাবে প্রত্যাহার করেছে। কেন তাদের এই দুর্বলতা সেটা বোঝা খুবেকটা কঠিন নয়। কিন্তু এটা সম্পুর্ন ভিন্ন বিষয়। একজন মানুষের মুখচ্ছবি তার চরিত্র বা স্বভাবের পরিচয় বহন করে বলে অনেকের ধারনা আছে। কিন্তু বিষয়টা সত্য নয়।

উন্নত বিশ্বের কোন এক দেশের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে একটা গবেষনা হয়েছিল। সেখানে একজন বিজ্ঞানীর মুখাবয়ব একদল মনোবিজ্ঞানের ছাত্রদেরকে প্রদর্শন করে বলা হয় যে লোকটা একজন নৃশংস সিরিয়াল কিলার। এমনকি সে শিশু এবং মহিলাদেরকেও নির্বিকার চিত্তে খুন করেছে। এরপর ছাত্রদের প্রত্যেককে তার মুখাবয়ব থেকে তারা কি কি ধারনা করতে পারছে তা জানতে চাওয়া হয় এক এক করে। তারা প্রত্যেকেই শুরুতে দেওয়া সাজেশন অনুযায়ী বলতে থাকে যে লোকটার কপালের ভাঁজ নাকের গড়ন চোঁয়ালের হাড় ইত্যাদি ইত্যাদি নানা অংশ থেকে বোঝা যায় যে সে একজন নির্দয় এবং নির্মম ব্যাক্তি।

কেউ কেউ বল্ল যে তার চোখে পাগলামি এবং ম্যানিয়াক হওয়ার আভাসও তারা দেখতে পেয়েছে। এরপর এলো ২য় আর একদল ছাত্রের পালা। তাদেরকে ইনফর্ম কর হয় যে ছবির লোকটি একজন খুব স্কলার বিজ্ঞানী এবং লোকটার মুখাবয়ব দেখে তার সম্পর্কে কিছু বলতে বলা হয়। এক্ষেত্রে দেখা গেল যে সবাই লোকটার চেহারার প্রতিটা পার্টিকুলারে পজিটিভ সব গুনাগুন দেখতে পাচ্ছে। এই পরীক্ষা থেকে এই উপসংহারে উপনীত হওয়া যায় যে মানুষ কারো সম্পর্কে কিছু ভাবার ক্ষেত্রে পুরাপুরি স্বাধীন বা ইন্ডিপেন্ডেন্ট নয়।

পূর্ব থেকে পাওয়া কিছু তথ্য বা সাজেশন তার অভিমত তৈরীর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। সুতরাং পত্রিকায় বা নেটে ছাপা কাদের মোল্লার চেহারা দেখে কোন কিছু আন্দাজ করার অপচেস্টা আমি করিনি। কাদের মোল্লা যেসব অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে সেসব অপরাধ আমার দ্বারা করা সম্ভব নয় বলে আমার কাছে মনে হয় এসব কারো দ্বারাই সম্ভব না। কিন্তু এর পরেও সেসব অপরাধ ৭১ এ মিরপুর এলাকায় কোন এক কাদেরের দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল এবং স্বভাবতই আমরা এর বিচার চাইবো। গুরু শিষ্যের বিশ্বভ্রমনের গল্পটা নিশ্চয়ই অনেকের জানা আছে।

যেদেশে সুঁই আর হাতির মূল্য এক তেমন এক দেশে যেয়ে শিষ্য ভাবলো এটাই সবচে ভালো দেশ। তো, সেই দেশে যখন রাজকুমারীর গলার হার চুরি হলো তখন রাজা ফাঁসির দড়ি বানিয়ে সেই দড়ির মাপ অনুযায়ী অপরাধী খোঁজার নির্দেশ দেন। অর্থাত ফাঁসির দড়ি যার গলায় মাপমত লেগে যাবে সেই চোর এবং তারই শাস্তি হবে। আমরা নিশ্চয়ই এমন বিচার আশা করবোনা আমাদের আদালতের কাছ থেকে। অনলাইনে, এমনকি সামুতেও কাদের মোল্লার আইডেন্টিটি সংক্রান্ত বিভ্রান্তি নিরসনের চেস্টায় পোস্ট দিয়েছেন অনেকেই।

কিন্তু ১০০ ভাগ কনভিন্সিং কোনটাই না। বেশ কিছু প্রশ্নের পাশাপাশি কাদের মোল্লা কিভাবে মিরপুরে কানেকশন গড়ে তোলে এই প্রশ্নটাও আসে। কাদের মোল্লার সেসময়কার অপরাধ সমূহের সংগী সাথীরা সবাই কি ধরা ছোঁয়ার বাইরে নাকি তাদের মধ্যেও কাউকে ধরা হয়েছে? ধরা হয়ে থাকলে তারা কি কাদের মোল্লাকে কসাই কাদের হিসাবে সনাক্ত করেছে? কাদের মোল্লার জনৈক প্রবাসী সহপাঠির লেখা থেকে শুধু এটা জানা যায় যে, তাঁর জানামতে কাদের মোল্লা পাকিস্থান পন্থী ছিল এবং যুদ্ধের পরে আত্মগোপন করেছিল। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে খুনাখুনি করার মত ব্যাপারে কাদের মোল্লা জড়িত ছিল কিনা তা তিনি জানেন বলে লেখার কোন অংশে উল্লেখ করেননি। এমনকি যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কাদের মোল্লায় কোথায় অবস্থান করছিল তাও তিনি উল্লেখ করেতে পারেননি।

আশাকরি অতিসত্তর আমাদের এই বিভ্রান্তি এবং সন্দেহের নিরসন ঘটবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.