আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জয়নাল পলায়নের সিদ্ধান্ত ০২

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

মোখলেস ভাইয়ের অনুমান মিথ্যা হয় নি, তিলপা পাড়া এখন কালা সাদেকের রাজত্ব। পুলিশি ঝামেলা এড়াতে চাওয়া মানুষেরা এখন নিয়মিত বখরা দেয় সাদেককে। তবে একদিন সাদেকও অপসারিত হবে, সবাই প্রতিস্থাপনযোগ্য, অপরিহার্য কেউ নয়। যেকোনো প্রতিষ্ঠানই নিজস্ব প্রয়োজনে একটা ব্যবস্থা তৈরি করে নেয়, অমর্যাদাকর হলেও, প্রতিষ্ঠানের সুনামের সাথে না গেলেও প্রতিষ্ঠান এই ব্যবস্থাকে চালু রাখে, এবং প্রতিষ্ঠানই একদিন কোনো এক ব্যক্তিকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করে। ব্যক্তিঅপসারণের প্রতিহিংসা চলতে থাকে প্রতিষ্ঠানে।

রাষ্ট্রও প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রও কখনও কখনও ব্যক্তিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। পারসোনা ননগ্রাটা অভিধা দিয়ে, রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য ক্ষতিকারক বিবেচনা করে রাষ্ট্র নিজেই ব্যক্তিকে নির্মূল করতে তৎপর হয়। ব্যক্তিঅপসারণমূলক রাষ্ট্র নিজস্ব ব্যখ্যায় বলতে চায় ব্যক্তির অপরাধ ব্যক্তি সমাজের জন্য ক্ষতিকারক সব্যস্ত হয়েছে। ব্যক্তির সামাজিক প্রয়োজনীয়তা, তার সামাজিক অস্তিত্বকেও মুছে ফেলা হয় নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই। হয়তো একটা ব্যক্তি হঠাৎ করেই উবে যেতে পারে না।

ব্যক্তির একটা রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব বিদ্যমান। মোখলেস ভাইয়ের কথাগুলো এমনই ছিলো। ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব কি? রাষ্ট্র ব্যক্তিকে পরিচয় দেয়। তাকে জন্মসনদ দেয়, রাষ্ট্রের তালিকায় ব্যক্তির নাম থাকে, নাগরিক পরিচয় দিলে ব্যক্তির কাছেও রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। রাষ্ট্র সেই দায়বদ্ধতা এড়াতে ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় পরিচয় মুছে ফেলে নিপূন ভাবেই।

একজন মানুষ যার কোনো অস্তিত্ব নেই, রাষ্ট্র তাকে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় হত্যা করলেও রাষ্ট্রকে এজন্য কোনো ভাবেই অপরাধবোধে ভুগতে হয় না। লেলিন নিজেই এমন অনিয়মতান্ত্রিক কঠোরতার চর্চা করছেন নিজস্ব মানবিক রাশিয়ায়। ৫৮ ধারায় বলি হয়েছে পরিবার, কত মানুষকেই প্রতিবিপ্লবী বলা হয়েছে, বিপ্লবের লক্ষ্যের সাথে আপোষ করতে পারবে না, বিপ্লবের গৌরব এবং লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে এমন বিবেচনায় লেলিন নিজেই ৫৮ ধারা প্রবর্তন করেছিলেন রাশিয়া। ফেব্রুয়ারীর বিপ্লবের পরে অক্টোবর বিপ্লব, নিয়মতান্ত্রিক পরিবর্তনের সাথে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এবং দীর্ঘ মেয়াদের গৃহযুদ্ধ, কোন সময়টাতে রাশিয়াতে মানুষ মানবিক জীবন কাটিয়েছে। রাশিয়ার পতন রাশিয়ার প্রসবকালেই নির্ধারিত ছিলো।

দেখো একটা বিষয় বিবেচনা করে, রাষ্ট্র আসলে বিমূর্ত একটা সত্ত্বা, এটাকে প্রকাশিত করে কারা? এখানের নাগরিক এবং যদি সেই ভাবে বলতে চাও তাহলে অগ্রসর মানুষেরাই রাষ্ট্রকে প্রকাশ করে। অগ্রসর মানুষেরা বলতে আমারা বুঝি যারা বুদ্দিবৃত্তির চর্চা করছে, যারা মানুষের স্বপ্ন নির্মাণ করে এবং মানুষের স্বপ্নকে বিনির্মান করে। যারা মানুষের অস্তিত্বকে ছেনি গাঁইতি চালিয়ে একটা আকার দেয়, সেইসব শিল্পমনস্ক মানুষেরাই রাষ্ট্রকে চিত্রিত করে। প্রগতিশীল, সৃষ্টিশীল মানুষদের প্রতি অবজ্ঞা আর অবিচারে রাষ্ট্র নিজেই নিজেকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। যখন তুমি কোনো শিল্পীকে বলছো সে সামাজিক পরগাছা, যে পরান্নভোগী সামাজিক উৎপাত তখনই তুমি রাষ্ট্রের শেকড় কাটছো।

রাষ্ট্রকে দার্শনিক ভিত্তি দিবে কারা? কারা রাষ্ট্রের দর্শন আর এই দর্শন চর্চার গলদকে প্রকাশ করবে, সেই অগ্রসর মানুষেরা। তুমি তাদের নিয়মিত নিধন করবে, তাদের প্রকাশিত মতকে দমনের চেষ্টা করবে, তুনি নিজস্ব রাষ্ট্রের খুঁত গুলো নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতে চাইলে রাখতে পারো, কিন্তু নাগরিক রাষ্ট্রের খুঁতগুলো উপলব্ধি করে বলেই কোনো কোনো রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় ঘোষিত পরগাছা এই খুঁতগুলো প্রকাশে সোচ্চার হয়। যেকোনো রাষ্ট্রই একই সাথে প্রজাপালক এবং প্রজানিপীড়কভুমিকায় অবতীর্ণ হয়। এটা রাষ্ট্রের চরিত্র নয় বরং রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রন করে যেই অর্থনৈতিক চক্র, এটা তারই ভাবনার প্রকাশ। তোমার নিয়মিত আহার জোগানোর জন্য কৃষকের প্রয়োজন কিন্তু যে কৃষক ক্ষেতে নিড়ানী না চালিয়ে তোমার গলায় কাস্তে চালাবে সেই কৃষকের প্রয়োজন নেই রাষ্ট্রের।

তাই অধিকারসোচ্চার যেকোনো মানুষকেই নির্দ্বিধায় দমন করবে রাষ্ট্র। তুমি বাংলাদেশে দেখো, কুষ্ঠিয়ায় কৃষক সারের দাবিতে মিছিল করলো, সেখানে গুলো চালালো কারা? রাষ্ট্রের পুলিশ, অথচ রাষ্ট্র এদের কাছেই খাদ্যের জন্য জিম্মি। রাষ্ট্র নিজের এই জিম্মি অবস্থাকে অস্বীকার করতে চায়। জয়নাল অবশ্য এইসব উপলব্ধিকে নিজের সাথে মিলিয়ে দেখতে চায় এই অবসরে। আপাতত নিজের ডেরায় যাওয়া নিরাপদ নয়।

বরং অনেক বেশী প্রানঘাতি সিদ্ধান্ত হবে এটা। জগন্নাথের সামনে থেকে আন্দালিফ ভাইকে ফোন করবে ভেবে নিয়েই জয়নাল উঠে পড়লো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।