আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরাজিত হওয়া ঈশ্বরের শোভা পায় না (জারিফ আপডেট)

যা তুমি আগামিকাল করতে পার, তা কখনো আজ করতে গিয়ে ভজঘট পাকাবে না...

জারিফের অসুখটি হওয়ার আগে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া নামটি আমি শুনেছি বলে মনে পড়ে না। এ রোগটি হলে দেহের রক্ত কণিকা তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলটি কি হয়? খুব সহজ ভাষায় বলা যায়, মানুষের রক্তে যে তিন ধরনের কণিকা আছে যেমন লোহিত কণিকা, শ্বেত কনিকা আর অনুচক্রিকা; এদের কাজ হলো রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন দেহের বিভিন্ন স্থানে পৌছে দেয়া, রোগ জীবাণুর সঙ্গে যুদ্ধ করা আর দেহের কোনো স্থান কেটে গেলে দ্রুত রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করা। যার দেহের রক্তে এ জিনিসগুলি কমে যায়, তার কি কি সমস্যা হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। দেহের বিভিন্ন স্থানে অক্সিজেন পৌছে না, কেটে গেলে রক্ত সহজে জমাট বাধে না আর সবচেয়ে আশঙ্কার কখা হলো দেহের কোনো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না।

এর ফলে সামান্য সর্দি জ্বরেও মারা যেতে পারে রোগি। রক্তের এই কণিকাগুলি আসলে তৈরি হয় হাড়ের ভেতরের মজ্জায়। জারিফের শরীরের মজ্জায় আর কণিকা তৈরি হচ্ছিল না। এর একটিই চিকিৎসা, তা হলো কণিকা তৈরি করতে পারে এমন মজ্জা নতুন করে জারিফের হাড়ের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া। ঈশ্বরের অশেষ কৃপা, দেশে, দেশের বাইরে, অফলাইন, অনলাইনের বন্ধুদের অসম্ভব ভালোবাসায় জারিফের সেই অপরেশনটি, যাকে বলে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন, সেটি সম্পন্ন হয়েছে।

খবরটি স্বস্তির, কিন্তু এতে উল্লসিত হবার এখনি কিছু নেই। ভিন্ন একটি শরীর (জারিফের ছোট বোন) থেকে মজ্জা এসেছে জারিফের শরীরে। নতুন ঘরে তার মানিয়ে নেয়ার একটি ব্যাপার আছে। খাপ খাওয়ানোর ব্যাপার আছে। জারিফ এখন সেই পর্যায় পার হচ্ছে।

এ সময়ে নানা রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে তার শরীরে এবং দেখা দিচ্ছেও। কখনো জ্বর বেড়ে যাচ্ছে, কখনো প্লাটিলেট কাউন্ট (রক্তে কণিকার সংখ্যা) কমে যাচ্ছে, বমি হচ্ছে, শরীর দূর্বল হয়ে যাচ্ছে... নানা রকম বিষয়। এ সময়েই আরো একটি ঘটনা ঘটছে জারিফের শরীরে। নতুন মজ্জা জারিফের শরীরে এসে আর তার আগের গ্রুপের রক্ত তৈরি করবে না। এখন জারিফের শরীরে নতুন গ্রুপের রক্ত তৈরি হবে।

তার ছোট বোনের যে গ্রুপ, সেই গ্রুপের রক্ত ক্রমশ তৈরি হবে তার শরীরে। অ্যাডজাস্টমেন্টের ব্যপার আছে এখানেও। কাজেই বলা যায় আট আনা কাজ হয়েছে, আরো আট আনা বাকী। জারিফের বাবা, লতিফ ভাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আরো দুই মাস তিনি জারিফকে ডাক্তারদের নজরে রাখবেন। ইনডিয়ার ডাক্তাররাও তেমনই সাজেশন দিয়েছেন।

তবে, সাধারণত বাংলাদেশী রোগীরা এ পর্যায়ে রোগীকে দেশে নিয়ে আসেন। কারণ ওখানে রেখে চিকিৎসা করানো খরচান্ত ব্যপার। আরো দুই মাস চিকিৎসা ব্যায়, একটি পরিবারের বিদেশে থাকার ব্যয় কিভাবে আসবে, তা এখনো অজানা। তবুও লতিফ ভাই বলছেন, এটুকু পার করে নিয়ে এসেছেন যিনি, তিনি কি আরো একটু দয়া করবেন না? কেবল জারিফ নয়, লতিফ ভাই বলছেন ওখানে নতুন করে তার আরো ছয়টি সন্তান হয়েছে। হ্যা, জারিফ সহ আরো ছয় জনের একই চিকিৎসার জন্য দৌড়ঝাপ করছেন তিনি।

চেষ্টা করছেন নিজের সন্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশী আরো ছয়জন একই রোগের রোগীর চিকিৎসা ব্যয় ম্যানেজ করার জন্য। এ টাকা আসতে পারে বড় প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ডোনার এজেন্সি ও বড় মনের লোকজনের দানের মাধ্যমে। কয়েকদিন আগে যখন ফোনে কথা হয়, লতিফ ভাই বললেন, বিপুল, একটা নিয়মিত ফান্ড থাকা উচিৎ, যেখান থেকে গরীব বা মধ্যবিত্বের এমন কঠিন চিকিৎসা ব্যায় মেটানো সম্ভব। হয়তো এ অনুভূতি থেকেই লতিফ ভাই চেষ্টা করছেন আরো ছয় জারিফের জন্য, যাদের এমন সাহায্য খুব প্রয়োজন। তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

এ সময়ে কেবল আমরা প্রার্থনা করতে পারি, একটিই দাবী করতে পারি ঈশ্বরের কাছে। পৃথিবীর মানব সন্তানেরা যতোখানি ভালোবাসা দেখানোর সেটি দেখিয়েছে, প্রয়োজনে দেখাবে আরো। ঈশ্বর, বল এখন তোমার কোর্টে। নানা উসিলায় তোমার পক্ষেই সম্ভব ভালোবাসার হাতগুলোকে একত্র করে দেয়ার ঘটনাটি ঘটাতে। আর যাই হোক, পরাজিত হওয়া তোমার শোভা পায় না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।