আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ । বিশ্বে আমরা কি পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই?

যেতে চাও যাবে, আকাশও দিগন্তে বাঁধা, কোথায় পালাবে!

প্রবাসে আছি প্রায় ৩ বছর । কর্মসূত্রে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সাথে কথাবার্তা বলার সুযোগ হয় । শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের বাংলাদেশ বিষয়ক সংবাদের ই-মেইল এ্যালার্ট এর সাবস্ক্রাইবার হওয়ার সুবাদে বিশ্বে যে কোন প্রান্তে বাংলাদেশ নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশিত হলে তা সাথে সাথে পড়ার চেষ্টা করি । বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বের সাধারণ ধারণা এইসব সংবাদ থেকে মোটামুটি বোঝা যায় । আর এইসব সংবাদের উপর ভিত্তি করেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মাঝে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ব্যাপারে একটি সাধারণ ধারণা পাওয়া যায়।

বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের প্রধান পরিচয়গুলি হলো - ১। হতদরিদ্র দেশ যেটি প্রতি বছর বন্যা আর ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয় । ২। মধ্যপন্থী উদার মুসলিম দেশ যেখানে উগ্র মৌলবাদীরা তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করছে । ৩।

বিশ্বের সবচেয়ে দূর্ণীতিপরায়ণ দেশগুলির একটি । ৪। রাজনৈতিক সহিংসতায় পরিপূর্ণ একটি দেশ যেখানে গণতন্ত্র অত্যন্ত ভঙ্গুর । আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অত্যন্ত দুর্বল । ৫।

ব্যবসা বানিজ্যের প্রয়োজনীয় সুবিধা এবং অবকাঠামোবিহীন একটি দেশ যেখানে লালফিতার দৌরাত্ব অনেক বেশী । এ বাইরে কিছু পজেটিভ পরিচয়ের মধ্যে আসে ১। সাধারণভাবে শান্তিকামী জনগণ যারা খুব অল্পতেই সন্তষ্ট এবং সুখী । (সূত্র : বিবিসি জরিপ) ২। ক্রিকেটপাগল একটি দেশ যারা এই একটি মাত্র খেলায় বিশ্বমানের কাছাকাছি পৌছাতে পেরেছে।

প্রথম ৫টি পরিচয় (২য়টির আংশিক মধ্যপন্থী উদার মুসলিম দেশ ব্যতীত) কোন স্বাধীন ও আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন জাতির জন্য সুখকর হতে পারেনা । কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে এই পরিচয়গুলিকে প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছি । আমাদের অসৎ ও অকর্মণ্য শাসকগোষ্ঠী (উর্দিধারী এবং উর্দিবিহীন) এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলেও তাদের প্রতি আমাদের অন্ধ রাজনৈতিক সমর্থনকেও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই । দেশের কৃষক সমাজ, নিম্নআয়ের মানুষরা এবং পরিশ্রমী মিডল ক্লাস বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা যতই পাল্টানোর চেষ্টা করুকনা কেন এই সার্বিক ভাবমূর্তির কারণে বাংলাদেশ সামনে আগাতে পারছেনা । এর ফলে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যারা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিলো তারা দ্রুত গতিতে সামনে আগাতে থাকলেও আমরা দিন দিন আরো পিছিয়ে পড়ছি ।

আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিল্পায়ন সকলক্ষেত্রেই এই নেগেটিভ ভাবমূর্তির জন্য চড়া মুল্য দিতে হচ্ছে । আমাদের প্রতিবেশী দেশের নেগেটিভ প্রচারণাকে অনেকে আমাদের ভাবমূর্তি সংকটের জন্য আংশিকভাবে দায়ী করেন । কিন্তু প্রতিবেশীর কর্মকান্ডের সমালোচনা করার চাইতে নিজেদের সংকট মোকাবেলার জন্য নিজেদের প্রচেষ্টা অনেক বেশী কার্যকর হবে । জাত্যাভিমানের কারণে এর অনেক কিছুই আমরা স্বীকার করতে চাইনা । কিন্তু উটপাখীর মত বালিতে মুখ গুজে থাকলেই সমস্যার সমাধান হয়না ।

এর জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হয় । দেশে এবং বিদেশে অনেক বাংলাদেশী আছেন যারা মেধা এবং কর্মদক্ষতার জোরে বিশ্বের অনেক দেশের নাগরিকদের পিছনে ফেলে সম্মানজনক অবস্থানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন । এর সাথে সাথে তারা বাংলাদেশকেও প্রতিষ্ঠিত করছেন । কিন্তু সার্বিকভাবে তাদের এই উদ্যোগ বাংলাদেশ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা পরিবর্তনে খুব কমই ভূমিকা রাখতে পারছে । তাহলে সমাধান কি? নাকি আমরা এসব ভাবমূর্তিকে তোয়াক্কা করিনা ।

দেশ গোল্লায় যাক, তাতে আমার কি? আমার নেতা নেত্রী ক্ষমতায় থাকলেই হলো বা আমার হালুয়া রুটির বন্দোবস্ত হলেই হলো । একটি দেশের শিক্ষিত সমাজের মধ্যে দেশ নিয়ে এইরকম সাধারণ উদাসীনতা আসলেই পীড়াদায়ক। ১/১১ পরিবর্তনের পরে প্রথম প্রথম অনেকেই ভেবেছিলেন এবার মনে হয় একটা পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে । কিন্তু প্রচন্ডভাবে আশাবাদীদেরও মোহভঙ্গ হতে বেশী সময় লাগেনি । দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে গুণগত কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা সেটা বলাটা কষ্টকর তবে সাধারণ মানুষের জীবনধারণ যে আগের চেয়ে কঠিনতর হয়েছে সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ।

সামনের বছরগুলিতে বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাবে । আমরা কি আদৌ এর জন্য কোন প্রস্ততি নিচ্ছি? নাকি বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি সংকটকে যেমন আমরা সহজেই উপেক্ষা করি, গায়ে মাখিনা, সেরকম করে সামনের পরিস্থিতির ব্যাপারেও একই দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করি? যদি আমরা সেরকমই মনে করি তাহলে এর জন্য অনেক বেশী চড়া মুল্য দিতে হতে পারে আমাদেরকে। নীরব নয়, সরব দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়াও বিচিত্র হবেনা । আর শেষ পর্যন্ত যদি সেরকম অবস্থার মধ্যে আমাদের পড়তেই হয় তাহলে আমাদের নেগেটিভ ভাবমূর্তি আরো প্রকট হবে, আরো পেছাতে থাকবো আমরা । পরিবর্তন ঘটানো প্রয়োজন ।

কিন্তু কোন পথে আসবে সেই পরিবর্তন? আমাদের সচেতনভাবে ঠিক করতে হবে বিশ্বে আমরা নিজেদেরকে কি পরিচয়ে পরিচিত করতে চাই!! দেশের তরুণসমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে এই পরিবর্তন ঘটানোর জন্য। এমন নয় যে সামনে উদাহরণ নেই । দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ার দেশগুলির উদাহরণতো হাতের কাছেই আছে । এমনকি প্রতিবেশী শ্রীলংকা প্রবল জাতিগত সংঘাতের মধ্যেও অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে । উদ্যোগী হলে আমরাও নিশ্চয়ই পারবো ।

সবার প্রথমে আমাদের তরুণ সমাজকে বুঝতে হবে যে এই পরিবর্তনটি প্রয়োজন । প্রায় সময়ই হতাশ হয়ে যাই কারণ পরিস্থিতির আশু পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা দেখিনা । তারপরও আশায় বুক বাধি, বারংবার হতাশ হবার জন্য।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.