আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুভূতি

I would like to continue with all of here

গত শুক্রবারে যশোর থেকে ফিরে আসলাম। দুই দিন ছিলাম মাত্র। আমার যশোর- যশোর আমার জন্মভূমি। আমার বেড়ে ওঠা। এবার অনেক দিন পরেই যাওয়া হলো।

যশোরের এক ঘরে আমার মা- আমার অসুস্থ মা আমার পথ চেয়ে বসে থাকে- কখন আমি যাবো। বাড়ীতে মোবাইল করলেই প্রথমেই বলে ওঠে- তোর সামনে ছুটি আছে নাকি বাবা--- আমার মা খুব অসুস্থ। দুইবার স্ট্রোক হয়েছে। আবার বাড়ীতে বড় ভাই আছেন কিন্তু তিনি মাকে দেখার মানুষ না। আমি ঢাকাতে থাকি- ছোটখাট একটা চাকরি করি।

ঢাকা থেকে প্রতি সপ্তাহে যশোরে গিয়ে মাকে দেখে আসাও সম্ভব হয় না আবার মা-ও স্বামীর ভিটে ছেড়ে ঢাকায় আসতে রাজী না। আমার বাসায় একটা ব্যাগ গোছানোই থাকে সবসময়- কখন না জানি একটা বাজে খবর পাই আর ব্যাগ গোছাতে গিয়ে দেরী হয়ে যায়.......... আমার মা- আমি চোখ খুলেই যাকে দেখেছি প্রথম। আমার প্রথম এবং এখনও পর্যন্ত ভালবাসা। আমি আমার মাকে কখনো দুপুরে খাবার খেতে দেখিনি। এখনও পর্যন্ত না।

আমার মায়ের ৪টি সন্তান ছিল। সেটা পাকিস্তান আমলের কথা। প্রথম বড় মেয়েটি মারা গেল শবে বরাতের রাতে। টিটেনাসে এবং ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায়। আমার বড় বোনটা মারা যাবার দুইদিন পরে ম্যাট্রিক পরীক্ষার রেজাল্ট বের হরে দেখা গেল- ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছে।

এর একমাস পরে আমার মায়ের ছোট মেয়ে মারা গেল সাধারণ অসুখে। এর এক মাস পরে হলো আরেকটি ঘটনা। আমাদের ছিল যৌথ ফ্যামিলি- বাবা-চাচারা একসাথে থাকতো। বাড়ীতে একটাই টিউবওয়েল ছিল- বাড়ীর সবাই গোসল আর খাবার পানি নিতো। আমার সেই বড় ভাই ঠিক দুপুর বেলা টিউবওয়েলে গোসল করার নাম করে গামছা আর প্যান্ট নিয়ে কোন ফাঁকে যে বাইরে চলে গিয়ে শহরের আরেক প্রান্তে লালদীঘিতে গোসল করতে গেছে- তা কেউ জানেনা।

সে সাঁতারও জানতো না। ফলে যা হবার তাই হলো। মা- আব্বা আর একটা ভাই বাড়ীতে সামনে ভাত নিয়ে অপেক্ষা করছে কখন বড় ভাই আসবে আর সবাই মিলে ভাত খাবে। তো সেই ভাই আসে নাই আর- ফিরে আসলো ভাইয়ের লাশ- সেই ভাতের সামনেই লাশ শোয়ানো হলো। আমার সেই ভাই তখন ক্লাস থ্রি-এর ছাত্র ছিল।

আমার মা যে সেই ভাত ছেড়ে উঠে গেল আজকে পর্যন্ত প্রায় ৪৫ বছর কেউ তাকে ভাত বা দুপুরে কিছুই খাওয়াতে পারেনি। আমিও আমার জীবদ্দশায় পারিনি। পরপর তিনমাসে তিনটা সন্তান হারানোর পরে আমার মায়ের কোলে কেউ কোন বাচ্চা দিতোনা তখন। এরকম একটা পরিস্থিতির পরে আমার জন্ম হয় স্বাধীনতার পরে। মায়ের অসম্ভব আদর পেয়েছি আমি।

প্রথম পড়াশোনাও মায়ের হাতেই। জীবনের প্রতি পলে অনুভব করেছি মায়ের নাড়ী ছেড়া ভালবাসা। এখন এই দূরে বসে মনে হয় আমারও নাড়ী ছিড়ে যায়। আমার বাবা নেই- মারা গেছেন চার বছর আগে। এখন ঘরে অসুস্থ মা-- উনি আমার মা নন- আমার কাবা ঘর।

আমি মনে মনে আমার মাকে সেজদা করি। আমার মায়ের জন্যে দোয়া করবেন। আমি যেন আমার মায়ের জন্যে সবকিছু- সবকিছু করতে পারি।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।