আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলেটি বাসায় ফিরতে চায় না

লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ। ছেলেটি বাসায় ফিরতে চায় না মোহাম্মদ ইসহাক খান তোমার অনেক তেল হয়েছে। পিটিয়ে শরীর থেকে তেল সব বের করে ফেলবো পাজি ছেলে।

ঘুঘু দেখেছো, ফাঁদ দেখনি। এবার থেকে ফাঁদ দেখবে, ঘুঘু দেখবে না। সারাদিন অফিস করে বাসায় ফিরে কোথায় একটু শান্তিমত রেস্ট নেবো, এর জ্বালায় সেটা করার উপায় নেই, নবাবজাদা বাইরে বাইরে ঘুরবেন। টেনশনে সবাই অস্থির হয়ে থাকে, অথচ তার কোন হুঁশ নেই। কতবার বলেছি যে সময় খারাপ, দিনের বেলাতেই ছেলেপুলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, মুক্তিপণ চাচ্ছে, তাছাড়া এলাকাও ভাল না, রাতবিরেতে বের হওয়া ঠিক না, উনার সেদিকে কোন খেয়াল নেই।

এতদিন কিছু বলিনি, শুধু তামাশা দেখেছি, তাতেই উনি ধরে নিয়েছেন যে পার পেয়ে যাবেন। বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে বসে থাকে, একবার আড্ডা দিতে বসলে আর হুঁশ থাকে না, বাসায় যে ফিরতে হবে সে খেয়াল থাকে না। বাসায় বসে থাকতে তাঁর দমবন্ধ লাগে, বাইরে গেলেই হাতে আসমানের চাঁদ পায়। আসমানের চাঁদ হাতে পাওয়া বের করছি আমি। আজ থেকে সন্ধ্যার পর বাইরে থাকা বন্ধ।

কথা কানে গেছে, নাকি চড় মেরে কানের ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হবে? আমি বারবার ঘ্যানঘ্যান করতে পারবো না, শেষবারের মতো বলে দিচ্ছি, সন্ধ্যার পরে বাসায় ফিরলে ঢুকতে দেয়া হবে না। সারারাত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, খেতে দেয়া হবে না। বোঝা গেছে? আমার কথার অন্যথা হলে চাবকে পিঠের চামড়া তুলে ফেলবো। বন্ধু জুটিয়েছেন উনি, বন্ধু। বন্ধুদের বাসায় বসে থাকেন, আড্ডা দেন, ভারী আড্ডাবাজ হয়েছেন, হুঁহ।

বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেবো, আর একদিন বাসায় ফিরতে রাত হলে মোবাইল ফোন আছাড় মেরে ভেঙে ফেলবো, ফাজিল কোথাকার। এক নিঃশ্বাসে এতগুলো ধমকাধমকি শেষ করে বাবা দম নিলেন, তারপর গজগজ করতে করতে নিজের ঘরে চলে গেলেন, বড় বড় শ্বাস পড়ছে তাঁর। শার্টের হাতা গুটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি, সবাই ভয় পাচ্ছিল সজীবকে তিনি মেরেই বসবেন কীনা। এখন আবার হাতা নামাচ্ছেন। এতবড় ছেলের গায়ে হাত তোলা দৃষ্টিকটু বৈকি।

যাক, শেষপর্যন্ত বকুনির ওপর দিয়েই গেল। আজ বাবার মেজাজ অসম্ভব খারাপ। এমনিতেই খারাপ থাকে, কিন্তু সজীব রাত এগারোটার সময় বন্ধুর বাড়ি থেকে আড্ডা দিয়ে ফেরার পর আর নিজেকে সামলাতে পারেন নি। খানিকক্ষণ ড্রইং রুমে "থমথমে নীরবতা" বিরাজ করলো। মা সজীবের দিকে কিছুক্ষণ চোখ গরম করে তাকিয়ে রইলেন, তারপর শোবার ঘরে ঢুকে গেলেন।

বড় আপা এতক্ষণ কোন কথা বলেনি, এবার বলল। যা, হাতমুখ ধুয়ে নে, আমি খাবার টেবিলে বসছি। বুয়া, খাবার দাও, আমরা একসাথে খাবো। আপা নিজেও বিরক্ত হয়েছে, বোঝাই যায়, কপালে ভাঁজ পড়েছে। রোজ রোজ একই জিনিস নিয়ে চেঁচামেচি ভাল লাগে না।

সজীবের রাতে বাড়ি ফেরা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই রাগারাগি হচ্ছিল, আজ চূড়ান্ত পর্যায়ে গড়াল। বুয়া সগিরন এতক্ষণ হাঁ করে সজীবের অপদস্থ হওয়া দেখছিল। এই পরিবারটির সমস্ত অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো সগিরন অত্যন্ত আগ্রহ করে দেখে, এবং ভীষণ উপভোগ করে, বিমলানন্দ পেয়ে থাকে। হয়তো সজীবের বাবা এবং মা গলা চড়িয়ে ঝগড়া করছেন, খানিকটা মুখ খারাপ করছেন, সগিরন তখন পা মুড়ে তাঁদের সামনেই বসে ঝগড়া দেখে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, যেন খুব ভাল একটা নাটক অভিনীত হচ্ছে, আর সে এই নাটকের আগ্রহী দর্শক। তারপর তার কাজ হল পাশের ফ্ল্যাটের কাজের বুয়াদের কাছে রং চড়িয়ে বিষয়গুলো পৌঁছে দেয়া।

এই বিষয়টি সে খুব আন্তরিকতার সাথে করে থাকে, হয়তো নিজের পবিত্র দায়িত্ব মনে করে। অবশ্য সে খবর পৌঁছানোর আগেই অন্যরা জেনে যায়। যেমন এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে পাশের ফ্ল্যাটের আরজু ভাবী এতক্ষণ কান পেতে ধমকাধমকি শুনছিলেন। বিল্ডিঙটির "সাউন্ড ইন্সুলেশন সিস্টেম" খুব একটা সুবিধের নয় বলে একটি পরিবারের একান্ত ব্যাপারগুলো আরেকটি পরিবার খুব সহজেই জেনে যেতে পারে। কান পেতে অপরের কথা শোনা ঠিক নয়, কিন্তু ঠিক-বেঠিক নিয়ে আজকাল কে মাথা ঘামায়? ***** সজীব ডায়রি লিখছে।

"বাবা আজ আমাকে বকেছে, খুব বকেছে। রাত এগারোটায় বাড়ি ফিরেছি, তাই। এতদিন তেমন কিছু বলেনি, কিন্তু আজ খুব খারাপভাবে বকেছে। বলেছে পিটিয়ে পিঠের চামড়া তুলে ফেলবে। আমি জানি, আমার নিজেরও দোষ আছে।

এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকার কোন কারণই আমার নেই, বাসায় আমার সবাইকে সময় দেয়ার কথা। কিন্তু বাসায় ফিরবো কেন? ফিরলেই তো দেখতে হবে বাবা-মায়ের ঝগড়া। আর আমি ওদেরকে কেন সময় দেবো? ওরা কি আমাকে সময় দেয়? বাবা সারাদিন নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, ঘরে ফিরেও কাজ। মা দিনে অফিস করে, আর রাতে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখে। আপু নিজের পড়াশোনা আর ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত।

কারো মাথাব্যথা নেই আমাকে নিয়ে, শুধু আমি একটু বাইরে থাকলেই দোষ। অথচ ঐ ফয়সাল, ওদের বাসায় কত সুন্দর একটা পরিবেশ, গেলেই শান্তি শান্তি লাগে। আন্টি, আঙ্কেল, উনারা কত আদর করেন। আমি বাইরের মানুষ, মনেই হয় না। তাছাড়া উনাদের কত মিল, দেখলেই ভাল লাগে।

আমি যদি তাঁদের ছেলে হতাম তাহলেই ভাল হতো। বাবা-মা আমাকে একটুও আদর করে না, একটুও না। শুধু বকাবকি করে। কোনদিন একসাথে বসে পরিবারের সবাই কখনো গল্প করেছি কীনা, কোথাও বেড়াতে গেছি কীনা, কেউ আমার সাথে একটু ভালোমতো কথা বলেছে কীনা, আমার মনে পড়ে না। তাই আমার বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করে না।

যদি পারতাম, তাহলে বন্ধুদের বাসাতেই সারাদিন থেকে যেতাম। মোট কথা, বাসার বাইরেই আমার ভাল লাগে, ঘরের ভেতরে দম বন্ধ লাগে, মনে হয় কয়েদখানায় আছি। এটা বাসা নয়, জেলখানা। আমি মুক্তি চাই। পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, মরে যেতে ইচ্ছে করে।

আমার একটা খুব বড় অসুখ হয়ে যদি আমি মরে যেতাম, তাহলে কত ভালোই না হতো। " ডায়রি বন্ধ করে সজীব বসে বসে কাঁদছে। ছেলেদের কাঁদতে নেই, সে এটা জানে না। (৩১ জানুয়ারী, ২০১৩) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।