আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আব্বার জন্য এই লেখা

গলাবাজ আর সত্যিকারের লেখক এই ব্লগে টিকে থাকে, আমি কোনটাই না

আমার আব্বাকে নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছাটা কাল সবার লেখা দেখে বেশি করে মনের ভিতর তৈরী হলো। কিন্তু গতকাল একদম সময় করতে পারিনি, তাতে কিছু আসে যায়না, কারন একটা দিনেই শুধু বাবাকে নিয়ে লিখতে হবে এমন তো আর না। আমার আব্বা খুব সময় মেনে চলেন, কোনদিন তাকে নামায কাযা করতে দেখিনি, দেখিনি ঘুম আর খাওয়ার সময় নড়চড় করতে। হয়তো এজন্যই আজ প্রায় ৭৫ বছর বয়সেও তার স্বাস্হ্যে তেমন কোন রোগ বাসা বাঁধতে পারেনি। আমি যখন স্কুলে তখনই আব্বা রিটায়ার্ড এ যান।

তাই তারপর থেকে বলতে গেলে আব্বাকে সবসময় কাছেকাছে পেয়েছি। আব্বার ইংরেজিতে দক্ষতা সত্যিই অসাধারণ, যখনই কোন একটা শব্দ নিয়ে তার কাছে যেতাম, সাথে সাথে তার উত্তর বলে দিতেন আব্বা। গাছে ওঠার ব্যাপারেও আব্বার দক্ষতা ছিলো খুব। আম, ছবেদা গাছে কাছা মেরে উঠে আব্বা ফল পাড়তেন আর আমি তলায় দাড়িয়ে রিসিভ করতাম। আম্মার অভিযোগ আব্বা হলো অকাজের কাজী, অর্থাৎ তিনি ভালো জিনিস নষ্ট করে সেটা আবার মেরামত করেন।

যেমন দেখা গেলো একটা চেয়ার হালকা জং ধরেছে, আব্বা ওটার রঙ পুরোটা তুলে আবার রং করতে বসবেন। তবে আম্মা যাই বলুক না কেন, ঘরের এসব কাজে আব্বার হাত অনেক ভালো, যা আমি অন্তত কিছুই পাইনি। যেকোন মাছ কুটা, সেলাই মেশিনে কিংবা হাতে সেলাই, যেকোন কিছু মেরামত, ইলেকট্রিক কাজ, কাঠের কাজ, বই বাঁধাই আরো কত কি যে উনি পারেন বলে শেষ করা যাবেনা। খুব ভালো লাগতো যখন আব্বার সাথে বাজারে যেতাম, বাজারটা অনেক বড়, তাই খুব বেশি গরম কালে আব্বা আমাকে একটা মিস্টির দোকানে বসিয়ে বাজার সেরে আমাকে নিয়ে বাসায় ফিরতেন। যখন আমি যেতাম না, বাসার গেটে আব্বার রিকশার আওয়াজ শোনা মাত্র দৌড় মেরে যেতাম ভারি ব্যাগগুলো বয়ে আনার জন্য।

আব্বাকে কখনও ভয় পেয়েছি বলে মনে পড়েনা, কারন আব্বা তেমন ভাবে কখনও বকা দেননি। তবে মাঝে মাঝে বেয়াড়া কাজ দেখলে খোঁচা দিতে ছাড়তেন না। আমি সকালে দেরী করে উঠলে আব্বা বেশ বিরক্ত হতেন, আর খুব বিরক্ত হতেন খাওয়ার পর গোসলে ঢুকতে দেখলে। আব্বা আমাকে শিখিয়েছেন একা বাসে চড়ে স্কুলে যাওয়া, ব্যাংকে যেয়ে বিল দিয়ে আসা, সাইকেলে করে বাজার করে নিয়ে আসা। আম্মা এই কাজগুলো আমাকে করতে দিতে খুব ভয় পেতেন, ভাবতেন এতটুকুন একটা ছেলে কিভাবে করবে।

কিন্তু আব্বা আমাকে নিজে করতে শিখিয়েছেন সবকিছু। আমি যখন মার পেটে সেই সময়েরও আগ থেকে মার ডায়বেটিস। সাথে প্রেসার হার্টের সমস্যা, তাই অনেক সময়ই মা সময়মতো সকালে উঠে নাস্তা বানাতে পারতোনা। আব্বা কতোদিন কি মজার নাস্তা বানিয়ে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে দিতেন। একবার মা গলব্লাডারে অপারেশনের জন্য অনেক দিন ঢাকায় থাকলেন, আব্বা নিজে হাতে সব রান্না বান্না করতেন, কাজের লোকের উপর ভরসা করে থাকা তার একদম পছন্দ না।

একটু অসুস্হ হয়ে পড়লে তাকে কোন সেবা করতে গেলে পারত পক্ষে তিনি কোনদিনই তা নিতে চাননা। খুব বেশি হলে বলবেন, এক গ্লাস পানি দিতে পারবে? যখন আমার যতটুকু টাকার দরকার হতো আব্বার কাছে যেয়ে বলতাম, আব্বা সাথে সাথে দিয়ে দিতেন, একটু বেশি এমাউন্ট হলে হয়তো জানতে চাইতেন কি জন্য। তবে কখনও অবিশ্বাসের চোখে দেখেননি বা দিতে দেরি করেননি। প্রথম চাকরি পেয়ে আব্বার জন্য পান্জাবি নিয়ে গেলাম, তারপর ও আব্বাকে বললাম, আপনার আর কিছু লাগবে? আব্বা বললেন উনি সু কিনবেন। বাটার দোকানে গেলাম, আব্বা নিজে পছন্দ করে একটা সু কিনলেন।

জানিনা কার সুখ বেশি হলো, তার না আমার। কোরিয়া আসার পর মাঝে মাঝেই আব্বার সাথে ফোনে কথা হয়। এখনও তার মানসিক দৃঢ়তা আমাকে শক্তি যোগায়। উনার মনের ইচ্ছাগুলো উনি যেন পুরন করতে পারেন সেই দোয়া করি। আব্বা, বাবা দিবসে আপনার জন্য অনেক অনেক সালাম, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।

সেই সাথে সালাম সকল বাবাকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।