আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার আব্বার অন্তিম সময়টা



আমার আব্বার অন্তিম সময়টা (৩ জুন ১৯৩৯- ২৩ জুলাই ২০১৩) (রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানিস ছাগিরা) ২৩ জুলাই ২০১৩। তখন আকাশে সূর্যটা প্রায় অস্তমিত হয় হয় । কিছুটা আলো ছড়াচ্ছে । হালকা আবিরে প্রকৃতি খানিকটা রক্তাভ । সারাটা দিন আমি হাসপাতালে আব্বার পাশে ।

আব্বার পেটে পানি (এসাইটিস) বেড়ে যাওয়ায় আব্বার কষ্ট হচ্ছে ,সে কষ্ট আমি যেন মর্মে মর্মে টের পাচ্ছি । গতকাল আব্বার পেট থেকে ২ লিঃ পানি বের করার পরও আজ আবার জমে গেছে । তাই আমি একবার মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট একবার ডাক্তার করছি । একজন অঙ্কোলজিস্ট পেলাম সে আশাব্যাঞ্জক কিছু না বলে বললো কাল পানি বের করে দেবে । আশায় থাকলাম ।

ডাক্তার অবস্থাটা মেনে নিতে বললেন । - কোন সন্তান বাবার কষ্টের অবস্থাটা মেনে নিতে পারে ? আমিও পারিনা । আব্বার থেকে লুকিয়ে থাকি, একটু দূরে দূরে থাকছিলাম । দুপুরে আব্বাকে বসিয়ে আমি আর আমার ভাবি ৩/৪ চামচ স্যুপ খাওয়ালাম। তখনো জানতাম না এই তার শেষ খাওয়া ।

গত ৩ তিন ধরে আব্বা আমাদের সাথে তেমন কথা-টথা বলেননি, শুধু একটাই জিকির করেছেন- -''লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ '' পরে বুঝেছিলাম যে, কোন একটা ইশারা তিনি পেয়েছেন । দুপুর নাগাদ নিশসাসে কষ্ট হওয়া শুরু হলে ওয়ার্ডের HDU তে নিয়ে অক্সিজেন মাস্ক পরানো হলে একটু বেটার মনে হলেও ICU (HDU-2) তে নেয়া হল । ওখানে ফের অক্সিজেন মাস্ক , মনিটর,স্যালাইন লাগানো হল । তখনো আব্বার নিশসাসে কষ্ট হচ্ছিল । ICU র ওরা বল্লো ঠিক হয়ে যাবে ।

আব্বা বিড়বিড় করে জিকির করে চলেছেন ,আমরা তাকিয়ে আছি তার দিকে --সময় যেন থমকে আছে । আব্বার মুখটা ডান দিকে (পশ্চিম)ফেরানো । বোঝা যাচ্ছে নিশসাস নেয়াটা সহজ হচ্ছেনা । হটাৎ আব্বার ব্লাড প্রেশার দ্রুত কমতে থাকলো । মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট বললো -লা ইলাহা পড়েন ।

আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়!! আব্বা তখনো মুখ নাড়ছেন ,-লা ইলাহা পড়ছেন যা তিনি গত ৭২ ঘ ন্টা ধরে এক নাগাড়ে করে চলেছেন । মূহুর্তেই আব্বার ৭৩/৭৪ বছর ধরে বয়ে চলা নিশসাস বন্ধ হয়ে গেল । (ইন্না লিল্লাহি- - - রাজেউন )। আমি স্থানুর মত দাঁড়িয়ে রইলাম । যেন পায়ে আমার আশি মন পাথর বাঁধা ।

আমি মুক আর বধির হয়ে গেলাম । পুরো ব্যাপারটা আচানক ঘটে গেল । মা ডুকরে উঠল। ভাবি কেঁদে উঠল । আমার মধ্যে কান্নার বন্যা বয়ে গেল ।

বিশসাসই করতে পারছিলাম না যে আব্বা আর নেই, তিনি খুব সাভাবিকভাবেই চলে গেলেন । আমি অসহায়ের মত আশা নিয়ে লাগানো যন্ত্রপাতির দিকে তাকিয়ে আছি । মনে হচ্ছিল আব্বার নিশসাস আবার চালু হবে । আব্বার গা তখনো গরম ! সবখানেই জীবনের ছাপ অথচ আব্বাই নেই । এভাবেই আমার আব্বা আমাদের চি র দিনের ম ত ছেড়ে চলে গেলেন ।

এভাবেই আব্বাকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেললাম ! মাত্র ৪ মাসের মধ্যে লিভার সিরোসিস ধরা পড়লে,সেখান থেকে লিভার ক্যান্সার । গত ৪ মাসে আমাদের শত প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়ল। শেষ হয়ে গেল তাকে বাঁচানোর যুদ্ধ !আমরা হেরে গেলাম । এটাই সাভাবিক কারন মহান আল্লাহ তায়ালা যা নির্ধারন করে রেখেছেন তা ঘটবেই । পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের আগে যখন আল্লাহ সকল দোয়া কবুল করে থাকেন তখন আব্বা কালেমা পড়তে পড়তে আল্লাহর কাছে চলে গেলেন ।

এরপর সারা সময়টা আব্বার সাথে । আব্বার শেষ গোসল, তাঁর হজ্জের ইহরামের কাপড় দিয়ে কাফন পরানো ,ঢাকা থেকে এক গাড়িতে গ্রামে যাওয়া,জানাজা এবং সবশেষে আমরা ৩ ভাই মিলে আব্বাকে পরম মমতায় গ্রামে আব্বার পরিচিত মাটিতে (কবরে) শুইয়ে দিলাম অশ্রুজলে । যেন ঘুমন্ত একটা মানুষকে আলতো করে শুইয়ে দেয়া । তারপর শুধু চোখ ঝাপসা স্মৃতি -- - - -- তারপর শুধু অসীম কষ্ট,দুঃখ, শূন্যতা -- ---- -- -- - তারপর শুধু পিতার জন্য পুত্রের আজীবন হাহাকার- - - - - ''আব্বা ,মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনাকে জান্নাতবাসী করুন ,আমিন । ''


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।