আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২০১৫ সালের বাংলাদেশ- জ্বালানী সংকট এবং উত্তোরণের নানাবিধ পন্থা।



প্রকৃতির বিরুদ্ধতা করে নয় বরং প্রকৃতির সহযোগিতায় জীবনযাপন অনেক বেশী পরিবেশবাদী অবস্থান হতে পারে। প্রকৃতির উপরে খবরদারি করে আমরা পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলেছি। প্রতিটা প্রাক্বতিক উপাদান পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত, পরিবেশ বৈচিত্রে সব প্রাণী এবং উদ্ভিদের এই পারস্পরিক সম্পর্ক পৃথিবীকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় রাখে। হঠাৎ করেই ৪০০ বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৫০০ গুন বেড়ে যাওয়ায় প্রকৃতির উপরে তেমন প্রভাব পড়তো না যদি আমরা প্রকৃতির সহযোগিতায় জীবনযাপন করতে পারতাম। তবে আমরা প্রকৃতির অকৃতজ্ঞ সন্তান।

আমরা গাছ কাটছি, বন উজার করে বসতি বানাচ্ছি, আমরা প্রকৃতিকে অতিব্যবহারে জীর্ণ করে ফেলেছি। আমাদের অতিরিক্ত খনিজ জ্বালানী ব্যবহারের বিরুপ প্রভাবটা পড়ছে এ জন্যই। পূর্বে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস গাছেরা শোষণ করতো, এখন পর্যাপ্ত গাছ নেই। সুতরাং উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব বাড়ছে বাতাসে। প্রকৃতির প্রতিশোধ নেওয়ার পন্থাটা অন্য রকম, দীর্ঘ মেয়াদে সে হয়তো নিজেকে অভিযোজিত করে নিবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে।

তবে এর আগে সে মরণছোবল দিবে। খনিজ জ্বালানী ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদন কিংবা কল কারখানার জ্বালানী হিসেবে এই খনিজ তেল এবং গ্যাসকে ব্যবহার করে পৃথিবীতে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব বাড়িয়ে এখন উত্তপ্ত পৃথিবীতে বসবাস করছি আমরা। আমরা আরও দীর্ঘস্থায়ী এবং আরও টেকসই কৃত্রিম যৌগ তৈরি করেছি, এই কৃত্রিম যৌগ কোনোভাবেই প্রকৃতি আত্মস্থ করতে পারছে না। পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যাই হোক পুণনবায়ন যোগ্য শক্তির উৎস সন্ধানে ব্যতিব্যস্ত গবেষকেরা পুনরায় প্রকৃতির সহযোগিতায় বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্পের দিকে অধিকতর ঝুঁকছেন ।

পুননবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে আমরা এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদানকে নির্দিষ্ট করতে পারি যাদের ক্ষয় নেই কিংবা যারা অনিঃশেষ। বাতাসের শক্তিকে ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প শুরু হয়েছিলো আজ থেকে প্রায় ১২৫ বছর আগে। উইন্ড মিল ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদনের কাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে। এখন অতি সহজের বাসার ছাদে উইন্ডমিল বসানো যায়, খুব একটা সাশ্রয়ী হয়তো না প্রাথমিক পর্যায়ে তবে একবার স্থাপন করে ফেললে আগামী ৫০ বছর কোনো বিদ্যুত বিল দেওয়ার ঝামেলা নেই। অন্য একটা বিকল্প হচ্ছে সৌর শক্তিকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করা।

সোলার প্যানেলও তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে নি কারণ এটা স্থাপনের খরচ। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে কয়েকটি স্থানে পরীক্ষামূলক ভাবে সৌরবিদ্যুত ব্যবহারের প্রচেষ্টা চলছে। বায়ুচালিত জেনারেটর কিংবা সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্পের সবচেয়ে বড় বাধা এটা দিয়ে খুব বেশী বিদ্যুত উৎপাদন করা যায় না। হয়তো একটা গ্রামের জন্য এটা যথেষ্ট তবে এটা দিয়ে একটা শহরের সম্পূর্ণ বিদ্যুত চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না। এর জন্য বিকল্প পুনঃনবায়নযোগ্য শক্তি রয়েছে।

জোয়ারের শক্তিকে ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদন করা যায়। অনেকটা পানিবিদ্যুত প্রকল্পের আদলেই এটা গড়ে তোলা যায়। পানিবিদ্যুত উৎপাদনের প্রক্রিয়াটা সহজ তবে খনিজ জ্বালানী ব্যবহার করে নির্মিত বড় মাপের বিদ্যুত কেন্দ্রের সাথে পানিবিদ্যুত প্রকল্পের পার্থক্য হলো, পানিবিদ্যুত প্রকল্পের জন্য প্রচুর বড় মাপের অবকাঠামো প্রয়োজন। জলপ্রবাহ কিংবা নদীর বুকে বাঁধ দিয়ে পানি সঞ্চয় করে সঞ্চিত পানির স্থিতিশক্তিকে ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদন প্রক্রিয়াটাই সহজ ভাবে পানিবিদ্যুত প্রকল্প। তবে বাঁধ দেওয়ার অর্থ কোথাও না কোথাও এই পানিকে সঞ্চয় করতে হবে।

প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪২ ০০০ কিউবিক ফুট পানি প্রবাহিত হয় মাঝারি মাপের একটা নদী দিয়ে। কোনোভাবে যদি আমি এই প্রবাহকে কয়েক ঘন্টার জন্য স্থগিত রাখি তবে যে পরিমান পানি জমা হবে সেগুলোকে ধারণ করার জন্য একটা বড় মাপের জলসঞ্চয় ব্যবস্থা প্রয়োজন। কাপ্তাই জলবিদ্যুত প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য বেশ চমৎকার নিশ্চিত ব্যবস্থা। তবে এই কাপ্তাই লেকের জলে ভেসে গেছে আদিবাসী মানুষের বসতি। এই ক্ষতিকে মেনে নিলে জলবিদ্যুত প্রকল্প খুব চমৎকার একটা বিষয়।

তবে বড় মাপের ব্যবস্থা নয় বরং গেরোস্থালী ব্যবহারের জন্য ছোটো ছোটো পানিবিদ্যুত প্রকল্প জনপ্রিয় হয়েছে চীনে। প্রতিটার উৎপাদন ক্ষমতা ১০০ কিলোওয়াটের কম। স্থাপনার জন্য তেমন বড় মাপের স্থানের প্রয়োজন নেই। বর্তমানে যে পরিমান পানিবিদ্যুত উৎপাদিত হয় তার অর্ধেকের বেশী এই ছোটো ছোটো পানিবিদ্যুত প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। আমাদের জন্য এই পদ্ধতি তেমন ফলপ্রসু হবে না।

আমাদের নদীগুলোর মৃত্যু হচ্ছে। আমরা আমাদের নদীতে এই ধরনের কোনো জলবিদ্যুত উৎপাদনের অবকাঠামো নির্মান করতে পারবো না। আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প সিলেটের টিলায় স্থাপনের একটা ছোটো সুবিধা আছে। মূলত কয়লা কিংবা খনিজজ্বালানী নির্ভর যেসব বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প আছে তার বেশীর ভাগই পানির বাস্পশক্তিকে টারবাইন ঘোরানের কাজে ব্যবহার করে। আমরা এই প্রক্রিয়ার শেষ উপজাত হিসেবে পাই সেই পুরোনো পানি।

এই পানিকে যদি আমরা টিলার উপরে কোনো জলাধারে সংরক্ষণ করতে পারি তাহলে এই সঞ্চিত পানি দিয়ে আমরা হয়তো পানিবিদ্যুত উৎপাদন করতে পারবো। এটা নেহায়েত একটা হঠাৎ মনে হওয়া পরিকল্পনা। এটার বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভব কি না, এটা এখনও নিশ্চিত না। পারমাণিক শক্তিকে ব্যবহার করেও বিদ্যুত উৎপাদন করা যায়। পারমাণবিক শক্তিকে ব্যবহারের জন্য যেটুকু নিরাপত্তা গ্রহন করতে হবে সেটা আমরা গ্রহন করতে পারবো কি? যদিও অনেকের ধারণা পারমাণবিক প্রক্রিয়ায় বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প ব্যতীত বাংলাদেশের বিদ্যুত সমস্যা নিরসনের অন্য কোনো পন্থা নেই।

তবে স্বাধীনতার পর পর বাংলাদেশে নানাবিধ উন্নয়ন পরিকল্পনা যাচাই বাছাই করা হয়েছিলো। তারই একটা উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা সমূদ্র উপকূলকে বাঁধ দিয়ে নিরাপদ করা। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের সম্পূর্ণটাকেই বাঁধ দিয়ে ঢেকে দিবে, টেকনাফ থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত বিশাল উপকূল অঞ্চল জুড়ে বাধ নির্মিত হবে। বঙ্গোপসাগরের ঢাল তেমন খাড়া নয়, বরং এটা খুব ধীরে ধীরে গভীর হয়েছে। খুব সহজেই এখানে বাঁধ নির্মান করা সম্ভব হতো।

পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে হয়তো বাংলাদেশের ভৌগলিক আয়তন বাড়ানো সম্ভব হতো। ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতির আশংকাও কমতো। জলোচ্ছাসকে ঠেকিয়ে রাখবার পরিকল্পনা এবং জলোচ্ছাসের ফলে অভ্যন্তরে ঢুকে পড়া পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থাও ছিলো এখানে। তবে এসবের সাথে একটা উন্নত মানের পরিকল্পনা ছিলো, এই প্রকল্পের সীমানা ঘেঁষে জোয়ারের শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প থাকবে। বাংলাদেশের উপকূলের সীমানা কম করে হলেও ১২০০ কিলোমিটার।

যদি আমরা ঠিক ভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে পারতাম তবে সেটা দিয়ে সম্ভবত আমাদের ভৌগলিক আয়তন বাড়তো অন্তত ৫০০০০ বর্গ কিলোমিটার, যা বাংলাদেশের বর্তমান ভৌগলিক আয়তনের এক তৃতীয়াংশ। উৎপন্ন বিদ্যুতে আমাদের বিদ্যুতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা আসতো। এবং এর সাথে উপরি পাওনা হিসেবে আমরা ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানীর পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারতাম। পরিকল্পনা যাচাই বাছাই হয়ে চুড়ান্ত পর্যায়ে আসবার পরে ১৯৮২ সালের কোনো একসময়ে পরিত্যাক্ত হয়। কেনো এই পরিক্লপনা পরিত্যাক্ত হলো এই বিষয়ে কোনো বক্তব্য আছে কি না পানিউন্নয়ন বোর্ড ও বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের।

এটা আমার জানতে ইচ্ছা করে তথ্যটা জানবার পর থেকেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.