আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২০১৫ সালের বাংলাদেশ- জ্বালানী সংকট ১



বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বিভিন্ন আকশচারী যানের সাম্ভাব্য উৎপাদন এখন আর বাস্তব মনে হয় না। জ্বালানী সাশ্রয়ী যানবাহন তৈরির দিকে ঝুঁকছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্বজুড়ে জ্বালানী তেলের সংকটের ছাপ পড়ছে সার্বিক দ্রব্যমূল্যে, এবং এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো পন্থা আপাতত জানা নেই। প্রতিটি দেশই বিকল্প জ্বালানীর সন্ধান করছে। এ বিষয়ে গবেষণায় ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ হয়তো আমাদের মতো দবিদ্র দেশের বাজেটের কয়েক গুন।

আমাদের জ্বালানী নিরাপত্তার বিষয়ে সেমিনার হলেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গবেষণার কোনো উদ্যোগ নেই। অবশ্য আমাদের বিদেশ থেকে প্রযুক্তিবিদ, বিশেষজ্ঞ এবং প্রযুক্তি ধার করে আনবার প্রবণতা প্রবল। আমরা নিজেদের দেশে স্বদেশী কোনো প্রযুক্তির উদ্ভাবন করতে নারাজ। শিল্পোদ্যোগ সীমিত নির্মান শিল্পের সহকারী সিমেন্ট আর রড তৈরিতে। এবং এর বাইরে বেশীর ভাগ শিল্পই খাদ্য প্রস্তুতকরণ শিল্প।

খাদ্য প্রস্তুতকরণ শিল্প নিন্দনীয় এমন নয় তবে এর বাইরে অনেক ক্ষেত্রই আছে যে ক্ষেত্রে বিনিয়োগ উৎসাহিত করবার প্রয়োজন ছিলো। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে প্রতিদিন জ্যামিতিক হারে তবে আমাদের দেশে চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ছে না, বাড়ছে লোড শেডিংয়ের পরিমাণ। রাষ্ট্রের একাংশকে অন্ধকারে রেখে অন্য অংশকে আলোকিত করে রাখা এই নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পড়েছে উৎপাদনমুখী শিল্পগুলোও। তৈরি পোশাক শিল্প অন্যতম একটা বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের খাত হলেও এখানে যেসব ছোটো ছোটো প্রতিষ্ঠান ছিলো তারা বিদ্যুতের অভাবে পথে বসেছে। আমাদের প্রযুক্তি যেসব দেশ থেকে ধার করে কিংবা কিনে নিয়ে আসা হয় সেসব দেশে বিদ্যুত সমস্যা নেই বললেই চলে।

বরং উদ্বৃত্ত বিদ্যুত অপচয় কমাতে তারা মোট উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার না করেই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থা চালু রেখেছে। আমাদের অনেক রকম সমস্যা রয়েছে, জনসংখ্যা সমস্যাই শুধু নয়, আমাদের ক্ষুদ্রায়তন রাষ্ট্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ কৃষিজমি নেই, আমরা হঠাৎ করেই বায়োফুয়েল উৎপাদনের কাজে নিজেদের জমি ব্যবহার করতে পারবো না। পেটের ভাতের নিশ্চয়তা না পেলে গাড়ীর জ্বালানীর জন্য বায়োফুয়েল উৎপাদন কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য কাজ হতেও পারে না। মূলত এইসব সমস্যা নিয়ে এক বৈঠকে কিছু লিখে শেষ করা সম্ভব না। কয়েক ধাপে লিখতে হবে।

অনেক রকম আশংকা, ভবিষ্যত পৃথিবীর সাম্ভাব্য যানবাহন নিয়ে ভাবনা, বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ানো নিশ্চিত করতে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায়, আমাদের প্রযুক্তিতে বিদেশ নির্ভরতা কমানোর জন্য কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায়, অনেক বিষয়েই আলোচনা হতে পারে। মূলত আমি নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাইছি জ্বালানী সংক্রান্ত আলোচনায়। গাড়ীর ইঞ্জিনকে সচল রাখা নয় বরং বিশ্বজুড়ে জ্বালানী তেলের সর্বোচ্চ ব্যবহার বিদ্যুত উৎপাদনে। আমাদের দেশে যেমন সিএনজি চালিত যানবাহন এবং খনিজতেল চালিত যানবাহনকে সিএনজিতে রুপান্তরিত করবার হুজুগ শুরু হয়েছে সেটা দেখে মাঝে মাঝেই প্রশ্ন জাগে তবে কি বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী গ্যাস ব্যবহৃত হয় গাড়ীর জ্বালানী হিসেবে? এখানেও উত্তর নাবোধক, বিদ্যুত উৎপাদন খাতে বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্যাস ব্যয় হয়, এর পরে রয়েছে সার উৎপাদনে। এবং বিভিন্ন কারখানায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত গ্যাসের পরিমাণ এবং গেরোস্থালী কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের পরিমাণের পরে আসবে যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাসের পরিমাণ।

আমাদের দৈনিক উৎপাদনের অধিকাংশ গ্যাসই মূলত জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয় কল কারখানায়। এবং তার একটা বৃহৎ অংশ ব্যবহৃত হয় আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা পুরণের জন্য। বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত যা মজুত আছে তাতে দেশের সবার চাহিদা পুরণ করলে সেটা ২০১৫ সালের আগেই শেষ হয়ে যাবে। যদি না ইতিমধ্য শেখ হাসিনার কামনা পুরণ করতে পরিত্যাক্ত গ্যাসক্ষেত্রগুলো গ্যাসে ভরে উঠে ২০১৫ সালের পরে বাংলাবান্ধা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সিএনজি চালিত গাড়ীর লাইন লেগে যাবে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে। মানুষের উন্মাদনা রদ করা যাবে না।

১০০ টাকার গ্যাস ভরলে যাওয়া যায় ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার, সেখানে ১০০ টাকার তেল ব্যবহার করলে যাওয়া যায় খুব বেশী জ্বালানীসাশ্রয়ী গাড়ী ব্যবহার করেও ২০ কিলোমিটার। এই গুন জ্বালানী খরচ সাশ্রয়ের জন্য গ্যাসচালিত ইঞ্জিনে কনভার্ট করবার হার বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে ২০১৫ সালের পরে আমাদের কি হবে এটা ভেবে আতঙ্কিত হই। খনিজ তেলের উৎপাদন বাড়বে না, আরব উপদ্বীপের সঞ্চিত তেলের মজুতও শেষ হয়ে যাবে ২০৫০ সালের ভেতরে, যদি তারা বর্তমানের হারে উৎপাদন করে। এই মুহূর্তে তেল গ্যাস কোম্পানিগুলো পাগলের মতো গ্যাস এবং তেলক্ষেত্র খুঁজছে, প্রয়োজনে গৃহযুদ্ধ হত্যা এবং নানাবিধ অপকর্ম করেই যাচ্ছে।

সংঘাতময় একটা ভবিষ্যতের দিকে আমরা যাচ্ছি প্রতিদিন। যদি আমাদের অনুমাণ সঠিক হয়, অতি প্রাচীন সবুজ পৃথিবীতে গাছ মাটির তলে চাপা পড়ে যে তেল, গ্যাস, এবং কয়লা সৃষ্টি হয়েছিলো সেটার মজুত শেষ হতে হতে আরও ১০০ বছর। তবে জ্বালানী ব্যবহারের বর্তমান ধারা অব্যহত থাকলে সেটা শেষ হতে হয়তো ১ শতাব্দী অপেক্ষা করতে হবে না। বাংলাদেশের জন্য আশংকার কথা হচ্ছে বাংলাদেশে যদি অতি দ্রুত কোনো গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া না যায় তবে মধ্যম আয়ের দেশ নয় বরং অনাহার এবং অপুষ্টিতে মৃত্যুর সর্বোচ্ছ হারের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে চিনবে পৃথিবী। বর্তমানের বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত বিরোধিতার ধারাটা ক্রমশ ক্ষীণ হবে, বাংলাদেশ তার ১৫ কোটি মানুষ এবং সীমিত সম্পদ নিয়ে এমন এক দায় যদি স্বেচ্ছায় সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে এটা ভারতের করদ রাজ্য হতে চায় ভারত নেবে না।

আমাদের বর্তমানা বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্পগুলো দেখে আরও আশ্চর্য হলাম, এগুলোর প্রায় সবগুলোই গ্যাসভিত্তিক স্থাপনা। সুতরাং গ্যাসের প্রাপ্তি কমে গেলে এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হবে না। বিদ্যুত সংকটের কারণে হয়তো অতিরিকক্ত পূঁজি নিয়ে সচল হওয়া দেশীয় গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিকগুলো টিকে যাবে কিন্তু অন্য সব ক্ষুদ্র কারখানাগুলো বিলীন হয়ে যাবে। কয়লা ব্যবহার করে হয়তো আরও কিছু দিন উৎপাদন টিকিয়ে রাখা যাবে, তবে এ জন্য আমাদের বিদ্যূত উৎপাদন কেন্দ্রুগুলোর নির্মানকৌশলে দ্বৈত ব্যবস্থা রাখবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যখন গ্যাসের সংকট তীব্র হবে তখন কয়লা ব্যবহার করে আমাদের বিদ্যূত উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রাখার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যই এটা করতে হবে।

কিংবা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। আমাদের খনিজ সম্পদ সীমিত ,এর অতিরিক্ত অপচয় না করে সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে যেনো আমরা আমাদের সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারি। বিদ্যুত উৎপাদন ব্যবস্থার খুটিনাটি আলোচনা করা সম্ভব হবে না তবে কিছুটা আলোচনা করাই যায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানীর ব্যবহার এবং কি ভাবে এটার সর্বোচ্চ সুফল লাভ করা যায় এই বিষয়ে। সেসব পরবর্তী সময়ের জন্য তোলা থাক। আপাতত একটু চিন্তিত হয়েই ঘুমাতে যাই, ২০১৫ সালের পরে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়াব্যপী সিএনজিচালিত যানবাহনের জ্যামের ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে থাকুক জনগণ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.