আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গভীর রাতে কয়েক কিশোরের অ্যাডভেঞ্চার

মধ্যবয়সী এক মানুষ সময় পেলেই খুঁজে ফেরে তার সোনালী অতীত

[প্রথম পাতায় আসার সুযোগ মিললো। এই পোস্টটি গত দুদিন আমার ব্লগে ছিল। কয়েকজন ব্লগার সেটা পড়েছেনও। প্রথম পাতায় এটি আবার পোস্ট দেওয়ায় তারা বিরক্ত হতে পারেন ভেবে ক্ষমা চেয়ে ঝুঁকি নিতে হয়েছে। ] তখন ছিল গভীর রাত।

শীতকালে রাত ১২টা মানেই অনেক। পেছনে পাহাড় আর সামনে বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে সবুজের এক সমতলে ইট-কাঠ মাঝে নিয়ে গাছগাছালির ১৮৫ একরের বিশাল ক্যাম্পাসে সবাই ঘুমিয়ে। নাইটগার্ড কয়েকজন লাঠি নিয়ে ক্যাম্পাস পাহারা দিচ্ছে। আর একটু পরপর হুইসেল বাঁজিয়ে তাদের চলছে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ। সময়টা ১৯৮০ সাল।

এমন সময় ডাইনিং হলের পেছনে একে একে এসে জড়ো হলো আট-দশজন কিশোর। সবার বয়স ১৭-১৮ হবে। ডাইনিং হল থেকে ভাত রান্নার বড় হাড়িটি যোগাড় হয়েছে। হাতে হাত লাগিয়ে লাকড়ির স্তুপও তৈরি হয়ে গেল। এরই মধ্যে আরো কয়েক কিশোর গোটা দশেক খেজুরের রসে ভর্তি কলস নিয়ে হাজির হলো সেখানে।

গাছ থেকে মাত্রই সেগুলো নামিয়ে আনা হয়েছে। চুলা জ্বালিয়ে গনগনে আগুনে ভাতের হাড়িটি বসিয়ে তাতে মহা উৎসাহে গোটা ছয়েক কলসির রস ঢাললো কিশোররা। কদিন ধরেই তাদের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা। দীর্ঘ আলোচনার পর ঠিক হয়েছে প্রতিদিন চুরি করে খেজুরের রস খেতে আর ভালো লাগছে না। ক্যাম্পাসের ডাব-নারিকেল খেতে খেতে মুখের স্বাদও নষ্ট হয়ে গেছে! এবার নতুন কিছু করা যাক! হ্যা, ক্ষীর রাধলে কেমন হয়? প্রস্তাবটা খারাপ লাগে না কারো।

সবাই সমর্থন করে। রাতে রস আর ডাব চুরির একটা বড় গ্রুপ গড়ে ওঠেছে ২১ তম ব্যাচের এই কিশোরদের মধ্যে ইতিমধ্যে। কিন্তু ক্ষীর রাধতে তো প্রচুর আয়োজন। পোলাওর চাল লাগবে। দুধ লাগবে।

রান্না করতে হাড়ি-পাতিল, চুলা-লাকড়ি তাও লাগবে। ডাইনিংয়ের বয়-বেয়ারাদের সঙ্গে গত পাঁচ বছরে বেশ সখ্যতা গড়ে ওঠেছে তাদের। তাই রান্নার সরঞ্জাম যোগাড় করা কঠিন না। চাঁদা তুলে ক্যাম্পাসের পাশের বাজার থেকে একটিন গুড়োদুধ ডানো, পোলাওর চাল এরই মধ্যে কিনে আনা হয়েছে। রাত বাড়ছে কিন্তু কিশোরদের উৎসাহে কোনো কমতি নেই।

চুলার আগুন তাদের শীতের কামড় থেকে রক্ষা করছে। মশাগুলো যন্ত্রণা দিচ্ছে হয়তো, তাতে কি? বেশ ধৈর্য্যের একটা পরীক্ষা চলছে এখানে! বাকি কলসগুলো থেকে রস ঢেলে গলাও ভেজাচ্ছে এরা। এই বয়সে অ্যাডভেঞ্চার (নাকি বাঁদরামি) কম হয়নি। কিন্তু আজকেরটার যেন তুলনা চলে না। আগুনের তাপে হাড়ির রস কিছুটা ধরে এসেছে।

তাতেই পোলাওর চাল আর আগেই গোলানো দুধ ঢেলে দিয়ে নাড়াচাড়া চলছে। একটু ভুল হয়ে গেছে, বাজার থেকে গরম মশলাও আনা হয়েছিল। হাড়িতে ঢালা হলো সেগুলোও। কিশোরদের দেখে মনে হচ্ছিল এক একজন যেন অভিজ্ঞ বাবুর্চি। এখনকার সিদ্দিকা কবীর কিম্বা টমি মিয়াও এমন আয়োজনে রান্না করতে পারবেন কিনা সন্দেহ! তার ওপর যদি থাকে যে কোনো সময় শিক্ষকদের হাতে ধরা পড়ার ভয়! কিন্তু রান্নাতো আর শেষ হয়না! এদিকে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।

পরের দিন রোববার। ছুটি। ভরসা এটাই। এরা সব ক্লাস টুয়েলভের ছাত্র। ক্যাডেট কলেজের হিসাবে সিনিয়র মোস্ট।

পরদিন ব্রেকফাস্টে না গেলেও কেউ জিজ্ঞেস করবে না। একসময় শেষ হলো রান্না। খেজুরের রসে তৈরি ক্ষীর প্রস্তুত। কিশোরদের আর তর সইছে না। ঝাপিয়ে পড়লো সবাই।

প্লেটে প্লেটে নিয়ে গরম গরম ক্ষীর খেয়ে কারো মুখ পুড়লো, কারো জিহ্বা। তাতে কি? পেট পুরে মহানন্দে খেল সবাই। আহ, আজো আটাশ বছর পর মুখে যেন সেই রাতের ক্ষীরের স্বাদ লেগে আছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।